যুদ্ধের ‘সৌভাগ্যে’ করোনার ঝুঁকিমুক্ত লিবিয়া!

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ থেকে গণজমায়েত পরিহারের নির্দেশনা সত্ত্বেও লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির একটি ক্যাফে ভর্তি মানুষ। টিভি পর্দায় চলছে ইতালির সিরি এর জমজমাট ফুটবল ম্যাচ। ত্রিপলির বাসিন্দা মোয়ায়েদ আল মিসসাউই এবং তার বন্ধুরা আরো অনেকের মতো সেখানেই জড়ো হয়েছে। এখানে এলে যে কেউ ভুলে যাবে যে সারা বিশ্ব করোনার জ্বরে কাঁপছে।

গেল ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সারা দুনিয়ার ১০০ টিরও বেশি দেশ করোনা জ্বরে কেপে উঠলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া যেন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। দীর্ঘ বছরের যুদ্ধে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দেশটিকে করোনা গ্রাস করতে পারবে না এমনটিই বিশ্বাস এখানকার বাসিন্দাদের।

যারা এখানে বিপদের তোয়াক্কা না করে ফুটবল দেখছেন নির্ভয়ে তাদের জন্য ২০১১ সালের বিপ্লবের পর যে যুদ্ধাবস্থা এদেশে বিরাজ করছে তা ইতিবাচক ফলাফল বয়ে নিয়ে এসেছে। তারা মনে করেন দীর্ঘ অস্থিতিশীলতায় দেশটি পৃথিবীর কাছে একটি “না-যাওয়া”র দেশে পরিণত হয়েছে।

Travelion – Mobile

দেশটির রাজধানি ত্রিপোলিতে একটিমাত্র বিমানবন্দর আছে যা প্রায়ই বন্ধ থাকে। তাই এর সাথে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ তেমন একটা নেই। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি তাই তার প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে একেবারে আলাদা যেখানে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি সীমিত পর্যায়ে।

ক্যাফেতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মোয়ায়েদ বলেন, “আমরা লিবিয়াযতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকিমুক্ত, কারণ রাজধানী ত্রিপলীর ভূমি এবং আকাশ চারদিক থেকে অবরুদ্ধ। ”

ক্যাফের পর্দায় সমর্থকদের চোখ যেন আটকে গেছে। টেলিভিশনের স্ক্রীনে ভেসে উঠা ফুটবল ম্যাচটির পিছনের দৃশ্যে, স্টেডিয়ামটি পুরো দর্শকশূণ্য। তাই শুনশান মাঠে মাঝে মধ্যে দেয়া রেফারির বাঁশি আর কোচদের চিৎকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রতিধ্বনি তুলছে। তবে মাঠের শূন্যতা ছাপিয়ে সব উত্তেজনা যেন ক্যাফের হৈ-হট্টগোলে ধরা দিয়েছে। তাই খেলার উত্তাপটা মাঠ থেকে যেন ক্যাফেতেই বেশি। যুদ্ধের 'সৌভাগ্যে' করোনার ঝুঁকিমুক্ত লিবিয়া! 1
ক্যাফের এই দৃশ্যটি ইতালিতে সব ধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট নিষিদ্ধের আগের একটি ঘটনা। প্রসঙ্গত ৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ ঘোষণা করেছে ইতালি। যার মধ্যে সিরি এ লীগও রয়েছে।

দিয়া আবদেল করিম, ইতালীর ফুটবলের একজন ভক্ত। পেশায় দন্ত চিকিৎসক এই তরুণ বলেন, “এমন সময়ে লিবিয়া খুব একটা মাথাব্যাথা না নিয়েও থাকতে পারে। মানুষের মধ্যে এনিয়ে ভয় ও আতঙ্ক দানা না বাঁধাটাই শ্রেয়। তাই আমাদের প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ না কনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ গ্রহণ করা।

লিবিয়ার সরকার জানিয়েছে,এখন পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯ এর একটি ঘটনাও চিহিৃত হয়নি যদিও ভূমধ্যসাগরের অপর প্রান্তে দেশটি ইতালির মুখোমুখি।

লিবিয়ার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানিয়েছে, এই ভাইরাস দেশে অনুপ্রবেশ যদি করে তবে তা নিমূল করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । তারা জানায়, ভাইরাসটি আশপাশের দেশে ছড়িয়ে লিবিয়াকে ঘিরে আছে। তাই যৌথ সীমান্তগুলোতে নজরদারি রাখা হচ্ছে। যদিও এর মধ্যে মিশর, তিউনিসিয়া এবং আলজেরিয়ার মতো প্রতিবেশীরা এই ভাইরাসে আক্রান্তের কথা জানিয়েছে লিবিয়া কোন আক্রান্ত সনাক্ত করতে পারেনি।

দেশটিতে ধারাবাহিক অস্থিতিশীলতা থাকায় ২০১৪ সালের মধ্যে বেশিরভাগ বিদেশি দূতাবাস বন্ধ করা হয়ে এবং সেসব দেশের নাগরিকদের সেখানে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়া হয়।

নয় বছরের যুদ্ধ শত সহস্র জীবন ঝরে যাওয়া দেশটি থেকে অন্যত্র চলে গেছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। তাই অনেক লিবিয়ান ভাইরাসের এই ঘটনাকে ক্যাফের মানুষদের মত ইতিবাচকভাবে নিতে পারছেন না। তাদের মধ্যে এই ভাইরাস নিয়ে আছে আতঙ্ক আর ভীতি। সে কারণে তাদের মধ্যে অনেকেই এরমধ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিতে ছুটছেন ঔষুধের দোকানে।

একটি মেডিক্যাল সামগ্রী আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান মউনির আল হেজেল বলেন “হ্যান্ড ওয়াইপস, মাস্ক এবং গ্লাভসের মতো স্যানিটারি পণ্যের মজুদ ফার্মেসিগুলোতে কমে আসছে। তাই এ সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এসবের উচ্চমূল্য হাঁকাচ্ছে। ”

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!