মানবজাতি কি মাইক্রোবসের সম্মুখীন!
মহামারি আমাদের এই পৃথিবীতে নতুন কিছু নয়। সৃষ্টির শুরু থেকেই সময়ে সময়ে এই পৃথিবীতে নেমে আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মহামারি। বিখ্যাত গ্রীক নাট্যকার সফোক্লেসের (৪৯৬-৪০৬ খ্রিষ্টপূর্ব) বহুল পঠিত নাটক ‘ইডিপাসে’ও আমরা দেখতে পাই মহামারির করুণ চিত্র।
রাজা ইডিপাস ভাগ্যদোষে ও অজান্তে তার নিজের মা ইয়োকাস্তকে বিয়ে করার ফলে থিব্স রাজ্যে হঠাৎ একদিন নগরে মহামারি দেখা দিল। শত শত লোকের মৃত্যু হল, অনেকে পালিয়ে গেল দূরে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। রাজদরবারে প্রত্যহ প্রজাদের প্রতিকারের জন্য আকুল আবেদন। কিন্তু মানুষের হাতে প্রতিকার কোথায়? সুতরাং দেলফির মন্দিরে পুজার জন্য পাঠানো হল রানি ইয়োকাস্তের ভাই ক্রেয়নকে। ক্রেয়ন খুশি মনে ফিরে এল। সে বলল রাজা লাইয়ুসের হত্যাকারী এই নগরীতেই লুকিয়ে আছে, তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করলে অথবা তাকে নির্বাসিত করলে মহামারির অভিশাপ দূর হবে এবং নগরী আবার সুস্থ ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
রাজা লাইয়ুসের হত্যাকারি ছিলো তার নিজের ছেলে ইডিপাস। না চিনতে পেরে ভুলক্রমে ইডিপাস হত্যা করেছিলেন তার পিতা রাজা লাইয়ুসকে। এবং বিয়ে করছিলেন নিজের মা কে। পরবর্তীতে রাজা ইডিপাস যখন জানতে পারলেন যে তিনি ভুল করে বিয়ে করে ফেলেছেন প্রাশ্চিত্তসরূপ নিজেই নিজের দু’চোখ খাবলে তুলে ফেলেছিলেন।
৩১ মার্চ মঙ্গলবার বাংলাদেশের যমুনা টেলিভিশন ডক্টর রাবার্ট প্যারি নামে একজন আমেরিকান চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার প্রচার করে। ডক্টর প্যারি বলেন করোনা নামের এই ভাইরাসটির অস্তিত্ব নাকি এই পৃথিবীতে বহুকাল আগে থেকেই বিদ্যমান ছিলো। মৃদু উপস্থিতির কারণে ভাইরাসটি কিছুটা ভিন্ন রূপধরে ছিলো এতোদিন। অল্প স্বল্প উপসর্গের কারণে এতোদিন এটার উপস্থিতি ছিল অজানা। সময়ের সাথে ভাইরাসটি এতোদিন খাপ খাওয়াতে পারেনি মানবদেহে। এটি বাঁদুরসহ অন্যন্য প্রাণীর দেহে বেঁচে ছিল অনেকদিন। কিন্তু বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে কাবু করার পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন করেছে বর্তমানের এই করোনা। কথাটা আমার ও বিশ্বাস হয়।
যুগ ধরেই মানুষ আর ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া পাশাপাশি বাস করে চলেছে। এখন যেমন করোনার মহামারি চলছে তেমন এক সময় ছিল ফ্লু, প্লেগ এমন মহামারি। মানুষ যতবারই নানারকম প্রতিষেধক আবিষ্কার করে, ওষুধ আবিষ্কার করে তাদের প্রতিহত করতে চেয়েছে, বারবারই তারা জেনেটিক মিউটেশন ঘটিয়ে নতুন রূপে ফিরে এসেছে।
ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া সঙ্গে মানুষের এই যুদ্ধ অপরিসীম। এখন প্রশ্ন হল যদি এমন কিছু মাইক্রোবসের সম্মুখীন আমাদের হতেই হয়, হাজার হাজার বছর আগে যাদের অস্তিত্ব এই বিশ্ব থেকে লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন দিন কিন্তু আসতে চলেছে। আর বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণঘাতী অতীতের অনেক মাইক্রোবাস ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
মাইক্রোবস(microbes) রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষুদ্র অনুজীব যা খালি চোখে দেখা যায়না। কিন্তু অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই দেখা যায় এমন।
২০১৬ সালে সাইবেরিয়ার এক ১২ বছরের শিশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছিলেন, বহু বছর আগে ওই এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের কবলে প্রচুর রেনডিয়ারের মৃত্যু হয়েছিল। সেই দেহগুলো বরফের নিচে চাপা পড়েছিল।
বিশ্ব উষ্ণায়নে বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গেই মৃতদেহে চাপা পড়ে থাকা জীবাণু বাইরে বেরিয়ে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে। কোনোভাবে জল এবং খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়েই ওই শিশুর সংক্রমণ ঘটায়।
শুধু এই একটা ঘটনাই নয়, গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা একাধিক প্রাণঘাতী জীবাণুর খোঁজ পেয়েছেন। যেমন ২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা আলাস্কার একটি বরফ হ্রদ থেকে ৩২ হাজার বছরের পুরনো এক ব্যাক্টেরিয়ার খোঁজ পেয়েছেন।
এর দু’বছর পর ২০০৭ সালে আন্টার্কটিকার বরফে চাপা পড়ে থাকা ৮০ লাখ বছর পুরনো এক ব্যাক্টেরিয়ার সন্ধানও পেয়েছেন।
১৯১৮ সালে সারা বিশ্বের ত্রাস হয়ে উঠেছিল স্প্যানিস ফ্লু। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই সংক্রমণের জেরে। আলাস্কার তুন্দ্রায় বরফের তলার গণকবর দেওয়া হয়েছিল মানুষদের। সেই জায়গা থেকেই স্প্যানিস ফ্লু ভাইরাসের জেনেটিক অংশ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এমনকী’ একইভাবে সাইবেরিয়ায় বরফের তলা থেকে গুটি বসন্ত এবং বিউবোনিক প্লেগ-এর ভাইরাসও মিলেছে। ১৮৯০ সালে সাইবেরিয়াতে মহামারি আকার নিয়েছিল গুটি বসন্ত। ৪০ শতাংশ জনবসতি হারিয়ে গিয়েছিলএই রোগে।
ফ্রান্সের এইক্স-মারসেলি ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোবসের জন্য খুব ভালো সংরক্ষকের কাজ করে বরফের স্তূপ। কারণ অত্যন্ত ঠান্ডা, কোনো অক্সিজেন নেই এবং সূর্যের আলোও পৌঁছায় না। ফলে যুগ যুগ ধরে বরফের তলায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে এরা।
পৃথিবীর দুই প্রান্তে বছরের পর বছর ধরে যে বরফের আস্তরণ জমা হয়ে রয়েছে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে তা প্রতিদিনই গলতে শুরু করেছে। ফলে বরফ স্তূপের গভীরে চাপা পড়ে থাকা এই সমস্ত প্রাণঘাতী ভাইরাস-ব্যাক্টিরিয়াও ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
আমি বাড়ি আছি, তুমি বাড়ি থেকাে : চিরকুট
আমি বাড়ি আছি, তুমি বাড়ি থেকােজয় আসবে আমাদের, বিশ্বাস বুকে রেখোইউএনডিপির প্রযোজনায় চিরকুটের করোনা সচেতনতা সংগীত
Posted by AkashJatra on Monday, April 6, 2020