করোনাকালে প্রবাসীর বিপদে বন্ধুর পরিচয় দিল ওমানের সালামএয়ার

"আমরা ওমানের এই বন্ধুত্বের কথা চিরকাল লালন করব"

ওমানের একটি জনপ্রিয় ফেসবুক কমিউনিটি পেজ হোয়াট্স হ্যাপেনিং ওমান (ডব্লিউএইচও)। সম্প্রতি এই পেজে জর্ডান রস নামের এক প্রবাসী নারীর পোস্ট বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ওমানে বসবাসরত রসের স্বামী চাকরি হারিয়েছেন গেল এপ্রিলে। তারা দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তাদের পোষা কুকুরের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। এই পোষা কুকুর তাদের কাছে এতটাই আপন যে সেটিকে না নিয়ে তারা বাড়ি ফেরার কথা ভাবতেই পারেন নি। তাই টানা তিন মাস ধরে চেষ্টা করেও পোষা প্রাণী নিয়ে বিমান সংস্থার কেবিন বিধি নিষেধের কারণে মিলেনি সুফল।

রস লিখেছেন, “কুকুরটি আমাদের খুব আপন এবং সাহায্যকারী। এ পোষ্যটি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিকে আক্রান্ত। তাই শুধুমাত্র সে কেবিনে চড়ে উড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে যেটি উদ্ধারকারী ফ্লাইটগুলোতে অনুমোদিত নয়। ”

Travelion – Mobile

“তাই আমরা বাড়ি ফেরার অন্য উপায় খুঁজছিলাম। ধীরে ধীরে আমি আশা হারিয়ে ফেলছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম কখন বিমানবন্দর খুলে দেয়। ঠিক সেসময় আমরা আরেকটি আমেরিকান পরিবারকে খুঁজে পেলাম যারা আমাদের মত অবস্থায় ছিল। তাদেরও একটা সাহায্যকারী কুকুর আছে যে লাগেজের হোল্ডে চড়তে পারে না। তাই আমরা সাহস করে সালাম এয়ারের দারস্থ হয়ে একটা চার্টার ফ্লাইট ব্যবস্থার আবেদন করেছিলাম। তাদের কাছে আমরা এই আশা নিয়ে গিয়েছিলাম যে তারা আমাদের কুকুরদের কেবিনে রাখার অনুমতি দেবে। একবার দোহা পৌছুতে পারলেই সেখান থেকে আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারি,” রস বিস্তারিত বলেন।

রস বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেন, সালামএয়ার আমাদের শর্তসহ চার্টার্ড ফ্লাইট আয়োজনে সম্মত হয়। “কিন্তু এটা বাস্তবে রূপ দিতে হলে আমাদের যথেষ্ট আসন বিক্রি করার দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের ফিরে যাওয়ার আকুতির কাছে এটি তেমন কোন বড় ব্যাপার নয়। আমাদেরকে একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল, তাই টানা কয়েকদিন আমরা এই ফ্লাইটের জন্য আগ্রহীদের খুঁজে বের করার জন্য উঠেপড়ে কাজ করেছি। শেষমেশ আমরা ৭০ জনের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেতে সক্ষম হয়েছিলাম। তাদের নাম আমরা জমা দেয়ার সাথে সাথে চার্টার্ড ফ্লাইটের প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হল। সাথে একটি তারিখ এবং সময়ও নির্ধারণ করা হল” লিখেছেন তিনি।

রস জানান, যখন সিট বুক করার সময় আসে তখন অনেকেরই নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারও প্রস্থানের সময়, কারও কানেকটিং ফ্লাইটের সাথে সময় মেলানো, খরচ ইত্যাদির কারণে অনেকেই তাদের অঙ্গীকার রাখতে পারেনি। “আমরা এতে একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম!” আক্ষেপ নিয়ে লিখেন রস।

যাইহোক, বিস্মিত নিয়ে রস আরো জানান, এই সময় মাজেদ নামের একজন সালামএয়ার কর্মী তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। “মাজেদ আমাদের বলেছে যে এই ফ্লাইটের খরচ কভার করার জন্য আমাদের আরো ২০টি টিকেট ম্যানেজ করতে হবে। ” তিনি বলেন।

এই পরিস্থিতিতে কিছু যাত্রী অতিরিক্ত সিট কেনার প্রস্তাব দেয় বলে জানান রস। তিনি আর তাঁর স্বামী আরও ৫টা সিট কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন সেই সময়। বলেন “এতে আমাদের সব ব্যাংক একাউন্ট খালি হয়ে গেলেও আমাদের এই ফ্লাইটের প্রয়োজন যে কোন কিছুর চেয়ে বেশি ছিল। মাজেদ এটি বুঝতে পেরেছিল তাই সে বলেছে ঠিক আছে, দেখা যাক আমি কি করতে পারি।”

“মাজেদ আমাদের কাতার থেকে একটি এক্সটেনশন পেয়েছে বলে জানায় এবং আমাদের অবশিষ্ট আসন বিক্রি করতে তিনি সাহায্যের হাত বাড়ান, পাশপাশি আমাদেরকেও কিছু টিকেট বিক্রির দায়িত্ব দেয়। পরের ২ দিন মাজেদ দিনরাত আমাদের ফ্লাইটের আসন বিক্রি করতে পরিশ্রম করে। আমি ঠিক বুঝাতে পারছি না যে মাজেদ আমাদের জন্য কতটা পরিশ্রম করেছে,” কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন।

“আমরা সবাই যখন আমাদের সঞ্চয়ের বাকি টাকা খালি করে সালামএয়ারে সিট বুকিংয়ের কথা ভাবছিলাম তখন শেষ মুহূর্তে, মাজেদ আমাদের সুখবর দেয়। জানান অবশিষ্ট আসন তিনি বিক্রি করে পেরেছে। আমাদের সঞ্চয় তিনি জমা রাখতে বলেন এবং তিনি বৃহস্পতিবার আমাদের সবাইকে চেক ইনে দেখা হবে বলে জানান। ”

রস আবেগ আপ্লুত হয়ে লিখেন “মাজেদের কথা শুনে আমি কেবল কাঁদতেই থাকলাম। আমি জানি অন্য যাত্রীরাও এমনটি করেছে। আমরা কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো? সালামএয়ার আর মাজেদ আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়েছে। তারা আমাদের এবং অন্যান্য পরিবারের জন্য তাদের সর্বোচ্চটুকু করেছে।”

“আমি তাদের এই মহানুভবতার প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা সবার মাধ্যমে জানাতে চাই। এই বিমান সংস্থাটি মানুষকে সাহায্য করার জন্য যতটা পরিশ্রম করেছে তা অকল্পনীয়। আমি সালামএয়ার এবং মাজদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব। আমরা ওমানের এই বন্ধুত্ব ও ওমানি আন্তরিকতার কথা চিরকাল লালন করব”-রস লিখেন।

“এই কানাডিয়ান পরিবারের পক্ষ থেকে মাজেদ এবং সালামএয়ারকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা শেষপর্যন্ত বাড়ি যাচ্ছি,” সবশেষে যোগ করেন রস।

হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপন :সমসাময়িক বিষয় রেজিনা আহমেদ, মান্যবর হাইকমিশনার, মরিশাস

২৬ জুলাই, রবিবার -মরিশাস : রাত ৮.৩০ টা, বাংলাদেশ : রাত ১০.৩০ টাআকাশযাত্রার সঙ্গে যুক্ত থাকার আমন্ত্রণ নিচের যে কোন একটি লিংকে :https://www.facebook.com/akashjatrafans https://www.facebook.com/akashjatrabdমরিশাসপ্রবাসীদের যে কােন বিষয়ে জানার থাকলে কমেন্টসে প্রশ্ন দিতে পারেন। অতিথি আলোচকশাহিন সরদার, পরিচালক, বিসিসি ফ্যামিলি স্কুলব্যারিস্টার দিলরুবা নাওশিন আইনজীবী, মরিশাসশাহ আলম খান, ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব, মরিশাসনাজমুল বাসার, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, মরিশাসমোহাম্মদ হাফিজ, কমিউনিটি সংগঠক, মরিশাসজহিরুল মিনা, প্রবাসী ব্যবসায়ী, মরিশাসপরিকল্পনা ও পরিচালনা : এজাজ মাহমুদ. প্রধান সম্পাদক-আকাশযাত্রাসঞ্চলনায় : আহমেদ তোফায়েল, সাংবাদিক ও উপস্থাপকসমন্বয় : মোহাম্মদ হাফিজ, কমিউনিটি সংগঠক, মরিশাস

Posted by AkashJatra on Sunday, July 26, 2020

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!