গ্রিসে বরফের তল থেকে উদ্ধার হল বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ

ছয় দিন পর অনেক চেষ্টা করে বুধবার গ্রিসের সীমানায় পাহাড়ী এলাকায় বরফের তল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বাংলাদেশি যুবক এনামুল এহসানের মরদেহ।

বাংলাদেশ দূতাবাসের মানবিক আবেদন সাড়া দিয়ে গ্রিস প্রশাসন সর্বাত্মক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলেকজান্ডার পলি বর্ডার এরিয়া থেকে হেলিকপ্টারযোগে এনামুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং আলেকজান্ডার পলি নামক হসপিটালে হস্তান্তর করে ।

বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর ড. সৈয়দা ফারহানা নূর চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন, এনডিসি গ্রিস প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখে এই উদ্ধার কাজ তদারকি করেন। বর্তমানে পলি হাসপাতালের মর্গে এনামুল মরদেহ রয়েছে এবং দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

Travelion – Mobile

জীবনবাজি রেখে স্বপ্নের ইউরোপে অবৈধপথে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন সিলেটের এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়সল (৩০) । ওমান থেকে তুরস্ক হয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় গ্রিসের সীমানায় প্রবেশ করেই আকস্মিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। জানা গেছে, প্রায় ২ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিলে হয়তো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতেন ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফয়সলের সফরসঙ্গীরা মোবাইলে তোলা মরদেহের ছবি পাঠিয়ে তার পরিবারকে মৃত্যুর সংবাদটি জানায় । ছবিতে দেখা যাচ্ছে– একটি গাছের নিচে বরফ ও গাছের ডালের ওপর মরদেহটি পড়ে রয়েছে। গাছের ডালে কালো রঙের একজোড়া হাত মোজা ঝুলানো রয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মহুদ আহমদ জায়গীরদারের দ্বিতীয় জায়গীরদার ফয়সল । তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

স্থানটি চেনার স্বার্থে গাছের ডালে কালো রঙের একজোড়া হাত মোজা ঝুলিয়ে দেয় সহকর্মীরা
স্থানটি চেনার স্বার্থে গাছের ডালে কালো রঙের একজোড়া হাত মোজা ঝুলিয়ে দেয় সহকর্মীরা

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফয়সল এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও তার লেখাপড়া আর এগোয়নি। স্থানীয় বোয়ালজুড় বাজারে ছোটখাটো একটা ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগে ভিসা নিয়ে ওমান যান। তার বড় ভাই আলীমুল হাসানও সেখানে থাকেন। ওমান থাকাবস্থায় কয়েকবার দেশে আসা-যাওয়া করেছেন।

মাস ছয়েক আগে তিনি ওমান থেকে ইরাক হয়ে তুর্কি যান। সেখানে তিনি ভালোই ছিলেন, নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফোন করে তার জন্য দোয়া করার কথা বললেও গ্রিসে যাওয়ার বিষয়টি জানাননি।

গ্রিসে যাত্রা পথে ফয়সলের সঙ্গী স্থানীয় এক যুবকের বরাত দিয়ে ছোট ভাই রুজেল আহমদ জানান, দালালের প্ররোচণায় ফয়সলসহ কয়েকজন তুর্কি থেকে গ্রিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দালাল তাদের সঙ্গে চুক্তি করে কয়েকবার চেষ্টা করেও গ্রিসে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি ফয়সলসহ কয়েকজন গ্রিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

জঙ্গল এলাকা পাড়ি দিয়ে তুর্কি থেকে গ্রিসের সীমানায় প্রবেশের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ভোরের দিকে গাড়িতে প্রায় আধাঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে একটি নির্জন স্থানে ফয়সলসহ তার সঙ্গে থাকা পাঁচজনকে নামিয়ে দেয়া হয়।

সেখানে অপেক্ষমাণ অবস্থায় গ্রিসের সময় আনুমানিক বেলা ২টার দিকে ফয়সল আকস্মিকভাবে অজ্ঞান হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে কিছু খেতে চান, কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো খাবার বা পানিও ছিল না। এর পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

সঙ্গীরা মুঠোফোনে ফয়সলের মৃতদেহের ছবি এবং ওই স্থানটির ছবি তুলেন। এ সময় দালালের লোকজন সেখানে গিয়ে ফয়সলের মরদেহ ফেলে রেখে তার সঙ্গীদের ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে গ্রিসের ওই দালালের সঙ্গে কেউই যোগাযোগ করতে পারছেন না। ধারণা করা হচ্ছে, ওই স্থানটি চিহ্নিত রাখতে সঙ্গীরা ফয়সলের হাত মোজা গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে গেছেন।

ফয়সলের পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে। ছেলের শোকে তার অসুস্থ বাবা ও মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শেষবারের মতো তারা ছেলের মরদেহটি এক নজর দেখার আকুতি জানিয়েছেন। নির্বাক ভাইবোনসহ বাড়ির লোকজন হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনরা বাড়িতে জড়ো হয়েছেন, তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!