স্পেনের ইতিহাসে প্রথম : অভিবাসী নৌকায় জন্ম নেওয়া শিশু পেল নাগরিকত্ব
২০১৮ সালের ৮ মে স্পেন উপকূলে অভিবাসী নৌকায় ক্যামেরুন মায়ের কোলজুড়ে জন্ম নেয়া কন্যা শিশু আন্নার বয়স এখন পাঁচ বছর। চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্র ও পাসপোর্টহীন আন্নাকে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব দিয়েছে দেশটির একটি আদালত, যা স্পেনের ইতিহাসে প্রথম।
পাসপোর্টহীন থাকায় শিশু আন্না স্প্যানিশ স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা পরিষেবা থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিল। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে অবশেষে স্পেনের বাস্ক প্রদেশের গুইপজকোয়ার আদালত মেয়েটিকে স্প্যানিশ জাতীয়তা দিতে সম্মত হয়েছে।
8 জুন স্প্যানিশ বিচার বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, “গুইপজকো প্রদেশের আদালত এই পদ্ধতিতে স্পেনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো শিশুকে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব প্রদান করল।”
সাগরে ভাসমান নৌকায় যখন শিশুটির জন্ম হয়েছিল যখন তার মা ক্যামেরুন থেকে স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। পরে দক্ষিণ উপকূলের তারিফা শহর হয়ে আন্না ও তার মা স্পেনে প্রবেশ করেছিলেন। রাষ্ট্রহীন আন্না তখন থেকে জন্ম সনদ ও পাসপোর্ট ছাড়াই মায়ের সাথে ছিল। কোন প্রকার প্রশাসনিক পরিচয় ছাড়াই স্পেনের বাস্ক প্রদেশের সাঁ সেবাস্তায়া শহরে মায়ের সাথে বসবাস করে আসছিল ।
আদালত জানিয়েছে, “উপকূলে জন্ম নেয়া শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি সাংবিধানিকভাবে বৈধ একটি রায়। এই ছোট্ট শিশুটিকে “রাষ্ট্রহীন” মর্যাদা দিয়ে ছেড়ে দিলে তাকে স্প্যানিশ সমাজে অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়তে হতো। এটি বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি করতো, যা শিশুটিকে শিক্ষার অধিকারসহ প্রাথমিক ও মৌলিক অধিকার পেতে অযোগ্য করে তুলতো।”
আন্নার মা এখন মেয়ের নাগরিকত্বের সুবাদে নিজেও স্পেনে একজন নিয়মিত অভিবাসী হতে সক্ষম হচ্ছেন। তিনি রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
কোনো শিশু সাধারণত স্প্যানিশ জাতীয়তা লাভ করতে দেশটিতে জন্ম নেওয়া যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে একটি শিশুর বাবা অথবা মায়ের স্প্যানিশ নাগরিকত্ব অথবা দশ বছর ধরে স্পেনে থাকা বাধ্যতামূলক।
দীর্ঘদিন ধরে তার মা আন্নার জন্য যেকোনো একটি জাতীয়তা পেতে চেষ্টা করছিলেন। তিনি ২০১৯ সালের মার্চে স্পেনে দায়িত্বরত ক্যামেরুনের রাষ্ট্রদূতের কাছে তার মেয়ের জাতীয়তার স্বীকৃতি চেয়েছিলেন। কিন্তু শিশুটির জন্মস্থানের অজুহাতে সেটি অস্বীকার করা হয়েছিল। কারণ আন্না মরক্কো ও স্পেনের মধ্যে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরে জন্ম নিয়েছিলেন।
এছাড়া, ২০২১ সালের মার্চ মাসে আন্নার মা স্পেনের মরক্কোর দূতাবাসকেও মেয়ের জন্য মরক্কোর জাতীয়তার স্বীকৃতি এবং পাসপোর্ট দেয়ার অনুরোধ করে ব্যর্থ হন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) স্পেন কার্যালয়ের সুরক্ষা বিষয়ক দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা ফ্রান্সিসকো অর্টিজ বলেন, “এটি এমন একটি সমাধান যা আরও অনেক শিশুদের জন্য কাজ করবে কি না সেটি আমরা নিশ্চিত নই। তবে আন্নার পক্ষে দেয়া এই রায় মানবাধিকার এবং শিশুদের সুরক্ষার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তনের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”