মাঝ আকাশে ফ্লাইটেই যাত্রীর ‘আত্মহত্যা’
মিশর থেকে রাশিয়াগামী একটি ফ্লাইট মাঝ আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় একজন যাত্রী মাঝ শৌচাগারের ভিতরে আত্মহত্যা করেছেন। রাশিয়ার নাগরিক এই যাত্রীর নাম আলেক্সান্ডার ডকশিন (৪৮)। ধারণা করা হচ্ছে, উড়োজাহাজের টয়লেটে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনায় ফ্লাইটটি জরুরী অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
রাষ্ট্র পরিচালিত রসিয়া ব্রডকাস্টারের আঞ্চলিক ব্যুরোর রিপোর্ট বলা হয়, এস সেভেন (S7) এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট মিশরের শারম এল-শেখের রিসোর্ট থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ার শহর সামারায় উড্ডয়নের পরপরই কেবিন ক্রুরা (ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট) টয়লেটের ভিতরে অচেতন অবস্থায় যাত্রী আলেক্সান্ডার ডকশিনকে আবিষ্কার করেন। ফ্লাইট ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি টয়লেটে গিয়েছিলেন।
কেবিন ক্রুরা তারা টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলেছিল, এসময় ফ্লাইটে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ক্যাপ্টেন দ্রুত ফ্লাইটের পিছনের দিকের টয়লেটে দ্রুত যাওয়ার জন্য বোর্ডে থাকা একজন চিকিত্সকের জন্য আহ্বান জানান-এতে যাত্রীদের আতংক আরও বেড়ে যায়। ফ্লাইটে থাকা চিকিৎসক ডকশিনের জ্ঞান ফেরাতে সক্ষম হননি।
বাধ্য হয়ে ক্যাপটেন কায়রোতে ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ করেন। বিমানবন্দরের চিকিৎসকরা ডকশিনকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে একই ফ্লাইটে করে তার মরদেহ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
ফ্লাইটের যাত্রী তাতিয়ানা বলেন, “আমি মাঝখানে বসে ছিলাম এবং আতঙ্কিত হয়েছিলাম যখন তারা ঘোষণা করেছিল যে একজন ডাক্তারের প্রয়োজন ছিল। আমি ঘুরে দেখলাম যে আমার পিছনের বাকী যাত্রীরাও আতঙ্কে রয়েছে।”
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময় পুলিশকে তলব করা হয়েছিল যার ফলে ফ্লাইটটি পাঁচ ঘন্টা বিলম্ব হয়েছিল। কারণ তার মরদেহ ফ্লাইটে নেওয়ার আগে মৃত্যুর তদন্ত করা হয়েছিল। তাতায়ানা বলেন, “আমরা কায়রোতে অবতরণ করার পর ফ্লাইট থেকে তার দেহটি নামিয়ে কার্গো বগিতে না রাখা পর্যন্ত পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।”
কায়রো বিমানবন্দরের চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর প্রত্যয়ন করেছে এবং পুলিশ ফ্লাইটে যারা লোকটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। ডকশিনের মৃত্যুর তদন্তের জন্য রাশিয়ান কনসালকেও তলব করা হয়েছিল।
পেশায় গাড়ি মেকানিক আলেকজান্ডার ডকশিন স্ত্রী ক্রিস্টিনা (৩৭) এবং একটি ছোট মেয়ে রেখে গেছেন।
এস সেভেন এয়ারলাইনের একজন মুখপাত্র জানান, “একজন রিসাসিটেটর সহ তিনজন মেডিকেল স্টাফ ফ্লাইটে উপস্থিত ছিলেন এবং ফ্লাইট কায়রোদতে অবতরণ না করা পর্যন্ত ডকশিনকে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন প্রদান করেছিলেন। যাত্রীকে কায়রো বিমানবন্দরে স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে হস্তান্তর করার পর সমস্ত পুনরুত্থানের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তিনি মারা যান।”
রাশিয়ার পরিবহন সংস্থার তদন্ত কমিটি ডকশিনের মর্মান্তিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তকারীরা তাস বার্তা সংস্থাকে বলেছেন ,তারা ঘটনার আশেপাশের পরিস্থিতি তদন্ত করছে।
রাশিয়ার এয়ার ট্রানজিট বাজারে সবচেয়ে আধুনিক বহরসহ এস সেভেন এয়ারলাইন্স হল দেশটির বৃহত্তম বেসরকারি উড়ান সংস্থা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ওয়ানওয়ার্ল্ড (Oneworld) অ্যালায়েন্সের সদস্য উড়ান সংস্থাটি ১০১ উড়োজাহাজের বহর নিয়ে বিশ্বের ২৬ টি দেশের ১৮১ টি গন্তব্য চলাচল করে।
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে একটি রাশিয়ান যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে বোমা হামলার পর ছয় বছরের নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া চলতি বছরের আগস্টে মিশরের লোহিত সাগরের রিসর্টে ফ্লাইট পুনরায় চালু করে। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবরের ওই হামলার ফলে ২২৪ জন আরোহী নিহত হয়েছিল।