রফিক হারিরি হত্যা : দোষীর খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার

আধুনিক লেবাননের রূপকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাফিক হারিরি হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত পলাতক সালিম জামিল আয়াশের সন্ধান দিতে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, সেলিম আয়েশের “অবস্থান বা সনাক্তকরণের দিকে পরিচালিত তথ্য” বা “কোনও মার্কিন ব্যক্তি বা মার্কিন সম্পত্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হতে তাকে বাধা দেওয়ার জন্য এমন তথ্যর জন্য এই অর্থ পুরষ্কার দেওয়া হবে।

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের আগস্টে নেদারল্যান্ডসে লেবাননের জন্য জাতিসংঘ সমর্থিত আন্তর্জাতিক আদালত সালিম জামিল আয়াশকে ২০০৫ সালে বৈরুতে রফিক হারিরি হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দোষী সাব্যস্ত করেন। এই মামলার চার অভিযুক্তের মধ্যে আয়াশকে হারিরির হত্যায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বাকি তিন অভিযুক্ত হাসান হাবিব মেরহি, হুসেইন হাসান ওনেইসি এবং আসাদ হাসান সাবরাকে খালাস দেয়া হয়।

পনের বছর আগে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরিকে হত্যার দায়ে, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় তোলা এই চার ব্যক্তি লেবাননের শিয়া হেজবোল্লাহ গোষ্ঠীর নিচু পর্যায়ের সদস্য। বিচার হয়েছে তাদের অনুপস্থিতিতে। তবে তারা ২০০৫ সালের ওই বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। সিরিয়া সরকারও তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। চারজন অভিযুক্ত এখন কোথায় আছেন তা অজ্ঞাত।

Travelion – Mobile

৫৭ বছর বয়েসী আয়াশ লেবাননে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে যেখানে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নসরাল্লাহ তাকে হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছেন। ট্রাইব্যুনাল বলেছে যে, ২০০০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লেবাননের রাজনীতিবিদদের উপর আরও তিনটি হামলার ঘটনায় আইয়্যাশকে বিচার করার চেষ্টা করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে যে, আইয়্যাশ মার্কিন সামরিক কর্মীদের ক্ষতি করার পরিকল্পনাও করেছে।

জাতিসংঘ সমর্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে রফিক হারিরির হত্যার ব্যাপারে রায় দিতে গিয়ে এক বিচারক বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে হেযবোল্লাহ গোষ্ঠীর নেতারা জড়িত ছিলেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিচারক আরও বলেছেন, ১৫ বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডে সিরিয়ান সরকার সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিল সেরকম প্রমাণও নেই।

সুন্নি মুসলিম ধনকুবে রফিক হারিরির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশ এবং উপসাগরীয় সুন্নি আরব দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল
সুন্নি মুসলিম ধনকুবে রফিক হারিরির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশ এবং উপসাগরীয় সুন্নি আরব দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল

২০০৫ সালে বৈরুতে যখন হামলা চালানো হয়, সেসময় লেবাননে সিরিয়ার ব্যাপক প্রভাবকে রফিক হারিরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিলেন। হারিরির গাড়িবহর যখন বৈরুতের সমুদ্রের সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন একটি ভ্যান ভর্তি বিস্ফোরক দিয়ে ওই বহরে হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ২২০ জন আহত হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন রফিক হারিরি এবং আরও ২১জন।

বৈরুতে এই হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিরিয়া প্রায় ৩০ বছর পর লেবানন থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এই হত্যাকাণ্ড ছিল লেবাননের জন্য একটা মোড়-ঘোরানো মুহূর্ত। কারণ ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর যে প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের উত্থান হয়, তা পরবর্তী বছরগুলোতে লেবাননের রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ওই ঘটনার পর যে সিরিয়া-বিরোধী, এবং পশ্চিমাপন্থী দলটি আত্মপ্রকাশ করে, তার নেতৃত্ব দেন মি. হারিরির ছেলে, সাদ হারিরি। তিনি তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করে কিন্তু এই সংগঠনটি লেবাননে রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী এবং সংসদে আসন ধারণ করে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পনের বছর আগে রফিক হারিরি যে লেবাননে আততায়ীর হামলায় নিহত হয়েছিলেন তার সাথে আজকের লেবাননের অনেক তফাত রয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী দেশ ত্যাগ করেছে অনেকদিন আগে। হিজবুল্লাহ এখন আগের থেকে অনেক শক্তিশালী, অনেক বড়। রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামরিক জীবনের সব স্তরে তাদের এখন উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।

গোষ্ঠীটির বিরোধীরা হয়ত মনে করতে পারে যে ২০০৫ এবং ২০২০র বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহর হাত ছিল, কিন্তু লেবাননে তাদের উপস্থিতি আজ এতটাই শক্তিশালী যে খুব কম মানুষই মনে করছে এই ট্রাইব্যুনালের রায় সেখানে কোনরকম প্রভাব ফেলবে। যে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে রফিক হারিরির মৃত্যুর জন্য অনেকে দায়ী করে থাকে, সেই হারিরির কনিষ্ঠ পুত্র সাদ হারিরি হিজবুল্লাহর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করেছেন। তিনি হিজবুল্লাহর সাথে জোট গঠন করে ইতোমধ্যেই দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি যদি আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তাহলে আবার তার জন্য হিজবুল্লাহর সমর্থন প্রয়োজন হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!