বৈরুত ট্র্যাজেডি : রাসেল ও রেজাউলের পরিবারে শোকের মাতম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের জাজিসার গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ লেবাননে চাকরি করেন।তাই গ্রামটি লেবানন গ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে উপজেলায়। এই গ্রামের মুরশিদ আলী লেবাননে ২৪ বছর চাকরি করেছেন। তিন বছর আগে তিনি দেশে আসেন। তাঁর হাত ধরেই লেবাননে গিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছিলেন ভাগনে রেজাউল সিকদার, জামাতা গোলাম রসুল, ছোট ভাই জসিম উদ্দিন এবং ছোট ছেলে রাসেল আলী। তিন ভাই আর তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল । বড় ভাই সাদেক আলীও লেবাননপ্রবাসী এবং মেজ ভাই লিয়াকত আলী দেশে সরকারি চাকরিতে আছেন।

ভাগ্য বদলাতে ৯ বছর আগে মামা মুরশিদ আলীর হাত ধরে লেবাননে গিয়েছিলেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মনির সিকদারের ছেলে রেজাউল সিকদার (৩৩)। চার বছর আগে নিয়ে যান ছোট ভাই মাহবুব সিকদারকেও। দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। এরপর নিজের বিয়েও ঠিক হয়েছিল। কনেকে আংটি পরিয়ে রেখেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। করোনা পরিস্থিতিতে দেশে আসতে না পারায় আটকে ছিল রেজাউলের বিয়ে। কথা ছিল দ্রুতই দেশে ফিরে বিয়ে করবেন। কিন্তু রেজাউলের আর দেশে ফেরা হলো না।

মঙ্গলবার লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নির্মম শিকার হয়ে অকালেই না ফেরার দেশে চলে গেল রাসেল ও রেজাউল। দেশে তাদের দুই পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম।

Travelion – Mobile

নিহত রাসেল আলীর বাড়িটিতে চলছে কান্নার রোল। বাবা মুরশিদ আলী ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন। মা পারুল আক্তার কোনোভাবেই ছোট ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তিনি ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সাংবাদিকেরা তাঁর ছবি তুলতে গেলে তিনি বলে ওঠেন, ‘কার ছবি তুলবে? ছবি তুললে তো আমার ছেলে আর ফিরে আসবে না। আমার ছেলেকে শেষবারের মতো দেখার ব্যবস্থা করে দেন।’

বৈরুত বিস্ফোরণ : আপডেট

বৈরুত বিস্ফোরণ : আপডেটজানাচ্ছেন : বাবু সাহা, প্রবাসী সাংবাদিক, লেবানন৫ আগস্ট, বুধবার : লেবানন : সন্ধ্যা ৭.৪৫ টা , বাংলাদেশ :রাত ১০.৪৫ টা

Posted by AkashJatra on Wednesday, August 5, 2020

নিহত রেজাউলের বাড়ি মাধবপুর গ্রামেও চলছে মাতম। রেজাউলের মা রফিয়া খাতুন পুত্রশোকে আহাজারি করছিলেন। নিজের ছেলে রাসেলকে হারানো শোকের মধ্যেও মুরশিদ আলী বৃহস্পতিবার বোনকে সান্ত্বনা দিতে চলে গেছেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার মাধবপুর গ্রামে।

দুই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লেবাননের বৈরুতে গত মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর থেকে রাসেল আলী, রেজাউল সিকদার, সাদেক আলী, গোলাম রসুল ও জসিম উদ্দিন কেউ কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জসিম উদ্দিন বেড়াতে গিয়েছিলেন অন্য এলাকার এক বন্ধুর কাছে। সেখান থেকে ফিরে হাসপাতালে হাসপাতালে খুঁজেছেন স্বজনদের। গত বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে শনাক্ত করেছেন রেজাউল সিকদারের লাশ। অপর একটি হাসপাতালে পেয়েছেন ভাতিজা রাসেল আলীর লাশ। সেখানে আহত অবস্থায় পেয়েছেন ভাতিজা সাদেক আলী ও ভাতিজি জামাতা গোলাম রসুলকে। তিনি বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন লাশ দুটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। অন্যরা আহত হলেও বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।

নিহত রাসেলের মেজ ভাই লিয়াকত আলী বলেন, ‘জসিম চাচা খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালে গিয়ে আমার ছোট ভাই ও ফুফাতো ভাইয়ের মরদেহ পেয়েছিলেন।”

নিহত রেজাউল সিকদারের বোন লিমা আক্তার বলেন, ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আংটি পরানো হয়েছিল। ৯ বছর পর ছুটিতে এসে বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আসতে পারছিলেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই দেশে চলে আসার কথা ছিল। হঠাৎ তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে।

জাজিসার গ্রামের বাসিন্দা ও লেবাননে থাকা এক প্রবাসীর বাবা কবির হোসেন বলেন, লেবাননে জাজিসার গ্রামের চার-পাঁচ শ লোকজন থাকেন। বিস্ফোরণ এলাকায় একই পরিবারের লোকজন থাকতেন। তাঁদের পরিবারের দুজন মারা গেছেন, অন্য দুজন আহত হয়েছেন। তাই গ্রামের প্রত্যেক প্রবাসীর পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

দুই পরিবারই তাদের প্রিয়জনের মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।

আগের খবর :
বৈরুত বিস্ফোরণ : ১২ বছর ছেলেকে দেখেনি মেহেদীর বাবা
বৈরুত বিস্ফোরণের নেপথ্যে রাশিয়ান ব্যবসায়ীর পরিত্যক্ত রাসায়নিক!
বৈরুত বিস্ফোরণ : বেশ কিছু বন্দর কর্মকর্তা গৃহবন্দী!
লেবাননে চিকিৎসক ও খাদ্যসামগ্রী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ
বৈরুত বিস্ফোরণ : নিহত চার বাংলাদেশির পরিচয় নিশ্চিত, আহত ৯৯

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!