যাত্রীর মোবাইলের ব্যাটারি বিস্ফোরণে উড়োজাহাজে আগুন
মোবাইল ব্যাটারি থেকে হঠাৎ আগুন। ঝলসে গেছে এক যাত্রীর শরীরের ২০ শতাংশ। তাই হো চি মিন সিটিতে জরুরী অবতরণ করতে হয়েছে এয়ার এশিয়ার এয়ারবাস এ ৩২০-২৯৯ এন উড়োজাহাজ। বড়দিনে এমন ঘটনা ঘটেছে মালেয়শিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে হংকগামী এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে ।
এভিয়েশন হেরাল্ডে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হংকংয়ের পথে এয়ার এশিয়ার এয়ারবাসটি ৩৫০০০ ফুট উচ্চতায় এবং হো চি মিন সিটি থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে অবস্থান করছিল তখনই এক যাত্রীর মোবাইলের ব্যাকআপ ব্যাটারি বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটায়।
এতে ঝলসে যায় ঔ যাত্রীর বাম পাশের হাত-পা, কব্জিসহ প্রায় ২০ শতাংশ অংশ। তাৎক্ষণিকভাবে কেবিন ক্ররা আগুন নিভিয়ে ব্যাটারিটিকে একটি নিরাপদ পাত্রে সরিয়ে রাখে। ঝলসে যাওয়া যাত্রীটিকে দেওয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসা।
এ ঘটনার কারণে উড়োজাহাজটি যাত্রাপথ বদলে হো চিন মিন সিটির তান নাট আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে জরুরী অবতরণ করে। আহত যাত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সেখানে একদিন চিকিৎসা নেয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ১৭ ঘন্টা বিলম্বের পর আরেকটি এ ৩২০-২০০ এন এয়ারবাস বিকল্প উড়োজাহাজ হিসেবে যাত্রীদের নিয়ে ভিয়েতনাম থেকে হংকংয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজটি কিছুটা মেরামতের পর প্রায় ২০ ঘন্টা পর আবার আকাশে ডানা মেলে। ভিয়েতনামের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্ত করছে।
যাত্রীদের একটি ব্যাকআপ ফোন চার্জার বহন করার অনুমতি দেওয়া হয় তাদের ব্যাগেজে ,তবে হাতের ব্যাগে নয়। কোনও উড়োজাহাজ যখন যাত্রা শুরু করে বা অবতরণ করে, ক্রুরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈদ্যুতিন ডিভাইসগুলি ব্যবহার না করার স্মরণ করিয়ে দেয়।
মোবাইল ফোনের ব্যাটারি থেকে আগুন লাগার এমন ঘটনা খুবই বিরল তবে এই ঘটনাটি ব্যাটারির উত্তপ্ত হয়ে যাওয়া থেকে আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
লিথিয়াম অণুর ব্যাটারিগুলোতে এক ধরনের তাপমাত্রা রয়েছে যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উত্তপ্ত হওয়ার মত অবস্থায় যেতে পারে। একটি বিশেষ অবস্থায় ব্যাটারির অণুগুলো তাপ পেয়ে উত্তপ্ত হয়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা আগুন লেগে নয়তো বিস্ফোরিত হয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে
।
এছাড়া ব্যাটারিগুলোতে সাধারণত অক্সিজেনের একটি পাতলা আবরণ আর লিথিয়ামের একটি পাতলা অংশ ইলেকট্রোলাইট দ্বারা আলাদা করে জোড়া দেয়া থাকে। এটি যদি কোনভাবে একটি আরেকটির সাথে ঘষা লাগে তাও আগুন লেগে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অধিকাংশ মোবাইল ফোন বেশি উত্তপ্ত হয়ে গেলে নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায় এবং বেশিরভাগ লিথিয়াম-অণুর ব্যাটারি এই আগুন লাগার ঝুঁকি মাথায় রেখে নিরাপদ করে তৈরি করা। তবে এ কথা মাথায় রেখে এসব ব্যাটারি বাকা করা কিংবা এসব নিয়ে মজা করার বাজিতে না যাওয়ায় শ্রেয়।
গরমের দিনে আপনার গাড়িতে কোন মোবাইলকে অতিরিক্ত উত্তপ্ত হতে দেয়া কিংবা মোবাইলের ব্যাটারি বেশিক্ষণ চার্জে দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় যদিও অধিকাংশ সময় আগুন লাগার মত ঝুঁকি তৈরির বহু আগেই ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজ থামিয়ে দেয়।
যদিও, দূর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাটারি বা ফোনে যদি নির্মাণগত ত্রুটি থাকে তবে তা নিয়ে আসলে তেমন কিছুই করার থাকেনা যেমনটি ঘটেছে এয়ার এশিয়ার এই বিমানে। লিথিয়াম একটি পরিবর্তনশীল ধাতু যা বিদ্যুৎ পরিবহন ও ধারণের জন্য প্রয়োজনীয়। যদিও এটি বিপদ ডেকে আনতে পারে যখন তা অন্য ধাতুর সংস্পর্শে আসে।
প্রতিবছর লাখ লাখ মোবাইল ফোন তৈরি হয়। এসবে আগুন লাগা বা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটনা খুবই বিরল। এক্ষেত্রে এয়ার এশিয়ার বিমানযাত্রীর ফোনের ব্যাটারিতে আসলে কী কারণে আগুন লাগল তা আরো বিস্তারিত খবরাখবরের পর বেরিয়ে আসবে।