মালয়েশিয়ায় শ্রম রপ্তানি : সিন্ডিকেটবিরোধী আন্দোলনকারীরাই যাচ্ছেন সিন্ডিকেটে!

মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালুর আগে থেকেই ২৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যানারে আন্দোলন করেন দেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকেরা। এর মধ্যেই শ্রমবাজার চালু হলে গত ৮ আগস্ট প্রথম দফায় ৫৩ কর্মী মালয়েশিয়ায় যায়। আগস্টে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন আর ৫৭৩ জন।

সবার জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখার দাবিতে সিন্ডিকেটবিরোধী আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের ২৫ জনই এবার যুক্ত হচ্ছেন সিন্ডিকেটে। কর্মী পাঠানোর এজেন্সির তালিকায় নাম যুক্ত করতে বিভিন্ন এজেন্সি মালয়েশিয়া ও দেশের বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যে তদবির করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাধারণ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, আন্দোলন করে বায়রার নির্বাচনে জয়ের পর সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে প্রতারণা করে নেতারা এখন সিন্ডিকেটে ঢুকছেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত নতুন তালিকা চূড়ান্ত হয়নি।

৫৩ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে স্বাগত জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার
৫৩ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে স্বাগত জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার

বায়রার একাধিক সদস্যে সুত্রে দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ২৫ এজেন্সির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী। ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বায়রার নির্বাচনে তাঁর সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়েছে। তালিকায় নাম রাখতে অনেকেই নূর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নূর আলী দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Travelion – Mobile

আরও পড়তে পারেন : দিন-দ্য ডে : অনন্ত জলিল-বর্ষা এখন মালয়েশিয়ায়

সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর মালয়েশিয়ার সরকারকে ১ হাজার ৫২০ এজেন্সির তালিকা দেওয়া হয় বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে। এজেন্সির তালিকা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব মালয়েশিয়ার। শুরুতে ২৫টি এজেন্সিকে সুযোগ দেয় তারা। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনা হয়েছে। এখন আরও ২৫টি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে। গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে মালয়েশিয়ান প্রতিনিধিদল ২৫ এজেন্সি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায়।

এজেন্সির নতুন তালিকায় নাম থাকার আলোচনায় থাকা বায়রার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়নি। সবার জন্য সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন আরও ২৫টি এজেন্সি কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, এটা আন্দোলনের একটা অগ্রগতি।

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান।
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান।

রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের অভিযোগে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শ্রমিক শোষণসহ নানা অভিযোগে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানি মালয়েশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের আগে ওই বছর পৌনে দুই লাখ কর্মী দেশটিতে কাজ নিয়ে যান। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈধভাবে মালয়েশিয়া গেছেন সাড়ে ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী।

আরও পড়তে পারেন : নেতিবাচক প্রচার মোকাবিলায় ‘অভিবাসী কূটনীতি’ চালু করছে সরকার

ফলে এসব কোম্পানি এখন আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দিতে চায় না। বরং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ড মেনে কর্মী নিতে চায় তারা। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া বাড়ছে না। ২৫টির জায়গায় ৫০টি এজেন্সি হলেও বাজার খুব বাড়বে বলে মনে হয় না।

বায়রার নেতারা বলছেন, এজেন্সির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন করে ২৫–এর পরিবর্তে ৫০ বা ৭৫টি নাম যুক্ত করার প্রস্তাব মালয়েশিয়াকে দেওয়া হয়েছে। নতুন তালিকায়থাকতে পারে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরীর নাম ।

তিনি বলেন, এজেন্সির সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই সবার জন্য উন্মুক্ত করা না গেলেও যতটুকু বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা চলছে। শিগগিরই হয়তো পরিধি আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে। না বাড়লেও বায়রার সব সদস্য নিয়েই ব্যবসা করার চেষ্টা করা হবে।

গত ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর সীমিত এজেন্সির তালিকা চেয়ে মালয়েশিয়া সরকার চিঠি পাঠায়। এতে রাজি হননি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। পরে বাংলাদেশের ২৫টি মূল এজেন্সি ও প্রতিটির সহযোগী (সাব-এজেন্ট) হিসেবে ১০টি করে এজেন্সি রাখার সিদ্ধান্ত জানায় মালয়েশিয়া। বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের নেতৃত্বে তিনজন সংসদ সদস্যের এজেন্সিসহ ২৫টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজ যুক্ত হতে চাইলে এখানে ক্লিক করার অনুরোধ

রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের অভিযোগ, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে নতুন করে তৈরি হতে যাওয়া সিন্ডিকেট ঠেকানোর চেষ্টা করেনি প্রবাসী মন্ত্রণালয়। বরং কৌশলে মালয়েশিয়ার হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে দায় এড়িয়েছে তারা। তাই মালয়েশিয়ার সম্মতি ছাড়া সবার জন্য বাজার উন্মুক্ত করা যাচ্ছে না।

২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের অনলাইন কাঠামোর কাজ পায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক দাতো সেরি আবদুল বিন আমিন নূরের প্রতিষ্ঠান সিনারফ্ল্যাক্স । তাঁর সহযোগিতায় দেশের ১০টি এজেন্সি মিলে তৈরি হয় চক্র। ৩৩ হাজার ৩৭৫ টাকায় কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও চক্রের কারণে দুই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করেন মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা। এই সুযোগে দুই বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!