লেবাননে করবিরোধী বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে

দাবি একটাই সরকারের পদত্যাগ

লেবাননে করবিরোধী বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে। হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কর প্রত্যাহারের ঘোষণার পরেও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে লেবাননবাসী। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, জীবনযাত্রার মানের অবনতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি, দূনীতির প্রতিবাদে সরকারের পদত্যাগ চেয়ে ৪র্থ দিনের মতাে চলে বিক্ষােভ। পুলিশি বাধা সত্ত্বেও রোববার বৈরুতের রাজপথে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার বিক্ষোভকারীরা।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং পার্লামেন্ট ভবন সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় তারা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দফতরই নয়; তার আবাসিক ভবনের বাইরেও বিক্ষোভ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বৈরুতে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। দেশটি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাদের মতে, গত এক বছরের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে লেবাননে এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। এক বছরেরও কম সময় আগে ক্ষমতায় আসা হারিরির জোট সরকারের জন্য এ বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Travelion – Mobile

গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পদত্যাগ করেছেন সরকারের চার মন্ত্রী। সঙ্কট নিরসনে গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে জনগণের দাবি পূরণে ৭২ ঘণ্টা সময় চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। নতুন কোন কর আরোপ না করার প্রতিশ্রতিতে দিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। জনগণ তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে রাস্তা দখলে রাখে। এখন তাদের একটাই দাবি সাদ সরকারের পদত্যাগ।

জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক বয়োজেষ্ঠ্য লেবানিজ
জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক বয়োজেষ্ঠ্য লেবানিজ

দেশজুড়ে উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে লেবাননের জোট সরকারেও ফাটল দেখা দিয়েছে। জোট সরকারের মন্ত্রিসভা ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দীর্ঘ দিনের মিত্র খ্রিষ্টান ডানপন্থী দল লেবানিজ ফোর্সেস পার্টি। গত শনিবার গণবিক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করেন লেবানিজ ফোর্সেস পার্টির চার মন্ত্রী। পদত্যাগের পর শ্রমমন্ত্রী ক্যামিল আবসলেইমন বলেন, সমস্যা নিরসনে সরকারের সক্ষমতার বিষয়ে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলার পরই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলটির অপর এক নেতা সামির গাগিয়া বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

দেশটির পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ঋণের দায়ে জর্জরিত লেবাননের নাগরিকরা কর ও মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, লেবাননের সরকারের প্রায় ৮৬০ কোটি বিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে যা মোট দেশজ উৎপাদনের ১৫০ শতাংশেরও বেশি।

লেবাননে করবিরোধী বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে।
লেবাননে করবিরোধী বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে।

বিক্ষোভের জেরে উত্তাল লেবাননে নিজ দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি আরব, কুয়েত, মিশর ও বাহরাইনসহ বেশ কয়েকটি দেশ। শুক্রবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নিজ দেশের দূতাবাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য ও কানাডা। জনগণের দাবি দ্রুত মেনে নিতে হারিরিকে অনুরোধ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, দেশটি বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা সর্তক ও নিরাপদে আছে। কড়া নজর ও সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছে দূতাবাস। প্রবাসি বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদ্রুত আবদুর মোতালেব সরকার আকাশযাত্রাকে বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে সর্তক ও সচেতন থাকার জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!