ওমানের আকাশে দেখা যাবে বিরল সূর্যগ্রহণ
আগামী ২৬ ডিসেম্বর মধ্যপ্রাচের দেশ ওমানের আকাশে দেখা মিলবে বিরল এক সূর্যগ্রহণ, যা শতাধিক বছর আগে দেখা গিয়েছিল। গ্রহণটি এ অঞ্চলে ২ মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও সূর্যগ্রহণ প্রায় ২ ঘন্টা ২৯ মিনিট ধরে চলবে। এর আগে ১৯০১ সালের দিকে ওমানে এমন ঘটনাটি ঘটেছিল।
জ্যোতিষর্বিদদের ভাষায়,“এবারের পূর্ণ সূর্যগ্রহণ প্রকৃতির অন্যতম বিরল ও অত্যন্ত অনন্য একটি ঘটনা হবে। যেখানে চাঁদ আক্ষরিক অর্থে সূর্যের সাথে উপচে পড়বে। এসময় সূর্যকে একটি আংটির মত দেখা যাবে, যাকে ‘আগুনের আংটি’ বলা যেতে পারে।
ওমান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি জানিয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর ভোরবেলায় ওমানের সমস্ত অঞ্চল থেকে মানুষ সূর্যগ্রহণ দেখতে সক্ষম হবে। তবে যারা কর্ন আল আলম, মানাহ, আদম, আল আশকারাহ, মুহুত, আল খাউফান্দের মাসিরাহ দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী অঞ্চলে বাস করেন তারা পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখতে পাবেন এবং ওমানের বাকি অংশের অধিবাসীরা আংশিক গ্রহণ উপভোগ করতে পারবেন।
নাসার গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের তথ্য অনুসারে, এই সূর্যগ্রহণটি সৌদি আরব থেকে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু অংশ পেরিয়ে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬ টায় আংশিক গ্রহণের আকারে ওমানের সীমানায় প্রবেশ করবে। স্থানীয় সময় সকাল ৬ টা ৩৫ মিনিটের দিকে শুরু হবে বলয়াকার গ্রহণটি এবং সকাল ৬ টা ৩৭ এ সর্বাধিক গ্রহণে পৌঁছে যাবে। গ্রহণ শেষ সকাল ৮.৫৩ মিনিটে।
এরপরে সূর্যগ্রহণটি এটি ভারতের দক্ষিণাঞ্চল পেরিয়ে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনের নিম্ন রেখা দিয়ে, প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে শেষ হবে।
খালি চোখে সূর্যগ্রহণ না দেখার জন্য দেশবাসীকে সতর্ক করেছে ওমানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (এমওএইচ)। খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা চোখের ক্ষতি করতে পারে এমনকি অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে,”পর্যবেক্ষকদের এই ইভেন্টটি দেখার জন্য যথাযথ সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করা উচিত এবং শিশুরাও দেখার আগে উপযুক্ত ফিল্টারযুক্ত চশমা দিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত” ।
গ্রহনটি দেখতে আগ্রহী মহাকাশ ও তারার জগতের প্রতি অনুরাগী দলের জন্য একটি দর্শন শিবিরের আয়োজন করেছে ওমান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি । বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) এবং বৃহস্পতিবার, ২৬ ( ডিসেম্বর) শার্কিয়াহ প্রদেশের রস আল রুওয়েসে এই শিবিরটি অনুষ্ঠিত হবে, যা গ্রহণের এই সপ্তাহকে করবে দুর্দান্ত, যার স্মৃতি অংশগ্রহণকারিদের মনে থাকবে আরও বহু সপ্তাহ ধরে।
অন্যদিকে ওমানের পর্যটন মন্ত্রনালয় ও ওমান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি এই সুযোগে কাজে লাগাতে বৈজ্ঞানিক পর্যটনের প্রসারের জন্য সূর্যগ্রহণ-২০১৯ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেশটি ধর্ম মন্ত্রনালয়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, জাতিয় বেতার ও টেলিভিশন, ওমানি সোসাইটি ফর ফটোগ্রাফিসহ নানা সরকারি বেসরকারি সংস্থা সহায়তা করছে।
২৬ ডিসেম্বর সকালে ঘটতে যাওয়া এই বিরল সূর্যগ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তের স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে দেশের জনগণকে তা দেখার সুযোগ করে দেয়াই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি সৌরগ্রহণের কারণ এবং সেগুলি নিরাপদে দেখার জন্য পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ার সাইদ আল বালুশি বলেছেন, “এই কর্মসূচি সুলতানাতে বৈজ্ঞানিক পর্যটনকে উৎসাহ দিবে এবং বিশ্বব্যাপী পর্যটন মানচিত্রে শান্তির দেশ ওমানকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হিসাবে গড়ে তোলার মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় বিশেষ অবদান রাখবে।”
“সূর্যগ্রহণের ঘটনা সম্পর্কিত গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠার জন্য গবেষক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানকে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি সালতানাতের বাসিন্দা ও দর্শনার্থীদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়ার জন্য আমরা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মুখিয়ে আছি”, বালুশি যোগ করেন।
https://www.timeanddate.com/eclipse/solar/2019-december-26
তিনি আরও বলেন,”আমরা নিশ্চিত যে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে এগিয়ে নিতে এবং বৈজ্ঞানিক ভ্রমণকে উত্সাহিত করতে যে প্রচেষ্টা করা হয়েছে তা অপেশাদার এবং বিশেষায়িত জ্যোতির্বিদদের প্রজন্মের গঠনে ভূমিকা রাখবে।”
ওমানি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক আলী আমের আল শেবাণী জানান, এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওমান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের সাথে বিশেষতঃ যে সমস্ত অঞ্চলে সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে, সেখানে পর্যবেক্ষণে অংশ নিবে।