লেবাননের বৈরুত বন্দর পুনর্গঠনের প্রস্তাবনা দিচ্ছে জার্মানি

বহু-বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প

জার্মানি আগামী সপ্তাহে লেবানন কর্তৃপক্ষের কাছে বৈরুত বন্দরের পুনর্গঠনের জন্য বহু-বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। আর্থিক পতন থেকে উদ্ধারে সক্ষম সরকার গঠন করতে দেশের রাজনীতিবিদদের প্রলুব্ধ করতে চেষ্টা অংশ হিসাবে এই উদ্যোগ জার্মান সরকারের। সূত্রগুলি জানিয়েছে, প্রকল্প ব্যয় ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে রাখা হয়েছে এবং এতে প্রায় ৫০ হাজারের মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে ।

গত বছের আগস্টে বন্দরে একটি রাসায়নিক বিস্ফোরণে ২০০ মানুষ মারা গিয়েছিল, হাজার হাজার আহত হয়েছিল এবং লেবাননের রাজধানীতে পুরো আশেপাশের অঞ্চল ধ্বংস করে দিয়েছিল। ১৯৭৫-১৯৯০-এর গৃহযুদ্ধের পর দেশটি তার সবচেয়ে খারাপ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের গভীরে ডুবে গেছে। বন্দরের বিপর্যয়ের আট মাস পরেও ঘরবাড়ি এবং ব্যবসায় হারিয়ে যাওয়া অনেক লেবানিজ পরিবার এখনও বিস্ফোরণের কারণগুলির তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে।

পরিকল্পনা সর্ম্পকে জানা দুটি কূটনৈতিক সূত্র ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, জার্মানি ও ফ্রান্স পুনর্গঠনের উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আগ্রহী। জার্মানি ৭ এপ্রিল তার প্রস্তাবে রূপরেখা দেবে, যা নীতিগতভাবে এই অঞ্চলটি পরিষ্কার করার জন্য এবং পুনর্নির্মাণের সুবিধার্থে অর্থ যোগাতে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) এর সমর্থন অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে কূটনীতিকরা জানান।

Travelion – Mobile

লেবাননে জার্মানির রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেয়াস কিন্ডল বৈরুত বন্দর ও আশেপাশের অঞ্চলগুলিকে পুনর্বাসনের জন্য আগামী সপ্তাহে একটি প্রস্তাবনা পেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংস্থা পরিকল্পনাটি তৈরি করেছে, যারা এটি উপস্থাপনের জন্য বৈরুতে আলোচনা করবে।

বন্দর ছাড়াও, জার্মানির প্রস্তাবে আশেপাশের অঞ্চলে ১০০ হেক্টররও বেশি জমি পুর্নগঠনের পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। পরিকল্পনার মধ্যে সোলিডেরের মতো একটি সর্বজনীন-তালিকাভুক্ত সংস্থা তৈরি করাও যুক্ত আছে, যা ১৯৯০ এর দশকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি স্থাপন করেছিলেন এবং লেবাননের স্টক এক্সচেঞ্জে রয়েছে।

ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) ইআইবির এক মুখপাত্র বলেছেন, বৈরুত ও আশেপাশের অঞ্চলসমূহের পুনর্গঠনের জন্য জার্মানির হামবুর্গ বন্দর এবং এর পরামর্শদাতা দল যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ব্যাংকের অবগত রয়েছে। তবে, বর্তমানে ইআইবির কোনও অর্থ সরবরাহের প্রস্তাব নেই। যে কোনও ইআইবি অর্থায়ন যথাযথ অধ্যায়ন বিষয় হতে পারে এবং এ জাতীয় কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে”।

“টিম ইউরোপ এবং পাশাপাশি এর অংশীদার,আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের অংশ হিসাবে লেবাননের জনগণের সমর্থন জানাতে এবং পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় অংশ নিতে ব্যাংক প্রস্তুত, তিনি আরও বলেন।” অনুমানিত ইআইবি তহবিল ২ বিলিয়ন থেকে ৩ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে হতে পারে, সূত্রের ধারণা ।

কূটনৈতিক সূত্র আরও জানায়, লেবাননের রাজনৈতিক গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জনসাধারণের আর্থিক সংশোধন এবং দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য প্রথমে একটি নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হওয়া দরকার, যা কোটি কোটি ডলারের সহায়তা ছাড়ের করার আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ দাতারা অন্যতম শর্ত বলে জোর দিচ্ছে।

বিদেশী দাতারা বলেছেন যে, নতুন সরকারের অবশ্যই একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষা এবং অপব্যয়ী বিদ্যুৎ খাতের একটি পর্যালোচনাসহ অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের দৃঢ় ম্যান্ডেট থাকতে হবে। জার্মানির রাষ্ট্রদূত কিন্ডল বলেছেন, লেবানন কেবল অর্থবহ সংস্কার করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সমর্থন আকর্ষণ করতে পারে।

তবে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত সাদ আল-হারিরি এবং রাষ্ট্রপতি মিশেল আউন মন্ত্রিপরিষদ লাইন আপের বিষয়ে একমত হতে পারেননি। বিস্ফোরণের পরে ছেড়ে যাওয়া বিদায়ী মন্ত্রিসভা তত্ত্বাবধায়ক ক্ষমতায় থেকে গেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!