যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সামিল বাংলাদেশিরাও

যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ চলাকালে নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, লসএঞ্জেলেস, শিকাগো, মায়ামি-ডেডকাউন্টি, আটলান্টা, ডালাস, ক্লিভল্যান্ড, মিনিয়াপলিস, ডালাস, ডেনভার, লুইসভিলে, ফিনিক্স, র‌্যালি, সানফ্রান্সিসকোসহ বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়।

আগের তিন রাতের মতো বিক্ষোভের মেজাজ ততটা উচ্ছৃঙ্খলতায় পূর্ণ ছিল না। সম্ভবত: চার পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধেই নতুন অভিযোগপত্র দাখিলে আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কারফিউ ভঙ্গ করে রাজপথে অবস্থানের জন্যে এ রাতেও বেশ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারিকে নিউইয়র্কের পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বর্ণবাদবিরোধী এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। বিভিন্ন স্টেটে চলা এসব আন্দোলনে কেবল সমর্থনই নয়, অনেকে এসব সমাবেশে অংশ নিয়ে রীতিমতো বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। বিভিন্ন স্টেটে এমন বিক্ষোভে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে দেখা গেছে। আন্দোলনে সহায়তা করেছেন অনেকে।

Travelion – Mobile

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের সামনের বিক্ষোভে আরও অনেকের সাথে ছিলেন ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি তরুনী ফামি মুমতাহিনা। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিয়ে সবার জন্যে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জোড়ালো দাবি জানান ফামি মুমতাহিনা। দাঙ্গা পুলিশের সামনে ‘এর পরে কি আমি’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থেকে বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণে লিপ্ত পুলিশের নিন্দা করেন।

তেমনি একজন ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর তিশিয়ান মাহমুদ। প্রিমেডিকেল বায়োলজির এই শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিয়ে সবার জন্যে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জোড়ালো দাবি জানান।

তিশিয়ান মাহমুদের বাবা খ্যাতিমান লেখক ও চিকিৎসক ডা. সেজান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের যৌবনে নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির দাবি আন্দোলন করেছি। এ নিয়ে গান লিখেছি, গেয়েছি। তাই গণমানুষের আন্দোলনে যখন নিজের সন্তান যোগ দিয়েছে, বাধা দেই। কেবল বলেছি, বাবা করোনার সময়টায় একটু সাবধানে থেকো। যেন রোগের সংক্রমণ না হয়’।

তবে এই আন্দোলন চলার সময় বিভিন্ন স্থানে লুটতরাজের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশিরাও ন্যায়সঙ্গত দাবি ও এই আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন জানালেও, লুটতরাজের সমালোচনা করে চলেছেন।

নিউ ইয়র্কের সংস্কৃতিকর্মী গোপাল সান্যাল বলেছেন,’অধিকার আদায়ে আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন থাকলেও নজীরবিহীন লুটপাটে কলুষিত আন্দোলন। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হোক’।

চিকিৎসক ডা. সেজান মাহমুদ বলেন, ‘একজন পেশাজীবী হিসেবে গত বিশ বছর ধরে বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এদেশেও কাজ করছি। তবে অবশ্যই বিক্ষোভের সুযোগে যারা লুটতরাজ করেছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি’।

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আমেরিকায় লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশের ঘটনাবলিকে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের পথ-পরিক্রমা হিসেবে অভিহিত করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, এবারের এই আন্দোলনের বিশেষত্ব হচ্ছে বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণের বিরুদ্ধে সকল বর্ণ-ধর্ম-গোত্রের মানুষেরা জেগে উঠেছে। রাস্তায় উঠা আওয়াজকে সযত্নে লালন করতে হবে সামনের দিনগুলোর অন্যায়-অবিচার রুখে দিতেও।

গত সপ্তাহে মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টিরও বেশি শহরে জারি করা কারফিউর মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৯ জুন ফ্লয়েডের শেষকৃত্যানুষ্ঠান পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!