লেবাননে ‘গরিবের ডাক্তার’ মোহাম্মদ আজামির করুণ মৃত্যু!

লেবাননের সরকার বিরোধী বিক্ষোভের জনপ্রিয়, সুপরিচিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ডা. মোহাম্মদ আজামি মারা গেছেন। সড়ক দুঘর্টনায় আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়ে মাত্র ৫ লাখ লিরা (৩৯ ডলার) সিটি স্ক্যান চার্জ সময়মতো দিতে না পারায় অকালে ঝড়ে গেলেন “গরিবের ডাক্তার” খ্যাত এই জনদরদী মানুষটি, এমনটি অভিযোগ তার পরিবার ও বন্ধুদের। অন্যদিকে প্রিয় এই আন্দোলন কর্মীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোকাহত লেবাননের বিপ্লবী জনগণ।

কান, নাক এবং গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আজমি, ২০১৯ সালে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে অবিচ্ছিন্ন উপস্থিতির মধ্য দিয়ে লেবাননে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তিনি প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে উপস্থিত হয়ে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের অপসারণের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং দরিদ্র লোকদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার দাবি জানিয়েছিলেন। তাকে প্রায়শই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অক্ষম মানুষের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ এবং সেবা দিতে দেখা যায়।

৬৬ বছর বয়সী ডা. আজমি সোমবার বিকেলে বৈরুতের “রেভোলিউশন স্কয়ার”এ একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে দক্ষিণ লেবাননের মারাকাহে নিজ গ্রামে ফেরার পথে ভোর ৫ টা নাগাদ গুরুতর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তার গাড়ির এটি চাকা ফেটে যায় এবং ব্যারিকেড ধাক্কা লেগে উল্টে যায়।

Travelion – Mobile

দুর্ঘটনার পরে, তিনি নিজেকে সুস্থ বলে মনে করেছিলেন এবং কোনও ব্যথা অনুভব করেননি। আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স করে তাকে যখন দক্ষিণ লেবাননের সারাফ্যান্ডের আলায়েদাইন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও তার জ্ঞান ছিল। সহযাত্রী বন্ধু মুগনিহ জানান যে, আজমির কিছুটা রক্ত বেরিয়েছিল তবে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি “জাগ্রত ও সচেতন” ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত আজমির সহযাত্রী বন্ধু মুগনিহের ভিডিও বার্তার তথ্য অনুসারে, কোনও লক্ষণ না দেখা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সিটি স্ক্যানের জন্য ৫ লাখ লিরা (৩৯ ডলার) দিতে বলেছিল এবং পারিশ্রমিক ছাড়া তাকে ভর্তি বা চিকিত্সা করতে অসস্মতি জানিয়েছিল। এ কথা শুনে আজমি বন্ধুসহ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। কারণ ওই মুর্হুতে তাদের কাছে এই পরিমাণ অর্থ ছিল না। আজমির ছেলের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য তাদের তিন ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসান আলায়েদাই টাকা ছাড়া চিকিত্সার জন্য আজামিকে ভর্তি করতে অসম্মতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, আজমি প্রথমেে সকাল সাড়ে ৬ টায় হাসপাতালে এসেছিলেন, মাথা ট্রমা এবং পেটে ব্যথা নিয়ে। তিনি কোনও স্ক্যান না করে নিজের ইচ্ছায় এবং দায়িত্ব চিকিৎসা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এক ঘন্টা পর তীব্র ব্যথা, পেট ফোলা এবং ফ্যাকাশে চেহারা নিয়ে ডা. আজামি আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন। আলায়েডাইন জানান যে, হাসপাতাল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং স্ক্যান করার পরে দেখা গেছে যে, আজমির প্লীহা এবং যকৃতে তীব্র রক্তক্ষরণ হয়েছিল এবং পাশাপাশি প্রধান ধমনী ফেটে গেছে। তাকে জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করা হয়েছিল, তবে কিছু পরে আইসিইউতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট তিনি মারা যান।

আজামির চিকিত্সক ভাগ্নে আহমদ সুলাইমান মিডিয়াকে বলেছেন যে, হাসপাতাল যখন তাকে স্ক্যানের জন্য টাকা চেয়েছিল তখন তার চাচা বিরক্ত হয়েছিলেন এবং তাই তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে তিনি ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি।”

তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, হাসপাতালে তার আহত চাচাকে তাত্ক্ষণিকভাবে ভর্তি করা উচিত ছিল, বিশেষত এই কারণে যে গাড়িটি বেশ কয়েকবার উল্টে গেছে। এ ব্যাপারে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণারয়ে তদন্তের দাবি জানাবো।

সুলেমান বলেছিলেন যে, তার মামার নিজস্ব আর্থিক খারাপ থাকা অবস্থা সত্ত্বেও, তিনি সসবসময় দরিদ্রদের সহায়তা করেছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!