লেবাননে লাইসেন্সবিহীন মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

লেবাননে নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত হারে ডলার বিক্রিতে উৎসাহিত করার জন্য দেশের সমস্ত লাইসেন্সবিহীন এক্সচেঞ্জ ডিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ডলারের ক্রয় মূল্যে লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনার কারণে টানা চতুর্থ দিনের মতো ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে লেবাননের মানি এক্সচেঞ্জগুলো। এর প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মানি এক্সচেঞ্জ মালিকদের জরুরী বৈঠকে এই ঘোষণা আসে।

মানি এক্সচেঞ্জ ডিলারদের প্রধান মাহমুদ ম্যারাড এই তথ্য জানিয়ে বলেন “আজ [মঙ্গলবার] বিডিএলের সদর দফতরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রিয়াদ সালামেহ এবং রাজ্য ফিনান্সিয়াল প্রসিকিউটর আলী ইব্রাহিমের সাথে আমরা বৈঠক করেছি। ইব্রাহিম লেবাননের লাইসেন্সবিহীন সকল এক্সচেঞ্জ ডিলারদের বন্ধ করার ব্যবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য বৃহস্পতিবার একটি শীর্ষ সুরক্ষা বৈঠক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েন।”

Travelion – Mobile

তিনি আরও যোগ করেন যে, লাইসেন্সবিহীন এক্সচেঞ্জ ডিলাররা বিডিএল’র বিজ্ঞপ্তি মেনে চলতে রাজি রয়েছে যার মধ্যে বলা হয়েছে যে ডিলারদের অবশ্যই সরকারী হারের ৩০ শতাংশের উপরে ডলার বিক্রি করতে পারবে না।

ডলারের ক্রয় মূল্যে লাগাম টানতে শুক্রবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে, মানি এক্সচেঞ্জারদের তাদের ডলারসহ বিদেশী মুদ্রা কেনার হার সরকার নির্ধারিত হারের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি না করার ব্যাপার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে করে সাধারন মানুষের জন্য ডলার প্রতি মূল্যে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৬০ লিরা।

কিন্তু বেশিরভাগ এক্সচেঞ্জ ডিলাররা ‘কালোবাজারিরা তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি করছে’ অজুহাতে কমিয়ে দেয়া দামে ডলার বিক্রি করতে অসম্মতি জানায় এবং অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বৈঠকের আগে মানি এক্সচেঞ্জ সিন্ডিকেটের মূখপাত্র জিন আসাফ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, “এটি একটি প্রকাশ্য ধর্মঘট। মানি এক্সচেঞ্জগুলো ডলার কেনা-বেচা বন্ধ করে দিয়েছে এবং তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য এ পদক্ষেপ চালিয়ে যাবেন।”

এই প্রতিবেদক বৈরুতের বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেন। দেখা যায় তাদের কেউ ডলার বিক্রি করতে জন্য রাজি হয়নি ।তারা দাবি করেন যে, বিক্রি করার মতো তাদের কাছে কোনও ডলার নেই।

তবে দেখা যায় ২ হাজার লেবানিজ লিরায় নতুন দামে ডলার ক্রয় করতে তারা বেশ তৎপর ছিলেন । এসময় বেশ কিছু গ্রাহককে নতুন হারে তাদের কাছে ডলার বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। অন্য অনেক ডিলাররা জানান, এই মূল্যনিয়ন্ত্রণ বাজারকে অন্য পথে ধাবিত করতে বাধ্য করবে, মানি এক্সচেঞ্জের বাইরে বাড়বে গোপন লেনদেন।

গেল জানুয়ারিতে দেশটির নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক ঘন্টা পর মানি ডিলার্সরা ঘোষণা দিয়েছিল ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেটে প্রতি ১ মার্কিন ডলারে ২০০০ লিরা পাওয়া যাবে। এ নিয়ে মাস খানেক ধরে স্থানীয় বাজারে ডলার থেকে লেবানিজ মুদ্রায় বিনিময় হারে অস্থিরতা চলে।

২০১৯ এর অক্টোবরে দেশটির ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যেতে শুরু করে। তখন প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫০০ লিরা হয়ে দাঁড়ায় যা ১৯৯৭ সালে সরকারিভাবে নির্ধারিত ১৫১৭ লিরা থেকে প্রায় ১০০০ লিরা বেশি। গত সপ্তাহে তা আরও বেড়ে ২ হাজার ৭০০ লিরা পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিল।

এই বিনিময় হার বৃদ্ধি তখন থেকে লেবানিজ নাগরিক ছাড়াও বাংলাদেশিসহ সকল প্রবাসীদের অর্থনৈতিক ও পেশাগত জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

এদিকে নতুন নির্দেশনা না মানলে নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ও প্রশাসনিক শাস্তির বিধান আছে বলে জানিয়েছে সিন্ডিকেট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!