ভারতে তাবলীগ জামাতে যোগ দিয়ে ৭ জনের মৃত্যু করোনায়

ভারতে দিল্লির নিজামুদ্দিনে একটি মসজিদে তাবলীগ জামাতে যোগ দেওয়ার পর ফিরে গিয়ে ৭ জন মারা গেছেন। তারা সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে ৬জন তেলাঙ্গানা রাজ্যের এবং ১ জন কাশ্মীরের অধিবাসী। এছাড়া আক্রান্তের লক্ষণ থাকায় আরো দু’শ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর আগে মালয়েশিয়াতে তাবলীগ থেকে ফিরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে তাবলীগ জামাতের সাদপন্থীদের ‘হেড-কোয়ার্টার’ হিসেবে পরিচিত সেই মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সাড়ে আটশ মানুষকে সেখান থেকে বাসে করে বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

তেলাঙ্গানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনদিন ধরে ধর্মীয় ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন তারা। সেখানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন হায়দরাবাদের গান্ধী হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান; একজন অ্যাপোলো হসপিটালে এবং আরেকজন গ্লোবাল হসপিটালে মারা গেছেন। অন্য দু’জন মারা গেছেন নিজামাবাদ এবং গাদওয়ালে।

Travelion – Mobile

তেলাঙ্গানা রাজ্য সরকারের বিশেষ একটি দল এরই মধ্যে ওইসব লোকদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, ধর্মীয় ওই অনুষ্ঠানে যারা গেছেন, সবাই যেন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

অন্যদিকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছি তিনিও এই তাবলীগ থেকে ফিরে যাওয়াদের একজন। ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের সংস্পর্শে সম্প্রতি যারা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আরও চারজনের শরীরেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এদের সবাইকে কোয়ারানটিন করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে এখনও পর্যন্ত মোট ৭০ জন কোয়ারানটিনে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাত জন চিকিত্‍সকও আছেন।

তাবলীগ জামাতের সাদপন্থীদের ‘হেড-কোয়ার্টার’ হিসেবে পরিচিত সেই মসজিদে কমপক্ষে ২০০ জনের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা সংক্রমণ হয়েছে কিনা তার জন্যে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে ২৪ জনের শরীরে ওই সংক্রমণ হয়েছে বলে প্রমাণও মিলেছে। সংক্রমিতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছে দিল্লি সরকার। এরই মধ্যে ওই মসজিদ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকালই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলার কারণে ওই মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে।

সামাজিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা উপেক্ষা করে শতবর্ষ পুরনো ওই মসজিদে কয়েকশ মানুষ অবস্থান করছিলেন। বিশাল ওই মসজিদে গত ৯ ও ১০ মার্চ তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে হাজার হাজার ভারতীয় এবং শত শত বিদেশি যোগ দিতে গিয়েছিলেন।

সেখান থেকে ফিরে গিয়ে ছয়জন মারা গেছে তেলাঙ্গানায়। অন্যদিকে শ্রীনগরে মারা গেছে একজন। ওই মসজিদ থেকে ফেরার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে ১০ জন শনাক্ত হয়েছে আন্দামান এবং নিকোবার দ্বীপে।

ওই মসজিদে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, মিয়ানমার, কিরগিজস্তান, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, জেবুতি, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ফিজি, ফ্রান্স ও কুয়েত থেকে তাবলীগের সদস্যরা এসেছিলেন। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই মসজিদে যারা যারা এসেছেন, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

মার্কাজ নিজামুদ্দিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ মার্চ থেকে কারফিউ জারির ঘোষণা দেওয়ার পর ২৪ তারিখের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!