মালয়েশিয়াপ্রবাসীদের সেবায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্বোধন

মালয়েশিয়াপ্রবাসী ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশিদের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। ‘বাংলা টাইগার ডিজিটাল’ নামের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পাসপোর্ট সার্ভিস, কল্যাণ সার্ভিস, চাকরির খোঁজ, শিক্ষার্থী ও প্রফেশনাল সাভির্স, বৈধকরণ প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কনসুলেট সেবা সহজে ও দ্রুত পাবেন প্রবাসীরা।

স্থানীয় পর্যায়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফরম উদ্যেগ নিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। বাস্তবায়নে হাইকমিশনের বা সরকারি কোন আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই যেমন নেই, প্ল্যাটফর্মের সেবা নিতে প্রবাসীদেরও কোন ফি দিতে হবে না। আর এই উদ্যোগে মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল মিশন হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গেল কুয়ালালামপুর হাইকমিশন।

বুধবার (১০ মার্চ) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ডিজিটাল সেবার উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফী বিনতে শামস বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন। উপ-হাইকমিশনার ও মিনিস্টার মো. খোরশেদ এ খাস্তগীরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন টেকনোলজি পার্টনার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘ডটলাইনস’ প্রেসিডেন্ট মাহাবুবুল মতিন।

Travelion – Mobile

এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হাইকমিশনের সঙ্গে মালয়েশিয়া প্রবাসী সর্বস্তরের বাংলাদেশি মধ্যে নিবিড় যোগাযােগ ঘটবে উল্লেখ করে হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘বাংলা টাইগার ডিজিটাল অনলাইন অ্যাপে সেবা নিতে গেলে প্রবাসীদেরকে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রবাসীদের নাম ঠিকানা ও যোগাযোগের ফোন নম্বরসহ একটি ডাটাবেজ তৈরি হয়ে যাবে এবং যেটির মাধ্যমে হাইকমিশন প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে, প্রার্থিত সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রবাসীদের ক্ষমতায়ন করা হবে।

প্ল্যাটফর্মটির পটভূমি তুলে ধরে হাইকমিশনার জানান, এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি সমন্বিত ট্রেডবোর্ডটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে এবং প্রবাসীদের জরুরি প্রয়োজনে হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সংযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। তাদের সমস্যার কথা শুনবে, প্রয়োজনে পরামর্শ-তথ্য দিবে। পর্যায়ক্রমে এই অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে মালয়েশিয়াস্থ প্রবাসীরা নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তারা ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আবেদনের আপডেট পাবেন এবং যথাসময়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। মালয়েশিয়াপ্রবাসীদের সেবায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম 1

পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বৈধপথে দেশে টাকা পাঠানো, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, জরুরি খবর দ্রুত প্রবাসীদেরকে জানানোসহ আরও অধিক সুযোগ সংযোজন করা হবে। তাছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে মালয়েশিয়া নিয়োগকর্তার সাথে চাকরিপ্রত্যাশী বাংলাদেশি কর্মীদের সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ফলে মানসম্মত সেবা ছাড়াও তথাকথিত দালালদের হাত থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। সবকিছু মিলিয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে হাইকমিশনের সেবায়, বলেন গোলাম সারওয়ার।

প্রবাসীদের কল্যাণ ও কনসুলেট সেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু সময়োযোগী উদ্যোগ এবং সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের ক্ষমতায়ানে ক্ষেত্রে বলিষ্ট ভূমিকা রাখব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, আমাদের বিদেশ মিশনগুলো প্রবাসীদের দুঃখ দুদর্শা লাঘবে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। কিন্ত নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাছাড়া অনেক সমস্যার সমাধান ঐ সমস্ত দেশের উপর নির্ভর করে। সে ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে সীমাবদ্ধতা অনেকাংশে দুর করতে পারে। কুয়ালালামপুর হাইকমিশন তেমনি একটি উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলা টাইগার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রবাসীরা হাইকমিশনে তাদের সমস্যাগুলো আগের চেয়ে আরও সহজে তুলে ধরতে পারবেন এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

তিনি আরও বলেন, যারা সেবা প্রদান করবেন এবং যারা ডিজিটাল সেবা পাবেন নিবেন তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। পরিষেবাটি সরবরাহকারীকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সিস্টেমটি কাজ করে এবং নির্ঝঞ্ঝাট সেবা দিচ্ছে। তাছাড়া সিস্টেমটি ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়া এবং এই সেবা যারা দেবেন তারা যেন কাজটি জানেন। সেবাটি গ্রহণকারী প্রবাসীদের ব্যবহারবিধিও দিতে হবে, যাতে তারা সুবিধাটি সহজে নিতে পারেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের বিশাল অবদান এবং তাদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন যুগান্তকারী উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।

মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবায় ডিজিটাল ফ্লাটফরম চালু একটি দূরদর্শী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে জনসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাশফী বিনতে শামস। হাইকমিশনের সময়োচিত উদ্যোগের ফলে ১০ লাখের বেশি মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি উপকৃত হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের জন্য একটি কর্মস্থলই শুধু নয়, সেখান থেকে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক বিনিয়োগ পেয়ে থাকে। আমার কাছে মনে হচ্ছে এই ধরনের উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম আমরা যদি মালয়েশিয়ানদের কাছে তুলে ধরতে পারি, অবশ্যই মালয়েশিয়া বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার জন্য অনুপ্রাণিত হবে এবং তারা জানবে যে বাংলাদেশে নানান রকম উদ্ভাবনী কাজ করছে। আমি আশা করবো যে,এই ধরণের আরো নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা করে কুয়ালালামপুর হাইকমিশন আমাদেরকে আরো নতুন নতুন পথ দেখাতে পারবেন।”

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!