মিশরের ইসলামিক ঐতিহ্য মেসেহারাতি!
দেশে মসজিদ থেকে সেহরি খেতে ডাকাডাকি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ ও বিভিন্ন ইসলামিক বক্তারাও এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে মাঠ বেশ সরগরম করে রেখেছেন।
মিশরেও সেহরিতে রোজাদারদের জাগিয়ে দেওয়ার চিরায়ত মুসলিম সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দেশটির রাস্তা ঘাটে ‘মেসেহারাতি’ নামের একদল মানুষের দেখা মেলে।
তাঁরা সেহরি খাওয়ার সময় হলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঢোল বাজিয়ে প্রতিটি বাসার নিছে গিয়ে বাচ্চাদের নাম ধরে ডাকতে থাকে, জাগো, ঘুম থেকে জাগো, সেহরি খাওয়ার সময় হয়েছে, আগামীকাল এর উদ্দেশ্য রোজা রাখ, ভোর হয়ে আসছে, জাগো… ।
আল-মাসেহরাতি শব্দটি সুহুর শব্দ থেকে এসেছে, আর আল-মুসার হল এমন একটি কাজ যা একজন ব্যক্তি মুসলমানদেরকে সেহরির সময় ও রোযা রাখার প্রস্তুতি শুরু করার জন্য আহ্বান জানিয়ে ডেকে থাকেন।
জানা যায়, ইসলামী ইতিহাসের সূচনা থেকেই ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বিলাল-বিন -রাবাহ (রা:), ইবনে উম্মে কুলসুম (রা:)-এর সাথে ফজরের নামাযের আগে বের হতেন এবং মানুষকে সেহরী খাওয়ার জন্য জাগিয়ে তুলতেন এবং দ্বিতীয় বার ডেকে মানুষকে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলতেন।
মিশরে আল-মাসেহরাতি প্রথা শুরু হয় ৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে। তখন এক ব্যক্তি সেহরির আগে দেশটির প্রাচীন রাজধানী ফুসতাতের আল-আসকার শহর থেকে আমর ইবনে আল-আস মসজিদে যেতেন এবং মানুষকে সেহরির জন্য ডাকতেন।
ফাতেমীয় যুগে তৎকালীন প্রশাসন লোকজনকে তারাবিহ নামাজের পরে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সৈন্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে মুসলমানদেরকে ডেকে বলতেন, হে আল্লাহর বান্দারা, ঘুম থেকে জাগোন, সেহরি খাওয়ার সময় হয়েছে …… এবং যতক্ষণ না একজন লোক তাদের ডাকে সাড়া দিতেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের দরজায় কড়া নাড়তেন। আর যে সৈন্যটি এই ডাকার কাজটি করতেন তাকে বলা হতো “আল-মেসেহরাতি”।
১২৭৯ থেকে ১২৯০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে মামলুক সুলতান আল-নাসির মুহাম্মাদ বিন কালাউনের সময় থেকে আল-মাসেহরাতিরা ঢোল-তবলা বাজিয়ে, কবিতা, গল্প ও গজল গেয়ে রোজাদারদের সেহরীতে ডাকার প্রচলন শুরু করেন এবং আজও চলছে সেহরিতে জাগিয়ে দেওয়ার চিরায়ত মুসলিম প্রচলন মিশর তথা মধ্যপ্রাচ্যে।