যাত্রীদের অগোচরে ফ্লাইট টিকিট রিফান্ড করে টাকা তুলে নিত চক্রটি
বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেল কনসালট্যান্সি নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মালিককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁর নাম মাহবুবুর রশিদ (৫১)।
ডিবি বলছে, অনলাইনে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে উড়োজাহাজের ই–টিকিট বিক্রি করতেন মাহবুবুর। যাত্রার কিছুদিন আগে ওই যাত্রীকে না জানিয়ে বিক্রি করা টিকিট রিফান্ড করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। পরে যাত্রীরা নির্ধারিত তারিখে বিমানবন্দরে গিয়ে জানতেন তাঁদের টিকিট বাতিল হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে চক্রের মূল হোতা মাহবুবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটি ২০১৫ সাল থেকে ওমরাহ হজ ও হজকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা, পড়তে যাওয়া ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়াদের সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা করত চক্রটি।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মাহবুবুরের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র মানুষের সঙ্গে এই প্রতারণা করে আসছিল। চক্রের সদস্য জাহাঙ্গীর যাত্রী সংগ্রহ, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় করতেন। অর্থ গ্রহণ ও বণ্টনের কাজ করতেন।
পুলিশ জানায়, মাহবুবুরের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা রাজধানীর ভাটারা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলাবাগান নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলা করেছেন। পুরোনো আরও তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারের সময় মাহবুবুরের কাছে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ৮১টি ভুয়া টিকিট, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন, দুটি কম্পিউটার, একটি কালো রঙের জিপ গাড়ি, বিভিন্ন ব্যাংকের ১২টি চেক ও এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
প্রতারণা করে আসছিল জানিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গত ২৬ মার্চ সাইদুর রহমান নামের একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রতারক মাহবুবুরের পরিচয় হয়। তিনি এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেল কনসালট্যান্সি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও বলে পরিচয় দেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রি করেন বলে সাইদুরকে বলেছিলেন মাহবুবুর। এরপর সাইদুর তাঁর পরিচিত পাঁচজনের মাস্কট, রিয়াদ ও টরন্টোর বিমানের টিকিট লাগবে বলে জানান।
পাঁচজনের টিকিট বাবদ মাহবুবুরকে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন সাইদুর। রিয়াদের যাত্রী গত ২৮ মার্চ বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেন তাঁর টিকিট বাতিল হয়ে গেছে। এজেন্সি টাকা রিফান্ড করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানতে পারেন সাইদুর। পরে সাইদুর যোগাযোগ করলে পরে আবার দুটি টিকিট ইস্যু করেন মাহবুবুর। তবে যাত্রার দিনে সাইদুর জানতে পারেন এই টিকিট দুটিও রিফান্ডেড। পরে টরন্টোর টিকিট ইস্যু না করেই মাহবুবুর উর রশিদ অফিস গুটিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যান।
প্রতারক মাহবুবুর বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে বিভিন্ন দেশে গমনাগমন, ওমরাহ হজ পালন, সিঙ্গেল টিকিট, আপ-ডাউন টিকিট, পরিবারের সদস্যদের জন্য বিমানের টিকিট কাটার বিজ্ঞাপন দিতেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, কোনো বিদেশগামী যাত্রীর উড়োজাহাজের টিকিটের প্রয়োজন হলে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে মাহবুবুর পাসপোর্টের ছবি নিয়ে নিতেন। এরপর দুবাইয়ে বাংলাদেশি নাগরিক সাদের মাধ্যমে দুবাই থেকে ও পাকিস্তানের করাচির আল-গাফফার ট্রাভেলস, আনোয়ার সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড, জে এ এস ট্রাভেলস, ভাওয়ালপুর এলাকার ফ্লাই-লিংক ট্রাভেলস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করতেন। এই টিকিট যাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে এবং ই-মেইলে পাঠিয়ে টাকা নিয়ে নিতেন।
ডিবি জানায়, ২০১৫ সালে কানাডায় লোক পাঠানোর কথা বলে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের ঘটনায় মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি থানায় প্রতারক মাহবুবুর উর রশিদ বিরুদ্ধে দুটি মানব পাচার মামলা হয়। সেই সময় তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল প্ল্যানেট ওভারসিজ। পরে তিনি উড়োজাহাজের টিকিট প্রতারণা শুরু করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতারণা কাজের জন্য এখন পর্যন্ত একাধিকবার অফিস পরিবর্তন করেছেন তিনি।
২০১৫ সালে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায়, ২০১৮ সালে কারওয়ান বাজারে, ২০২১ সালে এলিফ্যান্ট রোডে এবং সর্বশেষ বসুন্ধরা এলাকায় তাঁর অফিস স্থাপন করেন।