৩০ মে থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে কুয়েতের জনজীবন

পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ৩০ মে থেকে স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে কুয়েত। এরপর থেকে ধীরে ধীরে খুলে যাবে দেশটির সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট আর যানবাহন। দেশটির সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রনালয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে তাদের সব ধরনের সতকর্তামূলক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

আরব টাইমস সূত্রে জানা গেছে, সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে কম সংখ্যাক কর্মী দিয়ে কার্যক্রম চালু করা হবে। গণজমায়েত যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে শ্রমিকদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম বাতিল করা কিংবা শ্রমিকদের উপর নির্ভরতা কমিয়ে ইলেকট্রনিক সেবার উপর জোর দেয়ার মত বিষয়গুলো মাথায় রাখার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। কর্মী ও দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা ও শারীরিক দুরত্ব মেনে চলার উপর আছে কড়া নির্দেশনাও।

বিভিন্ন অফিসের প্রবেশদ্বারে রাখা হবে তাপমাত্রা পরীক্ষার যন্ত্র এবং সেগুলো জীবাণুমুক্ত রাখতে থাকবে নিয়মিত জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা। আরব টাইমস জানিয়েছে, দেশটিতে কাজ শুরু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া এখন আর কয়েক দিনের ব্যাপার মাত্র। এ ব্যাপারে সরকারি সংস্থাগুলোর তাদের রিপোর্ট দিলে সেগুলোর উপর নির্ভর করে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যবস্থা করা হবে যেখানে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার উপর নির্ভরতা থাকবে বেশি।

Travelion – Mobile

যেহেতু কুয়েতে কোভিড-১৯ সঙ্কটে দীর্ঘদিনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে সেহেতু বিভিন্ন সংস্থাগুলিতে ইলেকট্রনিক পরিষেবার প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু সেবা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে যেগুলোতে একদল কর্মী লেনদেন সম্পন্ন করতে কাজ করছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপক হারে সহায়তা নেয়া হচ্ছে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের।

আরব টাইমস জানায়, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ইতিমধ্যে নাগরিক ও অধিবাসীদের জন্য ইলেকট্রনিক সেবা চালু করেছে। যেমন: জনশক্তি রফতানির কর্তৃপক্ষ, সামাজিক নিরাপত্তা জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক তথ্য কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্ভিস কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়, কুয়েত পৌরসভা, স্টেট মিনিস্ট্রি ফর হাউজিং অ্যাফেয়ার্স, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও পানি মন্ত্রণালয়, সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রনালয়।

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, মন্ত্রী পরিষদের কাছে তারা একটি রিপোর্ট জমা দিয়বে যেখানে লেনদেন গ্রহণ ও শেষ করার জন্য ওইসব বিভাগ ও সংস্থার কিছু পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ১৬টি সরকারি সংস্থাকে একত্রে যুক্ত করার পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার। সরকারি সংস্থাগুলোতে কিছু লেনদেনের জন্য তাদের ওয়েবসাইট আবার কিছু ক্ষেত্রে চাউল করা স্মার্ট অ্যাপসের সহায়তা নিতে হবে। কিছু পরিষেবা দেওয়া হবে ইমেল আইডি বা হোয়াটস অ্যাপের মত সফটওয়্যার ব্যবহার করে ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, বেশীরভাগ সংস্থা তাদের সেবা কার্যক্রম প্রসারিত করেছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের লেনদেন কার্যক্রমে ভিড় এড়াতে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তাঁরা আরো জানায়, সরকারি সংস্থার অফিসগুলোতে আগে থেকে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে রিসেপশনের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে যাতে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়।

আরব টাইমস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে দূরে থেকে কার্যক্রম বা লেনদেন সম্পন্ন করা বা প্রতিষ্ঠানে সকাল ও সন্ধ্যায় শিফট চালু করার মাধ্যমে জমায়েত কমিয়ে নাগরিকদের সেবা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে হাজিরা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে আর কাজ সম্পাদন করা হবে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেনদেনের উপর ভিত্তি করে। থাকবে মুখে মাস্ক পড়া, অফিস জীবাণুমক্ত রাখার বাধ্য-বাধকতাও।

সূত্রগুলো জানিয়েছে দেশের শিক্ষা খাতের নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষতদের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করেছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার সাথে তাদের পরিচিত করানো। পাবলিক অথরিটি ফর এপ্লাইড এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং তিন মাস আগে থেকে ট্রেনিং শুরু করেছে এবং কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে যদি পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকে তবে আগস্ট থেকে তারা দূরশিক্ষাণ কার্যক্রম শুরু করবে। দেশটির সরকার তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে দূরশিক্ষাণ এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনতে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জানিয়েছে আরব টাইমস।

কিছু ইলেকট্রনিক পরিষেবার ক্ষেত্রে সিল ও আর্থিক বিষয়গুলির পরিবর্তে বার কোড দেয়া হবে, যাতে সেগুলো স্ক্যান করে মেয়াদ নিশ্চিত করা যায়। পাশপাশি স্বাস্থ্যবিমা, আকামা এবং ওয়ার্ক পারমিট সংক্রান্ত লেনদেনে মূল্য পরিশোধের বিষয়টির ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!