বড় বিপদের শঙ্কায় মহাকাশ স্টেশন, মৃত্যু ঝুঁকিতে ৭ নভোচারী!

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা। যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু কিংবা বা সারা জীবনের জন্য তাঁরা পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন নভােচারীরা। অজানা ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা বুকে নিয়েই আপাতত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে মহাকাশ স্টেশন। প্রাণ হারানোর ঝুঁকি নিয়েই সেখানে কাটাতে হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সাত নভােচারীকে।

গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাশিয়া চার-চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পৃথিবীর কক্ষপথে কয়েক দশক ধরে থাকা একটি গোয়েন্দা উপগ্রহ ‘কসমস-১৪০৮’-কে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। তার ফলে, বড় ও মাঝারি আকারের প্রচুর টুকরো জমা হয়েছে এখন পৃথিবীর কক্ষপথে। যা মহাকাশ স্টেশন-সহ মহাকাশযান, উপগ্রহ ও মহাকাশচারীদের পক্ষে খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

হিউস্টনে মহাকাশ স্টেশনের মিশন কন্ট্রোল রুমের অন্যতম এক সদস্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে এই তথ্য দিয়ে, বলেছেন, ‘‘ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের পরপরই মহাকাশ স্টেশনে থাকা সাত জন মহাকাশচারীকে প্রতি মুহূর্তে নির্দেশ পাঠাতে শুরু করে হিউস্টনের মিশন কন্ট্রোল রুম। তাঁদের জানানো হয়, মহাকাশ স্টেশনের কোন কোন অংশের ‘হ্যাচ’ (এক রকম দরজা) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে রাখতে হবে। মহাকাশচারীদের আশ্রয় নিতে হবে কোন কোন জায়গায়।’’

Travelion – Mobile

তিনি আরও জানান,সোমবার রাশিয়ার ছোড়া চার নম্বর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের আগে কিছু জানতেই পারেনি নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সিসহ পৃথিবীর কোনও দেশের কোনও মহাকাশ গবেষণা সংস্থাই। বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই মহাকাশ স্টেশনে থাকা ভারতের একজন, আমেরিকার চার জন, রাশিয়ার দু’জন ও জার্মানির এক জন মহাকাশচারীর ঘুম ভাঙানো হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁদের চলে যেতে বলা হয় মহাকাশ স্টেশনের প্রাঙ্গণে রাখা পৃথিবীতে ফেরার দু’টি মহাকাশযান- ‘সয়ুজ-এমএস-১৯/৬৫এস’ এবং ‘ক্রু ড্রাগন’-এ।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন উপগ্রহের বিভিন্ন অংশ। যা বাড়িয়ে দিল মহাকাশ আবর্জনার পরিমাণ। ছবি সৌজন্যে- ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।
রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন উপগ্রহের বিভিন্ন অংশ। যা বাড়িয়ে দিল মহাকাশ আবর্জনার পরিমাণ। ছবি সৌজন্যে- ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।

দিন-রাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা অন্তর এক বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ২৪ ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৬ বার। সেই প্রদক্ষিণের পথেই তৈরি হয়েছে বিশাল মেঘ। রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গুঁড়িয়ে যাওয়া উপগ্রহের ছিন্নভিন্ন অংশগুলির টুকরোগুলিই তৈরি করেছে সেই জমাট বাঁধা মেঘ।

ওই সদস্য জানিয়েছেন, পৃথিবীকে মহাকাশ স্টেশনের প্রদক্ষিণের পথে রয়েছে গুঁড়িয়ে যাওয়া উপগ্রহের কম করে দেড় থেকে দু’হাজার টুকরো। ভূপৃষ্ঠ থেকে অতটা উচ্চতায় ভরশূন্য অবস্থায় (পার্থিব মাধ্যাকর্ষণ নেই যেখানে) যে টুকরোগুলির গতিবেগ এখন ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কিলোমিটার। আর সেগুলি ছুটছেও এখন দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে।

আরও পড়তে পারেন :
ডায়াপার পরেই পৃথিবীতে ফিরলেন ৪ নভোচারী
মহাকাশেও বসতি হবে, জন্ম নিবে মানুষ, বেড়াতে আসবে পৃথিবীতে
‘চাঁদের টুকরো’ উড়ে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর খুব কাছেই
৩৯ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে মহাকাশ ভ্রমণের টিকিট

মহাকাশে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের সময় তারা কোন পথ ধরবে, তা আগেভাগে আঁচ করাও খুবই কঠিন কাজ। টুকরোগুলির বেশির ভাগই বেশ বড় আকারের। রয়েছে মাঝারি ও ছোট আকারের প্রচুর টুকরোও। মহাকাশবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাদের নাম ‘স্পেস ডেব্রি’ বা ‘স্পেস জাঙ্ক’। মহাকাশের আবর্জনা।

সবচেয়ে বেশি যেটা উদ্বেগের কারণ, তা হল, কোনও বড় টুকরোকে পাশ কাটাতে গিয়ে কোনও মাঝারি বা ছোট টুকরোর পথে পড়ে যেতে পারে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। তাদের আঘাতে যে কোনও মুহূর্তে ফুটো হয়ে যেতে পারে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি। সেগুলির আঘাতে মৃত্যু হতে পারে মহাকাশ স্টেশনের মূল ক্যাপসুল থেকে নানা ধরনের মেরামতির কাজ ও মহাকাশ ভ্রমণে বেরনো মহাকাশচারীদের। বা তাঁরা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন।

ওই সদস্যের কথায়, ‘‘সামনের দিনগুলিতেও যথেষ্টই বিপদে রয়েছে মহাকাশ স্টেশন। কারণ সেই মেঘ চট করে সরবে না পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে। সেগুলি থেকে যে টুকরোগুলি ছিটকে বেরচ্ছে, তাদের গতিবেগ বন্দুক থেকে ছিটকে বেরনো গুলির গতিবেগের প্রায় ১০ গুণ। সেগুলি মহাকাশ স্টেশনের মূল ক্যাপসুল ছেড়ে মহাকাশ ভ্রমণে বেরনো মহাকাশচাকরীর শরীর এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারে মুহূর্তেই। তা যদি খুব ছোট আকারের ছিদ্রও তৈরি করে মহাকাশ স্টেশনের বিভিন্ন অংশে তাতেও স্টেশনের নানা ধরনের কাজকর্ম বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে কত দিন তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।’’

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা এবং নাসা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!