সাবওয়েতে রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা!

২৫ মে, ২০২১ মঙ্গলবার, নিউইয়র্ক সিটি।

নিউক্লিয়ার স্ট্রেস টেষ্টসহ আরো ক’টি টেষ্ট করাতে আমার স্ত্রীসহ কার্ডিয়াক স্পেশালিষ্টের অফিসে গিয়েছিলাম সকালে। দু’জনের একই রকমের টেষ্ট। রাতে ডিশিসন নিয়েছিলাম ট্রেনে করেই হেলেদুলে দু’জনে চলে যাবো। উইক ডে’তে ট্রেন ভ্রমন মজার। একবার ট্রেন বদলাতে হবে তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু সকালে মেয়ে বললো, ‘তোমার কার্ডিয়াক স্পেশালিষ্টের অফিস এলাকায় পার্কিং পাওয়া কঠিন। আমি টেক্সি ডেকে দিচ্ছি। টেক্সিতে যাও’। ভাবলাম দেরীও যখন ক্ষানিকটা হয়ে গেছে তাই টেক্সি করে যাওয়াটাই ভাল হবে। আসার সময় ‘জার্নি বাই ট্রেন’।

টানা চার ঘন্টা লেগে গেল সব পরীক্ষা শেষ করতে। ডাক্তারের অফিস থেকে বের হয়ে ট্রেন ধরে যাচ্ছিলাম ইউনিয়ন স্কয়ারে। মেয়ে ফোন করে বললো, ‘কেন যাচ্ছো ওদিকটায়। ইউনিয়ন স্কয়ার স্টেশনে প্রায়ই নানা অকারেন্স হয়’। বললাম, ‘চিন্তা করোনা। আমরা দু’জন আছি, চোখ কান খোলা রেখে সাবধানে চলবো’।

Travelion – Mobile

স্টেশনে ঢুকে আমরা কুইন্স বাউন্ড ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়েছি মাত্র। হঠাৎ দেখি প্ল্যাটফরমে অনেক পুলিশের ছুটোছুটি। মোবাইলের মতো ছোট ডিভাইস দিয়ে কি যেন ট্রেকিং করছে আর লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছে। পুলিশের এ্যালার্ম আর ছুটোছুটিতে ভয় পেয়ে আমার স্ত্রী ততোক্ষনে আমাকে সজোরে জাপটে ধরেছে।কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই দেখলাম ১৫/২০ জন পুলিশ আমাদের্ দু’জনকে ঘিরে ফেলেছে।

শুধু ঘিরে ফেলাই নয়,অস্ত্র উচিয়ে কেউ কেউ এমনই কাছে চলে এসেছে যে মনে হচ্ছিল সব শেষ। আমি সেরেন্ডারের কায়দায় দু’ হাত উপরে উঠিয়ে নিলাম। লম্বা একজন অফিসার আমার বডি সার্চ শুরু করলো। তাদের তাৎক্ষনিক কথা বার্তায় বুঝলাম তাদের হাতের মোবাইল সদৃশ্য ডিভাইসে রেডিয়েশন ধরা পড়ছে। মনে হলো, পুলিশের ধারণা আমাদের দেহে বা ব্যাগে কোন বোমা লুকানো আছে।

তখনই মনে হলো মাত্র মিনিট দশেক আগে আমাদের নিউক্লিয়ার ট্রেস টেষ্ট করা হয়েছে। হতে পারে সেই রেডিয়েশন পুলিশের ডিভাইসে ধরা পড়েছে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় আমি এতো সন্ত্রস্ত হয়ে পরেছিলাম যে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। আমি অনেকটা বোবার মতো আমার হাতের যেখানে ক্যানোলা লাগানো হয়েছিল সেই টেপ দিয়ে ব্যান্ডেজ লাগানো ক্ষতটা দেখাচ্ছিলাম।

হঠাৎ করেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো নিউক্লিয়ার স্ট্রেস টেষ্ট শব্দটি। একজন পুলিশ চিৎকার করে বললো,’আই আন্ডারস্ট্যান্ড,আই আন্ডারস্ট্যান্ড’। তারপর ছন্দপতন হলো রুদ্ধশ্বাস পরিবেশের।

পুলিশের রেকর্ডিং ডিভাইসে আমাদের জবানবন্দী নেওয়া হলো। আমাদের আইডি, মেডিকেল রেকর্ডগুলো কপি করে নিল তারা। একজন অফিসার এনওয়াইপিডির (নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট) কার্ডে তার ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে বললো,’ এটা রাখো পথে অন্য পুলিশরা তোমাদের আটকারে এই নাম্বারে ফোন করলেই চলবে’।

তারপর পুলিশের আরকেজন অফিসার বললো,’আমরা তোমাকে এজন্য টিকিট দিতে পারতাম। যেহেতু তুমি এটি জানতে না তাই টিকিট দেওয়া হলো না’।

তখনও আমার স্ত্রী স্বাভাবিক হতে পারছিল না। তাই দু’জন পুলিশকে রেখে অন্যরা চলে গেল। জানালো,’তোমাদের ট্রেন এলে এরা তোমাদের তুলে দিয়ে যাবে’।

ট্রেনের অপেক্ষা করতে করতে তাদের সাথেই কথা বলে জানা গেল-এনওয়াইপিডির ট্রানজিট এন্টি ট্যাররিজম ইউনিট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই নুতন ডিভাইসটি সাবওয়েতে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে ব্যবহার করছে।

অনেক দিন পর সাবওয়ে ব্যবহার করতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম যা মনে থাকবে সারা জীবন!

লেখক: নিউইয়র্কপ্রবাসী সাংবাদিক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!