সৌদি পুলিশী হেফাজতে সুমি, টাকা দিলে ছাড়বে কফিল

সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতন শিকার প্রবাসী নারী গৃহকর্মী সুমি আক্তার (২৬) অবশেষে উদ্ধার হলেন। সোমবার রাতে জেদ্দার দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে দেশটির পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ হেফাজতে নিয়ে গেছে।

মুক্ত হলেও সহসা দেশে ফিরতে পারছেন না সৌদি নিয়োগকর্তা (কফিল) এর বাধার কারণে। সুমিকে আনতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, এই টাকা ‘সেবায়’ শোধ হয়নি। তিনি সুমিকে ছাড়তে চাইছেন না। আরও রাখতে চান, এসনটি জানিয়েছেন জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা।

পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাকে নরক থেকে উদ্ধার করার আকুতি জানিয়েছিলেন তিনি। দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে ।

Travelion – Mobile

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনার সাথে আকুতি জানানো তার ভিডিওটি ভাইরাল হয়। নজরে আসে সবার। তৎপর হয় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস, জেদ্দা কনস্যুলেট।

সুমি ঢাকার আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

সুমিকে উদ্ধার বিষয়ে স্বামী নুরুল ইসলাম জানান, সুমির সঙ্গে দুপুরে একবার কথা হয়েছে। সুমি বলেছে, সৌদি পুলিশ তাকে নেয়ার জন্য আসবে। পরে রাতে আবার কথা হলে সুমি জানায়, এখন আর ফোন দিয়েন না, কিছু সময়ের মধ্যে পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ঔ কর্মকর্তা বলেন, সুমিকে থানায় নিয়ে আসা হলেও তার এখানকার নিয়োগকর্তা (কফিল) তাকে ছাড়তে চাইছেন না। তিনি সুমিকে আরও রাখতে চান।

সুমিকে ছাড়তে হলে যারা বাংলাদেশ থেকে মধ্যস্থতা করে (রূপসী বাংলা ওভারসিজ) তাকে সেখানে পাঠিয়েছে, তাদের কাছ থেকে সৌদির কফিলকে অর্থ আদায় করে দিতে হবে। কফিলের ভাষ্য, কারণ এখানে সুমিকে আনতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, এই টাকা সেবায় শোধ হয়নি।

সুমির পরিবার জানায়, ২০১৬ সালে নুরুল ইসলাম সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। সুমি পঞ্চগড় জেলার বোদা সদর থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী আগেও বিয়ে করেছেন। বাধ্য হয়ে সুমি সতীনের সংসার শুরু করেন।

বিয়ের দেড় বছর পর সুমির সংসারেও একজন সন্তান জন্মায়। সতীনের বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুমি। এ জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি।

তখন বিনামূল্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেটি হাতছাড়া করতে চাননি সুমি। চলিত বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি। এরপর গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস যোগে সৌদি যান সুমি।

দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে বিনামূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে পাড়ি জমান নিম্নবিত্ত ঘরের এই গৃহবধূ। কিন্তু দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানতেন না সুমি।

সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন। সেখানে যাওয়ার পর সবসময় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ওপর বয়ে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা দেন।

ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাব।’

[প্রিয় পাঠক, আকাশযাত্রা প্রবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ কমিউনিটির নানান খবর, সংগঠনের খবর, ভ্রমণ, আড্ডা,আনন্দ-বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি, দেশের স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। লেখা ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়]

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!