২৪ টি মাল্টি-রোল ‘রোমিও’ হেলিকপ্টার কিনছে ভারত

নির্ভুল নিশানা, ক্ষিপ্র গতি এবং এক ধাক্কায় শত্রুর ডুবোজাহাজকে তছনছ করে দিতে অত্যাধুনিক এই হেলিকপ্টার এবার দেখা যাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। ২৪০ কোটি টাকার চুক্তিতে আমেরিকার থেকে ২৪টি মাল্টি-রোল এমএইচ-৬০ রোমিও অ্যান্টি-সাবমেরিন হেলিকপ্টার কিনছে ভারত।

এই হেলিকপ্টার কেনার জন্য অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চরিত্র করছিল ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের আগেই সেই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সেরে ফেলল দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

এম এইচ ৬০ রোমিও সংক্ষেপে রোমিও হেলিকপ্টার তৈরি করে মার্কিন সংস্থা লখিড মার্টিন । নির্ভুল নিশানা ছাড়াও এর আছে অনেক গুণ। এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যায় বিনাশকারী বা ডেস্ট্রয়ার হিসেবেও, পাশাপাশি ক্রুজার এবং বিমানবাহী রণতরী থেকেও এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারবে ভারতীয় নৌবাহিনী।

Travelion – Mobile

সমুদ্রে নজরদারি চালাতেও এর জুরি মেলা ভার। জাহাজ তো দূর, এই হেলিকপ্টার থেকে টর্পেডো দেগে সমুদ্রের নীচে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা সাবমেরিন ও গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। সাবমেরিন যতই গভীরে থাক, ‘মাল্টি-রোল’ হেলিকপ্টার তার গন্ধ পাবেই।

নির্ভুল নিশানা, ক্ষিপ্র গতি এবং এক ধাক্কায় শত্রুর ডুবোজাহাজকে তছনছ

ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী এই হেলিকপ্টার থেকে প্রয়োগ করা যাবে ১০ রকম হেলফায়ার মিসাইল, ৩৮ রকমের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রবাহী রকেট, এবং ৩০টি এমকে ৫৪ টর্পেডো।

ভারত মহাসাগরে চীনের বাড়তে থাকা প্রতিপত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই হেলিকপ্টার ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, মাল্টি-রোল হেলিকপ্টারের অর্থই হল যে, একই সঙ্গে সমুদ্রে নজরদারি এবং হামলা চালাবে তারা। কিন্তু তার আসল কার্যকারিতা হল, সে ডুবোজাহাজ-শিকারি। জলের উপরে শত্রুপক্ষের জাহাজ বা বোটকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। অন্য কপ্টারের মোকাবিলায় মেশিনগানও থাকে।

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে বোঝাপড়া অনেক বেড়েছে। মার্কিন ডিফেন্স সিকিউরিটি কর্পোরেশন এজেন্সি (DSCA) বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘সামরিক ক্ষেত্রে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এই নতুন চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তুলবে। শুধু সামরিক ক্ষেত্রই নয়, রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা, অর্থনীতি, এবং ব্যবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়েও দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হবে।’’

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’দিনের ভারত সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগেই এই অস্ত্র-চুক্তি সেরে ফেলাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে একটি সম্মেলন চলাকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে এই হেলিকপ্টার কেনার ব্যাপারে প্রথম কথা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার পর থেকে একটু একটু করে গতি পেতে থাকে এই অস্ত্র-চুক্তি। ভারত মহাসাগরে চিনা প্রতিপত্তির বাড়বাড়ন্ত রুখতে জরুরি ভিত্তিতে রোমিও হেলিকপ্টার কেনা প্রয়োজন বলে ভারতের তরফে চিঠিও যায় আমেরিকায়।

মার্কিন নৌসেনার কাছেও এম এইচ ৬০ রোমিও চপার রয়েছে। অথচ ভারতের কাছে এমন কপ্টার বলতে এখন ব্রিটেনের তৈরি মাত্র এক স্কোয়াড্রন সি-কিং চপার। কিন্তু তা কেনা হয়েছিল প্রায় ৪০ বছর আগে।

তার পরে তার আর আধুনিকীকরণ হয়নি। নজরদারি ও যুদ্ধ করার জন্য সি-হ্যারিয়ার বিমান আগেই অবসর নিয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে শুধু পিএইট-আই বিমান। ভারত মহাসাগরে যেভাবে প্রতিপত্তি ফলাচ্ছে চিন তাতে, ভারতের হাতে এই হেলিকপ্টার থাকলে ভারত মহাসাগর এলাকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলেও ভারতের প্রতিপত্তি অনেকটাই বাড়বে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!