লেবাননে করোনায় আক্রান্ত ১২০ জন, বিমান-সমুদ্র-স্থল বন্দর বন্ধ
লকডাউনের তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার লেবাননে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১২০ জনে দাঁড়িয়েছে। বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সকল নাগরিক এবং প্রবাসীকে “কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত কঠোর পদক্ষেপগুলি মেনে চলার এবং একেবারে প্রয়োজনে [চলে যাওয়ার] ছাড়া বাড়িতে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।”
মেডিকেল ইমার্জেন্সি জারি করায় ফাঁকা হয়ে গেছে লেবাননের রাস্তাঘাট। বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সামলাতে সোমবার থেকে সরকার জরুরী অবস্থা জারির পর সারা দেশে তা কার্যকর করতে তৎপর প্রশাসন।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান ডিয়াব বলেন, “আমরা সাংবিধানিকভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। লেবাননের ইতিহাসে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। ”
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২৯ মার্চ পর্যন্ত রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সকল স্থল ও সমুদ্রবন্দর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গতকাল থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত সব ধরণের বন্ধ করে দিয়েছেদেশটির ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন।
তবে মঙ্গলবার দেশটির অর্থমন্ত্রী গাজী ওয়াজনি এবং ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন জনগণের চাহিদা বিবেচনায় লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকের কিছু শাখা খোলা রাখতে সম্মত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে” বুধবার ব্যাংকের শাখাগুলি খোলা হবে এবং ব্যাংকিং পরিষেবা দেওয়ার সময় ভিড় রোধের সিদ্ধান্তও মেনে চলবে। এছাড়া প্রতিটি ব্যাংক খোলা রাখা শাখার একটি তালিকা ঘোষণা করবে এবং কল সেন্টার পরিষেবা ও এটিএমের মাধ্যমে নগদ টাকা উঠানোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবে, বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক ফাদি আল-হাসান জানান, ১৮ মার্চ থেকে সকল ধরনের বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত ফ্লাইট চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নেই সামরিক বিমান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, কার্গো প্লেন, কূটনৈতিক বিমান, ইউনিফিল কর্মচারী এবং লেবাননের জলসীমায় তেল অনুসন্ধানে নিয়োজিত কর্মীদের বহনকারি বিমান।
তিনি আরো জানান, ১৮ মার্চের আগে কোন লেবানিজ নাগরিক কিংবা বিদেশী অধিবাসী দেশে ফিরতে চাইলে, ফিরতে পারবেন। যদিও আরো আগে ফ্রান্স, মিশর, সিরিয়া, ইরাক, জার্মানি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ইরান, চীন, হংকং, তাইওয়ান, ম্যাকাউ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সকল ধরনের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার কারণে সেখানকার কারও আর ফেরার সুযোগ নেই বলে জানায় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এর আগে দেশটির মন্ত্রিসভা ফ্রান্স, মিশর, ইরাক, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও জার্মানি থেকে ফেরার জন্য চারদিন সময় দিয়েছিল যেটির সময় শেষ হয় রবিবার।
এরই মধ্যে আমিরাত, কাতার এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়াররলাইন্স, এয়ারএরাবিয়াসহ সকল আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থা বৈরুত রুটে নিয়মিত ফ্লাইটগুলো স্থগিত করে দিয়েছে। ফলে লেবানন থেকে বাংলাদেশিসহ প্রবাসীদের নিজ দেশে যাওয়ার আপাতত পথরুদ্ধ হয়ে গেল।
সোমবার থেকে দেখা যায়, সাধারণত ব্যস্ত ও প্রাণচঞ্চল থাকা বৈরুতের রাস্তাগুলো ছিল শূন্য। মানুষ আর গাড়িবিহীন। ফাঁকা পড়ে ছিল দোকান, ক্যাফে, পানশালা কিংবা রেস্টুরেন্ট। তবে জরুরী সেবা যেমন হাসপাতাল, খাবারের দোকান, ফার্মেসি, সুপারমার্কেট ও মুদি দোকানগুলো জনস্বার্থে খোলা রাখা হয়েছে।
বৈরুতের সমুদ্রঘেষা ফুটপাতগুলোতেও খুব একটা মানুষের সমাগম হচ্ছে না। যদিও গেল রবিবার বিশাল একটি জনসমাগম সেখানে হলেও নিরাপত্তা বাহিনী এসে তাদের সরিয়ে দেয়।
লেবানন ডেইলি স্টারের প্রকাশিত এক সংবাদে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন শহরে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা যায়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে দক্ষিণে অবস্থিত সিডনে দৈনন্দিন জীবনযাপন অনেকটাই মন্হর ছিল। এদিকে দক্ষিণের শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও আইনের প্রয়োগ করতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে সিডনের সমুদ্রঘেষা পর্যটন সড়কে বেশ কিছু নাগরিককে নিয়ম ভেঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। কেউবা আরো এক ধাপ এগিয়ে সমুদ্রে সাঁতার কেটে অবকাশ যাপন করছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে এসব নিয়ম ভঙ্গকারীদের সরে যেতে বলে।
পত্রিকাটি আরো জানায়, স্থানীয় মিডিয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে জেইতা শহরে সড়ক বেশ ফাঁকা এবং দোকানপাট প্রায়ই বন্ধ। সেখানে দেখা গেছে একটি ফার্মেসী খোলা ছিল যদিও কর্মী এবং গ্রাহকদের আলাদা করতে সেখানে লাগানো ছিল প্রতিরক্ষামূলক কাঁচ। সেখানকার এক কর্মচারী স্থানীয় টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারের সময় বলেন, “যেহেতু আমাদের খোলা রেখে এই বিশেষ সেবা প্রদান করতে হচ্ছে সেহেতু আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। ”
বাট্রউন পৌরসভায় দেখা গেছে রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করতে প্রশাসন আলাদা কর্মী নিয়োগ করেছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, পশ্চিম বেকাইয়ের গ্রাম ও শহরগুলোর পৌরসভা ভবন, রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও বিদ্যালয়গুলোকে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।
সোমবারে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়টা বলে দিবে আমাদের দেশে করোভাইরাস কতটুকু বিস্তার করবে। তাই সকলের সহযোগিতা আমাদের খুবই প্রয়োজন।
“আগামী দুই সপ্তাহ আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পরবর্তীতে আবহাওয়া এটি কমাতে সহায়ক হবে” বলেন হামাদ।
তিনি গণপরিবহনে না চড়ার উপর জোর দিয়ে বলেন, পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিস্তার আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে কারণ ৬০-৭০ শতাংশ করোভাইরাস বহনকারীর তেমন কোন উপসর্গ দেখা যায়না। তিনি বলেন “ আমাদের সকলের সহযোগিতার অভাবে পরিস্থিতি এখনকার চাইতেও অনেক ভয়াবহ হতে পারে। ”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসানের এই ঘোষণা সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত জারি থাকবে।