যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭ বছর পর নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ বছর বয়সী লিসা মন্টেগোমারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তাঁকে কারাগারে প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের তেরে হাউতে কারাগারে ছিলেন। বিবিসির খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
লিসার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০০৪ সালে মিজৌরিতে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে গলা টিপে হত্যা করেন এবং ওই নারীর পেট কেটে গর্ভের সন্তানটিকে অপহরণ করেন।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই দফা তা স্থগিত হয়। প্রথমবার তাঁর কৌঁসুলিরা করোনায় আক্রান্ত বলে নিম্ন আদালতে আবেদন জানানোর পর বিচারক মৃত্যুদণ্ডের তারিখ স্থগিত করেন। তবে ডিসি সার্কিট কোর্টের আপিল বিভাগের তিন বিচারক ১ জানুয়ারি রুল জারি করেন, নিম্ন আদালতের বিচারকের মৃত্যুদণ্ডের তারিখ স্থগিত করা ভুল ছিল। একই সঙ্গে আপিল বিভাগ চলতি মাসে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু গত সোমবার ইন্ডিয়ানার একজন বিচারক লিসার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করেন। তাঁর আইনজীবী এক আবেদনে বলেন, মস্তিস্কে সমস্যা নিয়ে লিসার জন্ম হয় এবং মানসিকভাবে তিনি খুবই অসুস্থ।
লিসার পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, লিসা শৈশবে বাবার কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হন এবং মা তাঁকে পাচার করে দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ইতিহাসে প্রায় ৬৭ বছর পর কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীর বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় একজন নারী লিসার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লিসার মুখের মাস্কটি আলতো করে সরিয়ে তাঁর শেষ কোনো ইচ্ছা আছে কি না, জানতে চান ওই নারী। লিসা জবাবে ‘না’ বলে আর কিছু বলেননি।
লিসার আইনজীবী কেলি হেনরি জানান, স্থানীয় সময় রাত দেড়টার দিকে লিসাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, ‘যাঁরাই এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের লজ্জা হওয়া উচিত। একজন ক্ষতিগ্রস্ত ও মানসিক অসুস্থ নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা থেকে সরকার কিছুতেই পিছু হটল না। লিসা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো অপরাধ করেননি।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ কয়েক মাসে তাঁর প্রশাসন ১০টি ফেডারেল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের ইতিহাসে একক বছরে এত বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।
সর্বশেষ ১৯৫৩ সালে বনি ব্রাউন হিডি নামের এক নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তার আগে একই বছর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে বহুল আলোচিত ইথেল রোসেনবার্গ নামের আরেক নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।