যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা
যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষণের মামলায় পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমুকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । অন্যদিকে তার কোন দায়-দায়িত্ব নিতে রাজি নয় পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগ। যুবলীগের দাবি, হিমু ছাত্রজীবনে দেশে ইসলামি ছাত্র শিবিরের নেতা ছিলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলাডেলফিয়ায় বসবাস করা হিমুকে রোববার পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। সোমবার স্থানীয় আদালত তাকে আগামী ১৩ জানুয়ারি কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে হাজিরার শর্তে জামিন (সুপারভাইজ রিলিজ)দিয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, রোববার (১ ডিসেম্বর) ভোর রাতে কুইন্সে ১৪৪-১৫ লিবার্টি অ্যাভিনিউতে অবস্থিত কমফোর্ট ইন হোটেলে ৩৪ বছর বয়সী এক নারীকে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন করেছেন হিমু। ফিলাডেলফিয়া থেকে ২৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এসে ওই হোটেলে রুম ভাড়া করেন হিমু। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা ওই নারী দুই সন্তানের মা।
ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে হিমু বলেন, ‘সে ব্যাংকে চাকরি করলেও মাঝেমধ্যেই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। অর্গানাইজারের দায়িত্বও পালন করেন। ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে আমার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক হয়েছে।
ওই নারীকে বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে দাবি করে হিম আরও বলেন, আমাদের দুজনের সম্পর্কের কথা ওর পরিবারের সবাই জানে। ফিলাডেলফিয়ায় আমার বাসায়ও গেছে সে। তার দুই সন্তানের সঙ্গেও আমার সুন্দর সম্পর্ক। কয়েক মাস আগে সে আমার সাথে জাতিসংঘে গেছে। এরও আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়ে গেছি।
মামলা অভিযোগ প্রসঙ্গে হিমু বলেন, ঐদিন রাত ২টার সময় আরো দু’জনের সাথে সে আমার হোটেলে (কমফোর্ট ইন) আসে। সম্পূর্ণ মাতাল থাকায় আমি সঙ্গীদের দু’জনকে অনুরোধ করি তাকে বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু ওরা তা শোনেনি। এ অবস্থায় সে আমার হোটেল কক্ষে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে আমিও অসুস্থবোধ করলে গাড়িতে করে তাকে তার বাসায় স্বামী-সন্তানের কাছে দিয়ে এসেছি। পরদিন সন্ধ্যায় সে পুনরায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে হোটেলে এসেছিল। সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও কেন সে পুলিশে এমন জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছে তা বুঝতে পারছি না। হোটেলের সিসিটিভি পরীক্ষা করলেই সবকিছু পানির মতো পরিষ্কার হবে।’
অভিযোগকারি নারীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, হিমু এতটাই মাতাল ছিলেন যে, প্রেমিকার সাথে আচরণের শালীনতা ছাড়িয়ে যান এবং ধর্ষণের পাশাপাশি অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন। আরো জানা গেছে, স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর্যায়ে থাকায় হিমু তার কথিত ’বেস্ট ফ্রেন্ডকে’ বিয়ের অঙ্গীকার করেন। এমনকি কোনো কোনো স্থানে তাকে স্ত্রী হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন।
‘হিমু কখনোই আওয়ামী লীগ কিংবা যুবলীগের কর্মী-সংগঠক ছিলেন না’ এমন দাবি করেছেন পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের। তিনি বলেন,’তাকে আমরা সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দিতে বাধ্য হয়েছি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নির্দেশে।’
‘শনিবার ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পেনসিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে হিমু প্রসঙ্গ উত্থাপিত হবে। স্বেচ্ছায় সে পদত্যাগ না করলে আমরা তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেবো’,যােগ করে সভাপতি আবু তাহের।
হিমু বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সন্তান লুৎফর রহমান হিমু দৌলতপুর বিএল কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন- এমন দাবি পেনসিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মো. আলিমউদ্দিনের।
তিনি বলেন, সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে হিমু বছরখানেক আগে হিমু আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন। সে সময় থেকেই আমি প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। ফেসবুকে আমি এ নিয়ে অনেক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির বোধোদয় হয়নি। এখন ব্যক্তি হিমুর জঘন্য আচরণের দায় নিতে হচ্ছে দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে।’
অভিযোগ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “হিমু পেনসিলভেনিয়া স্টেট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সেটি ওই স্টেটের কর্মকর্তাদের ব্যাপার।”
এদিকে ধর্ষণের মামলার খবর প্রকাশের পর ফিলাডেলফিয়া অঞ্চলের অনেক যুবক অভিযোগ তুলেছেন যে, তারাও হিমু কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন।
ঔ যুবকদের সূত্রে জানা গেছে, ‘ব্রিটস গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিমু জাতিসংঘের কনফারেন্স ছাড়াও নানা জায়গায় যাতায়াত করেন। এছাড়াও ফিলাডেলফিয়ায় একটি স্টোর ভাড়া নিয়ে গার্মেন্টসের ব্যবসার সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। যদিও কখনোই সে ব্যবসা তার চালু হয়নি।