লেবাননের বিক্ষোভে অতি উৎসাহীদের উপস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ দূতাবাস, কমিউনিটি
চলমান বিক্ষোভে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত না হতে বিজ্ঞপ্তি জারি
লেবাননে করবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়া চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অতি উৎসাহী কিছু সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির অংশ নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কেবল অংশ গ্রহণই নয়, বিভিন্ন মিডিয়াতেও এ বিষয়ে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে অনেক অতি উৎসাহীকে।
এমন খবরে বিব্রত, উদ্বিগ্ন ও শংকিত লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা। লেবাননের চলমান নাগরিক আন্দোলন এদেশের সরকার ও জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হওয়া কিংবা মতামত দেয়া প্রবাসী বা বিদেশীদের অধিকার নেই বলেই এমন উৎকন্ঠা সবার। কারণ এ ধরনের কর্মকান্ড লেবাননে বাংলাদেশের স্বার্থের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনুরোধ জানিয়েছে লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ সংক্রান্ত দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতি উৎসাহী কিছুসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি লেবাননের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এবং মিডিয়াতে বক্তব্য রেখেছেন। বাংলাদেশি কর্মীদের এহেন কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে লেবাননে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধকরণ যে প্রক্রিয়া শুরুর পথে তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল এম সরকার টেলিফোনে আকাশযাত্রাকে বলেন,’এ ধরণের অনভিপ্রেত কাজে যুক্ত বাংলাদেশিদের সংখ্যা হাতে গোনা। কেউ কেউ না বুঝে বা তাদের লেবানিজ সহকর্মীদের খপ্পরে পরে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তবু এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর এবং দেশ ও প্রবাসীদের স্বার্থে শংকার কারণ।
তিনি বলেন, এ দেশের সরকার ও জনগণের সাথে আমাদের একটা চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সেই সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তাই আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে চলমান বিক্ষোভে কোন প্রকার সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্য প্রবাসীদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
একই সাথে তিনি বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সকল সচেতন বাংলাদেশীকে এ বিষয়ে প্রবাসীদের সচেতন করার জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, লেবাননে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছে। তবে তাঁদেরকে সতর্কতার সাথে চলাফেরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। তিনি তাদেরকে বিক্ষোভ সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
জানা যায়, চরম উত্তেজনা -উৎকন্ঠা-প্রতিবাদী পরিবেশ থাকলেও গত ৬ দিন ধরে চলা বিক্ষােভ কর্মসূচিতে বড় ধরনের কোন অঘটন হয়নি। সরকারও এখন পর্যন্ত কঠোর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে কর্মসূচি। বিক্ষোভকারীরা অনেকটা উৎসব আমেজেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। লাল-সাদা রঙের জাতীয় পতাকার আর প্রতিবাদী ব্যানার-ফেস্টুনের সাথে নানা ধরনের সাজসজ্জা, ঢোলবাদ্য নিয়ে অনেক লেবানিজ বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের সমাবেশে উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ফলে অনেকটা রঙিন হয়ে উঠেছে সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভ।
লেবানন প্রবাসী সাংবাদিক বাবু সাহা বলেন,উৎসব আমেজেই কিছুসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিকে বিক্ষোভে টেনেছে বলে আমার বিশ্বাস। স্রেফ কৌতুহল কিংবা লেবানিজ বন্ধুকে সঙ্গ দিতেই গিয়ে তারা এই অধিকারহীন কাজে জড়িয়ে গেছেন। লেবাননের জাতীয় দিবস, জাতীয় উৎসবগুলোতে সবদেশের প্রবাসীরা স্বস্তফূর্ত অংশগ্রহণ করে থাকেন। উৎসব আমেজে বলে এটাকেও হয়তবা তেমনটি মনে করছেন অতি উৎসাহীরা। তবে এ সংখ্যা খুবই কম।’
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠায় থাকা লেবাননে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা এ ধরণের কর্মকাণ্ড থেকে প্রবাসীদের দূরে থাকার আহবান জানিয়েছেন। নেতারাও বলছেন,’অন্যদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ প্রবাসীদের জন্য পুরোপুরি বেআইনী। বাংলাদেশি কোন প্রবাসীর কাছ থেকে নিজ দেশ ও কমিউনিটির জন্য ক্ষতিকর এ ধরণের আচরণ আশা করা যায় না।’
এ বিষয়ে আকাশযাত্রার সাথে টেলিফোনে মতামত দেয়া বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে ছিলেন লেবানন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশার প্রধান, লেবানন বিএনপির সাবেক সভাপতি মানিক মোল্লা, লেবানন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান টিটো, লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল করিম খাঁন, লেবাবন প্রবাসী ভাইবোন সামাজিক সংগঠনের সভাপতি শরীফ খাঁন।
কমিউনিটি নেতারাও মনে করছেন, কতিপয় প্রবাসী বাংলাদেশীরা না বুঝে না জেনে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উপস্থিত হচ্ছেন স্রেফ উৎসাহ ও আগ্রহের বশে। অনেকে লেবানিজ মালিক-বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গী হয়েও জড়িয়ে পড়ছেন বিক্ষোভে। এ বিষয়ে সর্তক ও সচেতন থাকার সাথে মালিক-বন্ধু বান্ধবদের আবদার-অনুরোধ উপেক্ষা করার পরামর্শ রাখেন কমিউনিটি নেতারা।
নেতারা জানান, সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং সামাজিক যোগােযাগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে প্রবাসীদের সর্তক করা হচ্ছে। পাশাপাশি যারা এমন কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন তাদের বিরত রাখা বিংবা নাম-পরিচয় দূতাবাসকে জানানোর জন্যও অনুরোধ করা হচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্তক থাকার জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি আহবান জানান নেতারা। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া রাস্তা-ঘাটে অযথা ঘোরাফেরা না করার পরামর্শ দেন তারা।
ভূমধ্যসাগরের পাড়ে অবস্থিত হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে আর বহু সভ্যতা-সংস্কৃতির মিলনমোহনার দেশ লেবানানে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি নানা পেশা নিয়ে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে আরও পড়তে পারেন :
লেবাননে করবিরোধী বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে
হোয়াটঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার কলের উপর কর, বিক্ষােভের আগুনে লেবানন