যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো অংশীদার : পিটার হাস

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, দুই দেশের মধ্যেকার অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ কয়েক দশক ধরে মার্কিন অংশীদারিত্বের ওপর নির্ভর করতে পারে। স্বাধীনতা লাভের পর উল্লেখযোগ্য প্রথম পাঁচ দশকের মধ্য দিয়ে আমি মনে করি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো কোনো অংশীদার খুঁজে পায়নি। আমরা আগামী ৫০ বছরেও সেই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

আজ সোমবার বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি একথা বলেন।

হাস উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের জনগণ উভয়ের একই লক্ষ্য: একটি গতিশীল, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ গণতন্ত্র, বিচারিক জবাবদিহিতা এবং সবার জন্য মৌলিক মানবাধিকার। আমাদের দুটি দেশ পরস্পরের মিত্র। বাংলাদেশ অভিন্ন লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য কয়েক দশক ধরে আমাদের অংশীদারিত্বের ওপর নির্ভর করতে পারে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর বিস্ময়কর।

Travelion – Mobile

রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলির অন্ধকার থেকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যখন এর অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিল এবং দেশের অগণিত সেরা মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। অনেকের ধারণা ছিল বাংলাদেশ কখনোই নিজের উদ্যোগে উন্নতি করতে পারবে না এবং চিরকাল অন্যের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল থাকবে। সেসব দিন অনেক আগেই চলে গেছে। আজ বাংলাদেশ একটি সাফল্যের নজির হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।

তিনি বাংলাদেশি জনগণের প্রয়াস, সমস্যা কাটিয়ে ওঠার বিচক্ষণতা এবং উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করেন। কারণ দেশটি স্বাস্থ্য ও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করেছে, ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়ন অর্জন করেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হবে। বাংলাদেশ এখন তার প্রতিবেশীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার নগদ অর্থ সঙ্কটের সময় সহায়তার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং মালদ্বীপকে কভিড সহায়তা প্রদান করেছে। উন্নয়ন সহায়তা এখনও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হলেও সাহায্য নয় বরং বাণিজ্যের ভিত্তিতে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রম বিকাশমান।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। আরো বেশি সংখ্যক আমেরিকান কর্পোরেশন এখন তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের মধ্যে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথা স্মরণ করে হাস বলেন, ১৯৭২ সালের এই তারিখে আমরা প্রথম বন্ধুত্বের হাত ধরেছিলাম। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৬১ মিলিয়নেরও বেশি কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে ভ্যাকসিন পেয়েছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর আহ্বান জানানোর জন্য একটি সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের একটি অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা রয়েছে কারণ উভয় দেশই স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে, গণতন্ত্রের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং তারা শিখেছে যে গণতন্ত্র একটি প্রক্রিয়া।

তিনি উল্লেখ করেন, মানুষ সহিংসতা ও বর্ণবাদের অবর্ণনীয় ক্রিয়াকলাপ প্রত্যক্ষ করেছে। আমেরিকানরা জনগণকে জবাবদিহি করতে এবং প্রকৃত পরিবর্তন কার্যকর করার প্রচেষ্টায় কখনও কখনও শোরগোলের মধ্যেও এসব সমস্যা প্রকাশ্যে, সততার সাথে মোকাবেলা করেছে। বাংলাদেশে অনেকেই একই কাজ করছে, এবং আমরা তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করি।

সূত্র : বাসস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!