মায়ানমারে আর যাবে না বাংলাদেশ বিমান

সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিমানের শেষ ফ্লাইটটি ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে মায়ানমারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যাত্রী সংকটে পড়ে একটানা প্রায় ৬ বছর চলার পর এই রুটে উড়াল বন্ধ করলো রাষ্টায়ত্ব বাংলাদেশ বিমান।

সরাসরি ফ্লাইট চালু থাকায় ঢাকা-ইয়াঙ্গুন যেতে সময় লাগতো মাত্র সোয়া দুই ঘন্টা। ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি যাত্রীদের এখন থেকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বা সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর দিয়ে ট্রানজিট হয়ে মায়ানমার যেতে হবে। এতে কমপক্ষে সাড়ে চার ঘন্টা লাগবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিমানের উপ মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, যাত্রী সংকট থাকায় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে এই রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। নতুন সময়সূচি অনুসারে ২৮ অক্টোবর ছিল এই রুটের শেষ ফ্লাইট।

Travelion – Mobile

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সাত বছর পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-ইয়াঙ্গুন রুটে ফ্লাইট চালু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করে রাষ্ট্রয়াত্ব এই বিমান সংস্থাটি।

কয়েকমাস পর মায়ানমার রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বেসরকারী বিমান সংস্থা নভোএয়ার। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে ভিসা জটিলতা আর যাত্রী কমে যায় নভোএয়ার তাদের সার্ভিসটি বন্ধ রাখে।

কিন্তু বাংলাদেশ বিমান তখন থেকেই কখনো ড্যাশ আবার কখনো বোয়িং ৭৩৭ বিমান দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল। ইদানিং অনটাইম শিডিউল না থাকা, সেবার মান খারাপ হওয়ায় যাত্রীহারায় রাষ্ট্রায়ত্ব বিমানসংস্থাটি।

ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ে থেকে ছিটকে বিধবস্ত বাংলাদেশ বিমানের ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ।
ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ে থেকে ছিটকে বিধবস্ত বাংলাদেশ বিমানের ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ।

এরই মধ্যে গত ৯ মে মায়ানমারের ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ বিধবস্ত হয়। দুঘটনায় প্রাণহাণি না হলেও এই রুটে বিমানের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এরপর থেকে যাত্রী সংখ্যা আরও কমে যায়।

ক্রমাগত লোকসান গুনতে গিয়ে একপর্যায়ে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিমানের ব্যবস্থাপনা কমিটি। এই রুটের উড়োজাহাজকে তারা ঢাকা-দিল্লী রুটে দিয়ে বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।

নভোএয়ার ও বাংলাদেশ বিমানের প্রতিযোগিতার কারণে ফ্লাইট ভাড়াও কমে এসেছিল। আগে বাংলাদেশ বিমানের আসা-যাওয়ার ফ্লাইট ভাড়া ছিল ৩২ হাজার টাকা, নভোএয়ার আসার পর ভাড়া কমে ২৫ হাজার টাকায় নেমেছিল। নভোএয়ার বন্ধ হওয়ার পর ভাড়া বেড়ে একেবারে ৪০ হাজার টাকায় পৌঁছে যায়; সেটি এখন পর্যন্ত বহাল ছিল। এরপরও যাত্রী পায়নি বিমান।

ঢাকা-ইয়াঙ্গুন রুট বন্ধ করা বাংলাদেশ বিমানের হটকারী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করছেন মায়ানমার-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এসএম নুরুল হক। তিনি আকাশযাত্রাকে বলেন,’যাত্রী কমে যেতে পারে, কিন্তু প্রতিবেশি দুদেশের মধ্যেকার অর্থনেতিকও বাণিজ্যিক সর্ম্পক তো কমে যায় নি। তাছাড়া দেশটি ঔষুধ শিল্প, মোবাইল অপারেটরসহ নানাখাতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি নিয়োজিত আছেন। হুট করে এমন সিদ্ধান্ত কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হয়ে মায়ানমার যেতে এখন আমাদের বাড়তি সময়ই শুধু নয়, বাড়তি খরচও বহন করতে হবে।

ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুর ট্রানজিট করেও ইয়াঙ্গুন রুটটি বিমান বাংলাদেশ চালু রাখতে পারতো বলে তাঁর অভিমত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!