মাঝ আকাশে যাত্রীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট; জীবন বাঁচালেন ডাক্তার, কেবিন ক্রু

ডাক্তার যাত্রী এবং কেবিন ক্রু সদস্যদের আপ্রাণ চেষ্টায় জীবন ফিরে পেয়েছেন মাঝ আকাশে ফ্লাইটে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে (হৃদরোগে) আক্রান্ত একজন যাত্রী।

ভারতের কেরালা রাজ্যের কণ্ণুর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইগামী গো ফাস্ট এয়ারের একটি ফ্লাইটে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি গত ৮ মের হলেও শনিবার বিমানসংস্থাটি পক্ষ থেকে কেবিন ক্রুদের সম্মাননা জানাতে গিয়ে তা প্রকাশ পায়।

বিমানসংস্থাটি জানায়, কণ্ণুর থেকে গো ফার্স্টের G8-057 ফ্লাইটটি দুবাইয়ে উদ্যোশে উড্ডয়নের পর মাঝ আাকাশের চলার সময় একজন যাত্রী হঠাৎ অস্বস্তি বোধ শুরু করে এবং এক পর্যায়ে জ্ঞান হাারিয়ে ফেলেন। সাহায্যের জন্য চিৎকার শুনে কেবিন ক্রু দ্রুত তার দিকে ছুটে যায় এবং তাকে কোন স্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়াই অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময়ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। একজন ডাক্তারকে শনাক্ত করার আগে কেবিন ক্রুরা প্রথমে ফ্লাইটে থাকা যাত্রীদের শান্ত করেন।

Travelion – Mobile

এরপর এক সেকেন্ডও নষ্ট না করে, ক্রুরা আশপাশের যাত্রীদের সাহায্যে আহত ব্যক্তিকে পিছনের নিয়ে গিয়ে গ্যালি মেঝেতে রাখেন এবং দ্রুত কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন বা সিপিআর প্রক্রিয়া শুরু করে। এরই ফাঁকে কেবিনে যাত্রীদের মধ্যে ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর খোঁজে ঘোষণাও দেওয়া হয়।

ফ্লাইটের সকল ক্রুকে সম্মাননা সনদ দিয়ে সম্মানিত করে গো ফাস্ট কর্তৃপক্ষ
ফ্লাইটের সকল ক্রুকে সম্মাননা সনদ দিয়ে সম্মানিত করে গো ফাস্ট কর্তৃপক্ষ

সৌভাগ্যবশত, ডা. সাবির আহমেদ নামে একজন ডাক্তারও একই ফ্লাইটে ভ্রমণ করছিলেন এবং তিনি দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়ান। ডা. সাবির দুই সেট অটোমেটেড এক্সটার্নাল ডিফিব্রিলেটর (AED) শক দিয়ে অসুস্থ যাত্রীর চিকিত্সা শুরু করেন, তারপরে পাঁচ সেট সিপিআর দিয়েছিলেন।

ডা. সাব্বির এবং কেবিন ক্রু সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত জীবন-হুমকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে চেতনা ফিরে পান ওই অসুস্থ যাত্রী।

জরুরী চিকিৎসা সহায়তার জন্য ফ্লাইটটি মুম্বাইতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল ক্যাপটেন। কিন্তু রোগীর জ্ঞান ফিরে আসায় তা আরও প্রয়োজন হয়নি। পরে দুবাইতে অবতরণের পর, রোগীকে আরও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে দুবাইয়ের এনএমসি রয়্যাল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা.সাবির বলেন,”আমাকে সহায়তা করার জন্য একজন নার্স ছিল, ক্রু প্রশিক্ষিত ছিল এবং মেডিকেল কিট সুসজ্জিত ছিল। আমরা প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তার উপর সিপিআর করেছি। ভেবেছিলাম আমরা তাকে প্রায় হারিয়ে ফেলেছি। পাইলট জিজ্ঞাসা করেছিলেন জরুরি চিকিৎসা সহায়তার জন্য মুম্বাইতে ফ্লাইটটি ঘুরিয়ে নিবেন কিনা? কিন্তু আল্লাহর রহমতে, ফ্লাইট ডাইভার্ট করার আগে, আমরা রোগীর স্পন্দন পেতে সক্ষম হয়েছিলামএবং তিনি আবার শ্বাস নিতে শুরু করেছিলেন।এটি একটি খুব ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল। আমি কৃতজ্ঞ যে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে।””

ডা.সাবির আহমেদ এই ধরনের চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে সমস্ত বাসিন্দাদের শান্ত থাকার জন্য সতর্ক করেছেন ।

এদিকে শনিবার গো ফাস্ট কর্তৃপক্ষ এমন দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য ওই ফ্লাইটের সকল ক্রুকে সম্মাননা সনদ দিয়ে সম্মানিত করেছে। বিমানসংস্থাটি ডা. সাবিরের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!