করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ৩ সপ্তাহের লকডাউনে লেবাননে বসবারত প্রায় দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কেউই ভাল নেই। কর্মহীন হয়ে প্রবাস জীবনে বন্দীময় মানবেতর জীবানযাপন করছে। একজন প্রবাসী নিজে যেমন বর্তমানে অর্ধাহারে অনাহারে থাকছে, ঠিক তেমনি দেশে থাকা তাঁর পরিবারটিও অর্থের অভাবে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
লেবাননে গত সাত মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট এবং সবশেষ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অনেক প্রবাসী তাদের চাকুরী ও বৈধতা হারিয়েছে। অর্থের অভাবে যাদের এখন দুবেলা খাবার জুটছে না।
বর্তমানে লেবানন প্রবাসীদের মাঝে অর্থের অভাবে যে হাহাকার চলছে সেটা কিন্তু একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী বা অতি আপনজন হিসেবে সহজেই অনুধাবন করতে পারি। প্রতিদিন হাজারো প্রবাসীরা ফোন করেন। তাদের কান্নার আওয়াজ হৃদয়ে আঘাত করে। সবার ধারনা যে বাবু ভাইয়ের সাথে কথা বললে যে কোন একটা সমাধানের পথ বের করবে। ইচ্ছে করে সবার পাশে দাঁড়িয়ে কম বা বেশি একটু হলেও সাহায্য করতে। কিন্তু কি করবো? সাধ আছে সাধ্য নেই। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।
আমার প্রবাস জীবনের বিগত ২৫ বছরে প্রবাসীদের এমন করুণ হাহাকার এর আগে আর কখনো দেখেনি। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। এক অদৃশ্য ভাইরাস প্রবাসে ও দেশে আমাদেরকে আতংকগ্রস্থ করে তুলেছে। একসাথে সবাই বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। সামান্য হলেও সাহায্য সহযোগিতা চাইছে।
আজ আল আমিন নামে এক ভাই ফোনে জানাল, ভাই ৪টা বিল্ডিংয়ে আমরা প্রায় অর্ধশতাধিক প্রবাসী বাস করি। ঘর ভাড়া দিতে পারছি না বলে মালিক বিল্ডিং খালি করতে বলেছে। এখন আমরা কোথায় যাব, কি করবো? আমাদের তো এই প্রবাসে আপনজন বলতে আর কেউ নাই। কার কাছে দুঃখের কথা তুলে ধরবো। বৈরুত দূতাবাস কি আমাদের কথা শুনবে? আপনি একটু স্যারকে বলে দেন না ভাই প্লিজ।
ভেবে পাচ্ছিলাম না কিভাবে তাদের সমবেদনা জানাবো। শেষে বললাম ভাই তোমারা সোমবারে বৈরুত দূতাবাসে স্যারের সাথে দেখা করে বিস্তারিত সমস্যা তুলে ধর, দেখ কি হয়। যে ভাবে পারি সেভাবেই প্রবাসীদের স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করি।
স্বান্তনা দেওয়া ও বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রবাসীদের সমস্যা তুলে ধরা ছাড়া তো আমি আর কিছুই করতে পারছি না। বড়ই কষ্ট লাগে। তবে স্বান্তনা পাই এই ভেবে যে, একজন সংবাদকর্মী হিসেবে অনবরত পরিশ্রম করে আমার প্রবাসীদের সমস্যাগুলো বিশ্ব মিডিয়াতে তুলে ধরছি।কেউ না কেউ হয়ত এসব অভাগা প্রবাসীদের চোখের জলের মূল্য দিবে।
ইতিমধ্যেই লেবাননের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন প্রবাসীদের নিকট থেকে চাঁদা তুলে নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। রাজধানী বৈরুতে বাস করা প্রবাসীরা সামান্য সহযোগিতা পেলেও বৈরুতের বাহিরে যারা রয়েছে তাদের কষ্ট বর্তমানে সীমাহীন। দেখার কেউ নেই। সবাই তাকিয়ে আছে বৈরুত দূতাবাসের দিকে, কবে দূতাবাস থেকে তাদের হাতে সাহায্য পৌঁছে দিবে।
আমি আমার প্রবাসী ভাইবোনদের বলবো, আমি আগে একজন সাধারন সীমিত আয়ের প্রবাসী, পরে একজন সংবাদকর্মী। আপনাদের আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা না করতে পারলেও বিশ্ব মিডিয়ার আপনাদের কষ্টের কথাগুলো প্রতিদিনই তুলে ধরছি ।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসহায় প্রবাসীদের খাদ্য সংকট নিরসনসহ না সহায়তার কথা মিডিয়ার দেশীয় মিডিয়ায় এসেছে । আমরা আশা করছি বৈরুত দূতাবাসও লেবাননপ্রবাসীদের অনতিবিলম্বে তেমন সহায়তা সরকার থেকে আদায় করবেন।
দূতাবাসই প্রবাসীদের অভিভাবক, শেষ ভরসা। আমাদের বিশ্বাস দূতাবাস এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।