ভারতের মহারাষ্ট্রে মধ্যরাতের ক্যু!

এ যেন মধ্যরাতের ক্যু! না হলে কাল রাত পর্যন্ত ঠিক ছিল ভারতের মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনার জোট সরকার হবে।

আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) দেশটির সবকটি দৈনিক সংবাদপত্রে ঢালাও করে প্রকাশিত হয়েছে রাজধানী মুম্বাই দিয়ে বিশ্ব পরিচিত এই রাজ্যের ক্ষমতা নেওয়ার এমনই খবর।

কিন্তু চিত্রনাট্যের একদম শেষেই যেন ‘চমক’ লেখা ছিল! সাত সকালে দেখা গেল, মুম্বাইয়ের রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন এনসিপি নেতাশারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার । রাতারাতি বদলে গেল মহারাষ্ট্রের রাজনীতি।

Travelion – Mobile

শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা দেশের কাছেই এ হল বড় চমক। কাল রাত পর্যন্ত যাঁরা জানতেন মহারাষ্ট্রে বিজেপি-কে বাদ দিয়েই সরকার গঠন হতে চলেছে, ঘুম থেকে উঠে তাঁরাই দেখলেন শপথ গ্রহণ করে ফেলেছেন ফড়নবীশ।

আরও বিস্ময়, শারদ পাওয়ারকে নিয়ে। যে মানুষটা শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছিলেন, উদ্ধব ঠাকরেই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তাঁর দল রাতারাতি ভোল বদলে, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে গত বিশ বছরের যাবতীয় ভাষণ বেমালুম ভুলে গিয়ে বিজেপির হাত ধরে ফেলল।

শুধু তা নয়, কেউ কিছু জানতে পারার আগেই উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথও নিয়ে নিলেন পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার।

মুম্বইয়ের রাজভবনে এ দিন সকাল ৮ টা ৫ মিনিটে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ ও অজিত পাওয়ারকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছিল। এ দিন রাজভবনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর জানানো হয় যে, রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

শপথ অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ বলেন, মহারাষ্ট্রে সুশাসন দেওয়ার জন্য বিজেপি-কে মানুষ বিপুল ভাবে ভোট দিয়েছিলেন। জোট শরিক হিসাবে শিবসেনাও অনেক আসনে জিতেছিল। কিন্তু ভোটের পরই বেচাল শুরু করেছিল শিবসেনা। যা রাজ্যের পক্ষে শুভ ছিল না। মহারাষ্ট্রে খিচুড়ি সরকার চায় না মানুষ।

ফড়নবীশ ও অজিত পাওয়ারকে টুইট বার্তায় অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।

রাতারাতি বদলে গেল মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। পাশার দান উল্টে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের জন্য শপথ নিলেন বিজেপির নেতা দেবেন্দ্র ফাডনবিশ। উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন এনসিপির নেতা শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার।

এই মহা-অভ্যুত্থান প্রমাণ করল, রাজনীতিতে পূর্ণচ্ছেদ বলে কিছু নেই। মাত্র কদিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ির বলা সেই কথাটিও সত্য হলো, ক্রিকেট ও রাজনীতির রং যেকোনো মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। গতকাল শুক্রবার রাত ও আজ শনিবারের সকাল শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা ভারতের রাজনীতিতে মহাবিস্ময় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচন হয় ২১ অক্টোবর। ২৪ তারিখে ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় ২৮৮ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় কোনো দলই সরকার গড়ার মতো প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। একক গরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজেপি পায় ১০৫ আসন, তাদের জোট সঙ্গী শিবসেনা পায় ৫৬টি। এনসিপি ও কংগ্রেস জোট পায় যথাক্রমে ৫৪ ও ৪৪টি আসন। ছোট আঞ্চলিক দল ও স্বতন্ত্রদের দখলে থাকে ২৯টি।

এই অবস্থায় বিজেপি-শিবসেনার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিবাদ বাধে। আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাওয়ার দাবিতে অনড় শিবসেনা জোট ত্যাগ করে এনসিপি ও কংগ্রেসের কাছাকাছি আসতে থাকে। অচলাবস্থায় জারি করা হয় রাষ্ট্রপতির শাসন। দীর্ঘ এক মাসের টালবাহানা শেষ হওয়ার মুখে পৌঁছায় গতকাল রাতে, শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের বৈঠকে।

গতকাল শুক্রবার রাত ও আজ শনিবারের সকাল শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা ভারতের রাজনীতিতে মহাবিস্ময় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে এই ক্ষমতা গ্রহণ।

সূত্র : ইন্ডিয়া টু ডে ও দি ওয়াল

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!