লিবিয়ায় বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি

লিবিয়ায় গুলি করে হত্যা করা ২৬ বাংলাদেশি প্রবাসীর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং পুরো ঘটনার তদন্তসহ এর সাথে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) ও লিবিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সেই সাথে লিবিয়ায় মানবপাচারে জড়িতদের সন্ধান এবং মানবপাচার ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আহত ১১ বাংলাদেশি এখন সম্পূর্ণ ভালো আছেন এবং তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত এবং তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিশদ বিবরণসহ নিহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা।

হাসপাতালে বেঁচে যাওয়া আহত বাংলাদেশিরা
হাসপাতালে বেঁচে যাওয়া আহত বাংলাদেশিরা

Travelion – Mobile

গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি হতে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিজদাহ শহরে কিছু মানবপাচারকারীর বন্দুক হামলায় কমপক্ষে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও এ ঘটনার খবর জানিয়ে দাবি করেছে, লিবিয়ার একটি পাচারকারী পরিবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ৩০ অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করেছে।

এ ঘটনার পর লিবিয়ার একটি পরিবারে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশির কাছ থেকে ফোনে ঘটনাটি জানতে পারে দূতাবাস।
আগের খবর : লিবিয়ায় ‘প্রতিহিংসার বশে’ ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, বেঁচে যাওয়া ওই বাংলাদেশির সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হলে তিনি একজন লিবিয়ানের আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন বলে জানান। তিনি দূতাবাসকে আরও জানান, ১৫ দিন আগে বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে মানবপাচারকারীরা এসব বাংলাদেশিকে ত্রিপোলিতে নিয়ে আসার পথে মোট ৩৮ বাংলাদেশি মিজদাহ শহরের নিকট লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর একদল দুষ্কৃতকারীর হাতে জিম্মি হন। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে জিম্মিকারীদের অমানবিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে অপহৃত ব্যক্তিদের হাতে মূল অপহরণকারী লিবিয়ান নিহত হন। এর প্রতিশোধ নিতে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিব চালায়। এতে আনুমানিক ২৬ বাংলাদেশি নিহত হয় এবং আরও ১১ বাংলাদেশি হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হন।

মন্ত্রী বলেন, মরদেহগুলো মিজদাহ হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আহতদের পরবর্তীতে দূতাবাসের সহায়তায় উন্নততর চিকিৎসার জন্য ত্রিপোলির বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে। গুরুতর আহত তিনজনের শরীর হতে গুলি বের করার জন্য অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি জানান, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণে দূতাবাসকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

আগের খবর : লিবিয়ার মানবপাচারকারী চক্রের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি ব্র্যাকের

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ ঘটনায় লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজদাহের সুরক্ষা বিভাগকে অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, মানবপাচারে জড়িতদের বিবরণ এবং লিবিয়ান সরকারের এ ঘটনায় নেয়া পদক্ষেপের বিস্তারিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে বাংলাদেশ দূতাবাস।

উল্লেখ্য, মিজদাহ শহরে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে এবং এ অঞ্চলটি দুটি শক্তিশালী পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। কিছু দিন আগে ত্রিপোলি ভিত্তিক এবং ইউএন সমর্থিত জিএনএ সরকার অঞ্চলটি দখল করে নিলেও জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব ভিত্তিক সরকারি বাহিনী দুই দিন আগেও শহরটিতে বোমাবর্ষণ করেছে। দুটি শক্তিশালী পক্ষ যুদ্ধরত থাকায় ওই এলাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক নয়।

এদিকে, অধিকাংশ দেশ তাদের দূতাবাস তিউনিসিয়াতে স্থানান্তর করলেও বাংলাদেশসহ মাত্র তিনটি দেশ প্রবাসীদের সেবা প্রদান করতে তাদের কার্যক্রম লিবিয়াতে অব্যাহত রেখেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!