২০ ফুট লম্বা হাঙর মিলল আটলান্টিক উপকূলে
বাস্কিং শার্ক (Basking Shark)। হোয়েল শার্কের (Whale Shark) পরেই আকারে দীর্ঘতম হাঙর। বছরের পর বছর উপকূলে ক্যামেরা বসিয়ে, সমুদ্রের অতলে এই প্রজাতির খোঁজ চলছিল আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায়। শেষমেশ দেখা মিলেছে। লেন্সবন্দি করা গেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাঙরের এই প্রজাতিকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ম্যাসাচুসেটসের উপকূলে দেখা মিলল এই হাঙরের। সৈকতের কোলাহল ভেঙ্গে ঢেউয়ের ভিতর থেকে আচমকাই উঁকি দেয় বিকট দর্শনের এই জীব।। উঁকি তো নয় রীতিমতো গিলে খেতে আসছে যেন। খোলা মুখে ধারালো দাঁতের সারি। ভয়ে হিম শীতল হয় সৈকতচারিরা। দিকবিদিক ছুটে পাগলের মতো।
লম্বায় ২০ ফুট! ম্যাসাচুসেটসের উপকূলবর্তী এলাকায় মাঝেমধ্যে হাঙরের আনাগোনা হয় বটে, তাই বলে এত বড় হাঙর? না অন্য কিছু? অনেকেই বললেন সমুদ্র-দানব। উপকূলে এই জীবের উপস্থিতির খবর শুনে তড়িঘড়ি ছুটে যান বিশ্বখ্যাত কুইনস ইউনিভার্সিটি এবং ওন্টারিওর ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানীরা।
জীববিজ্ঞানীরা বাস্কিংদের বলেন ‘মেগামাউথ শার্ক।’ আকারে বিশাল এবং মুখের অমন ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে অনেকেই এই হাঙরকে বলেন ‘বোন-শার্ক’ বা ‘এলিফ্যান্ট শার্ক।’
জীববিজ্ঞানীদের মতে, দেখতে যতটা হিংস্র স্বভাবে ততটাও নয় এই বাস্কিং হাঙররা। বরং লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকতে বেশি ভালবাসে তারা। উপকূলে ভেসে এলেও চকিতে জলের তলায় মিলিয়ে যায় বাস্কিংরা। সমুদ্রের গভীরে এরা বেছে নেয় অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকা। তাই এদের নাগাল পাওয়া একরকম অসম্ভব ব্যাপার।
পূর্ণবয়স্ক বাস্কিংদের দৈর্ঘ্য ৬-৮ মিটার (২০-২৬ ফুট)। নরওয়ের উপকূলে প্রথম এই জাতীয় হাঙরের কঙ্কাল দেখেছিলেন জীববিজ্ঞানী জোহান আর্নস্ট গান্নেরাস। সমুদ্রের ৯১০ মিটার (২,৯৯০ ফুট) গভীরতায় বাস্কিংরা থাকতে পছন্দ করে। ৮-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত। উপকূলবর্তী এলাকাতেও চলে আসে এরা, তবে সেটা খুবই বিরল।
১৮৫১ সালে কানাডার উপকূলে এমনই একটি বাস্কিং হাঙর নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। সেটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৪০ ফুট। গত বছর আমেরিকার মেইনের উপকূলে ১৫ ফুটের একটি বাস্কিং হাঙরের বিকৃত দেহ উদ্ধার হয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, মানুষের নির্যাতনের শিকার ছিল সেটি। লিভার অয়েল, পাখনা. চামড়ার জন্য বাস্কিংদের নিশানা করে শিকারিরা। এরা সাধারণত মানুষের সংস্পর্শে আসে না। মানুষ শিকারও বাস্কিংদের পছন্দ নয়। অথচ হাঙরদের মধ্যে বাস্কিং শিকারই বেশি হয় আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায়। ফলে ধীরে ধীরে এরা বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলছে।
জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, স্যাটেলাইট ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে বাস্কিংয়ের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয় ২০০৩ সাল থেকে। দেখা গেছে শিকারিদের খপ্পর থেকে বাঁচতে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ সমুদ্রপথে পাড়ি দেয় এরা। ২০১৫ সালে ২০ ফুটের একটি বাস্কিংকে পাওয়া গিয়েছিল পোর্টল্যান্ডের কাছে। দলছুট হয়ে সেটি মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল।
২০০০ সালের পর থেকে নিউজিল্যান্ডে কোনও বাস্কিং দেখা যায়নি। গত বছর জুনে ‘নিউজিল্যান্ড থ্রেট ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম’ বাস্কিং হাঙরদের বিরল তালিকাভুক্ত করে।
পরবর্তীকালে বাস্কিংদের লাল তালিকায ফেলে আইইউসিএন। মার্কিন ‘ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বাস্কিং হাঙরদের সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। জীববিজ্ঞানীরে বলছেন জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব এবং মানুষের শিকার—এই দুইয়ের কারণে এই বিশাল সামুদ্রিক প্রজাতি বিলুপ্ত হতে বসেছে পৃথিবী থেকে।
Comments