লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যায় হাজী কামাল গ্রেপ্তার

লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম মূল হোতা কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। সোমবার (১ জুন) সকালে র‍্যাব-৩ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে রাজধানীর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

র‌্যাব বলছে, , লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ওই ঘটনায় তদন্তে মানবপাচারকারী হিসেবে কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালের নাম ওঠে আসে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাচারকারীচক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। জব্দ করা হয়েছে পাসপোর্ট। অভিযান চলমান রয়েছে।

সোমবার দুপুর দেড়টায় টিকাটুলি র‍্যাব-৩ কার‍্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়।

Travelion – Mobile

র‌্যাব বলছে, কামালের বিরুদ্ধে গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপে লোক পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। মানব পাচারকারী চক্রটি পদে পদে লোকদের জিম্মি করত এবং নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।

সুনির্দিষ্ট এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ কামালকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিবুল হাসান। সোমবার (১ জুন) র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা

রকিবুল হাসান বলেন, গ্রেফতার আসামি কামালকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এই অপরাধে জড়িত তিনি। সংঘবদ্ধ চক্রটি বিদেশি চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধভাবে বাংলদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে আসছে।

র‌্যাব সিও বলেন, গ্রেফতার হাজী কামাল (৫৫) এই কুখ্যাত দালাল চক্রের অন্যতম মূল হোতা। তিনি গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে লিবিয়াতে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশিকে পাঠিয়েছেন। লিবিয়া ছাড়াও সে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় অভিবাসন করিয়েছেন। এছাড়াও তিনি টাইলস কন্ট্রাক্টর । প্রচুর পরিমাণে টাইলস শ্রমিকের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। আর সেই সুযোগে তাদের প্রলুব্ধ করে পাচার করে দেন।

জিজ্ঞাসাবাদে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব আরও জানতে পারে, লিবিয়ায় টাইলস মিস্ত্রিদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব। এরকম প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এক লাখ টাকা ও পৌঁছানোর পর পরিবারের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নেওয়ার কথা বলতেন কামাল ও তার চক্রের সদস্যরা। এই প্রস্তাবে কেউ রাজি হলে পরে পাচারকারী দলের সদস্যরা ভিকটিমদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করত। সেই নির্যাতনের ভিডিও ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠানো হতো। এভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।

অবৈধ প্রক্রিয়ায় এভাবে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে গিয়ে অনেকেই সাগর পার হওয়ার সময় মারা যান। অনেকের স্থান হয় গহীন জঙ্গলে, সেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে তাদের দিন কাটে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গ্রেফতার হতে হয়।

গত ২৮ মে লিবিয়ার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের মিজদা শহরে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে আহত হয় আরও ১১ জন।বাংলাদেশিসহ ওই অভিবাসীদের মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জিম্মি করে রেখেছিল মানবপাচারকারী চক্র। এ নিয়ে এক পর‍্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে মারামারি হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। এতে এক মানবপাচারকারী নিহত হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে সেই মানবপাচারকারীর লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

আগের খবর :
লিবিয়াতেই দাফন হল ২৬ বাংলাদেশির
লিবিয়ায় নিহত ও আহত বাংলাদেশিদের পরিচয় মিলেছে
লিবিয়ায় ‘প্রতিহিংসার বশে’ ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা
লিবিয়ায় বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি
লিবিয়ার মানবপাচারকারী চক্রের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি ব্র্যাকের

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!