কুয়েত সরকার প্রবাসী কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং চাকরির পেশা বা পদবী (জব টাইটেল) পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। দেশটির জনশক্তি কর্তৃপক্ষ (PAM) জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তটি শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব প্রবাসী ওয়ার্ক পারমিট বা আকামা নিয়ে কুয়েতে এসেছেন বা অন্য কোনো খাত থেকে বেসরকারি খাতে স্থানান্তরিত হয়েছেন, তারা আপাতত তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা পেশাগত পদবি পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন না-—যদি প্রস্তাবিত পরিবর্তন তাদের মূল কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়।।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনেক সময় দেখা যায় একজন কর্মীর ডিগ্রি বা কাজের ধরন বাস্তব দায়িত্বের সাথে মেলে না। ফলে চাকরির বিভাগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয় এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি দেখা দেয়। এসব রোধ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত জারির দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে। সব শ্রম অফিস, সরকারি বিভাগ এবং নিয়োগকর্তাকে এই নির্দেশ মানার জন্য বলা হয়েছে। এখন থেকে কোনো আবেদনকারী যদি নতুন পদবি বা ডিগ্রি দিয়ে আবেদন করেন, তা যাচাই না করে গ্রহণ করা হবে না।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে—
কোনো প্রবাসী কর্মী যদি তার কাজের পদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন উচ্চতর ডিগ্রি বা পদবি যোগ করতে চান, তাহলে সেই আবেদন গ্রহণ করা হবে না। এটি প্রযোজ্য— যারা নতুনভাবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এসেছেন এবং যারা অন্য খাত (যেমন গৃহকর্ম বা সরকারি খাত) থেকে বেসরকারি খাতে স্থানান্তরিত হয়েছেন। সরকার চায়, কর্মীর আসল যোগ্যতা ও কর্মক্ষেত্রের মধ্যে মিল থাকুক। কোনো ধরনের ভুল তথ্য বা অযৌক্তিক পদবী পরিবর্তন যেন না ঘটে।
মূল উদ্দেশ্য:
জালিয়াতি ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার প্রতিরোধ করা
কাজের যোগ্যতার সাথে মিল রেখে পদবি নির্ধারণ করা
কুয়েতের শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা আনা
একক সরকারি নির্দেশনার ভিত্তিতে সকল নিয়োগ নিশ্চিত করা
কাদের প্রভাবিত করবে?
এই স্থগিতাদেশ প্রবাসী পেশাদারদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে, যারা নতুন শিক্ষাগত যোগ্যতা যোগ করে পদবি উন্নত করতে চাচ্ছিলেন। যেমন, কেউ যদি আপডেট শিক্ষাগত যোগ্যতায় প্রকৌশলী বা হিসাবরক্ষক হতে চান, অথচ তাদের ওয়ার্ক পারমিট ছিল দোকান কর্মচারীর নামে—তাহলে সেই পরিবর্তন আর সহজে অনুমোদন পাবেন না।
আসছে নতুন ‘চাকরি শ্রেণিবিন্যাস গাইড’
কুয়েত সরকার “জাতীয় ইউনিফাইড জব ক্লাসিফিকেশন গাইড” তৈরি করছে। এতে প্রতিটি চাকরির জন্য কী ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন, কী কী কাজের দায়িত্ব থাকবে—তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। এই গাইড অনুসারে ভবিষ্যতে নিয়োগ, ওয়ার্ক পারমিট এবং চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতে থাকছে: পেশার নাম ও ধরন, শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড, চাকরি ও ভিসা অনুমোদনের শর্তাবলী।
পরামর্শ ও করণীয়:
নিশ্চিত করুন যে শুরু থেকেই কাজের অনুমতিপত্র প্রকৃত কাজের দায়িত্ব এবং যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত নতুন যোগ্যতা বা পদবি পরিবর্তনের জন্য আবেদন না করাই ভালো
জনশক্তি কর্তৃপক্ষ (PAM)-এর নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন
এই উদ্যোগ কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে একটি দায়িত্বশীল ও পেশাভিত্তিক শ্রমবাজার গঠনের অংশ। এতে যেমন জালিয়াতি কমবে, তেমনি কর্মীদের প্রকৃত যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি নিশ্চিত করা যাবে। নিয়োগকর্তা ও প্রবাসী উভয়ের জন্যই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ