যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় সংবিধান দিবস উদযাপন
দূতাবাস, স্থায়ী মিশন, কনস্যুলেট
যুক্তরাষ্ট্রে যথাযথ মর্যাদয় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ নভেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আলাদা অনুষ্ঠান করেছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দিবসের আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান জাতীয় সংবিধান দিবসকে বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার মাত্র ১১ মাসের মধ্যে সদ্য স্বাধীন জাতিকে এর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সংবিধান উপহার দেন।
সংবিধান দিবস উদযাপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে সংবিধান পাঠ ও এর চর্চা আরও বৃদ্ধি পাবে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ, এবং সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে যা বাংলাদেশের সংবিধানের মর্যাদা, তাৎপর্য ও পবিত্রতাকে আরও সমুন্নত রাখবে।
কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল-১) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন মিনিস্টার (ইকোনোমিক) মো. মেহেদি হাসান। এরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পড়ে শোনান মিনিস্টার (কনস্যুলার) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও কাউন্সেলর শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি।
জাতীয় সংবিধান দিবস উদযাপন উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনাপর্বে মূল বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত।
স্থায়ী প্রতিনিধি তাঁর বক্তব্যে সংবিধান প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন এবং পবিত্র দলিল। এর মর্যাদা সমুন্নত রাখা আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব’।
তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর কিভাবে মাত্র ১১ মাসের মধ্যে বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল-সংবিধান রচিত হলো সেই ইতিহাস।
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে জাতির পিতা যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তার গুরুত্ব উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি, সেদিন তিনি বাঙালি জাতির জন্য প্রথমবারের মতো একটি শাসনতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে সদ্য স্বাধীন একটি দেশের সংবিধান রচনা করার ঘটনা বিশ্বে বিরল’।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিকত্ব এবং এর বিভিন্ন ভাগের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন উপস্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন, ইকোনমিক মিনিস্টার মাহমুদুল হাসান, ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার ছাদেকুজ্জামান।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান শুধু আমাদের সর্বোচ্চ আইনই নয় এতে দেশের সীমারেখা, প্রশাসনিক ভিত্তি, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগসহ রাষ্ট্রপরিচালনার সংশ্লিষ্ট সকল দিকই তুলে ধরা হয়েছে, যা পূর্ণাঙ্গ এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি রাষ্ট্রীয় দলিল।
স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটিতে মিশনের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে দূতালয় প্রধান ফাহমিদ ফারহান। আলোচনা সভার শুরুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পড়ে শোনানো হয়।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে জাতীয় সংবিধান দিবসের বিশেষ আলোচনা সভার শুরুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পড়ে শোনানো হয়।
কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার জাতিকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি লিখিত সংবিধান উপহার দেন যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
তিনি ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে যার যার অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান।
আরও পড়তে পারেন :
নিউইয়র্ক মাতলো লালন উৎসবে
যুক্তরাষ্ট্রে উদীচীর ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মাননা