বিশ্ব সংযোগের ৭৫ বছর
“বিশ্ব সংযোগের ৭৫ বছর” প্রতিপাদ্য নিয়ে ৭ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও)- প্রথম এই দিবসের ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গৃহীত এক সিদ্ধান্তে সদস্য দেশগুলোকে প্রতি বছর ৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস পালনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়।
১৯৯৪ সালে আইকাওয়ের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বছর প্রথম দিবসটি পালন করা হয়। আর এই বছর দিবসটি আইকাও’র জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বছরই ১৯৪৪ সালের আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সম্পর্কিত শিকাগো কনভেনশনের ৭৫ তম বার্ষিকী উদযাপন করছে বিশ্ব সংস্থাটি।
তাই বিমান পরিবহণের এই মাইলফলককে স্মরণীয় করে রাখতে আইকাও’ এর সদস্য দেশগুলো নানা ধরনের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল বিমানবন্দর ও ঐতিহাসিক স্থানকে গুরুত্ব দিয়ে নানা স্থানে আইসিএও এর ৭৫ তম বার্ষিকীর পতাকা উড্ডয়ন করা হবে। ছিল এয়ার শো এবং নানা দেশের বিমানবন্দরে দিবস নিয়ে ভিডিও প্রচারের আয়োজন। এসব কার্যক্রম থেকে তারা বিমান পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট জনসাধারণ ও প্রতিষ্ঠানকে সচেতন করবে বলে মনে করছে আইকাও।
নিরাপদ, দক্ষ, সুরক্ষিত, অর্থনৈতিকভাবে টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে দায়বদ্ধ যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের খাতের সমর্থনে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচলের মান ও প্রস্তাবিত অনুশীলনসমূহ (এসএআরপি) এবং নীতিসমূহের বিষয়ে সক্ষমতায় পৌঁছানোর জন্য আইসিএও কনভেনশনের ১৯৩ সদস্য দেশ এবং শিল্প সংস্থার সাথে কাজ করছে আইকাও।
দিবসটি উপলক্ষে আইকাও’র বিবৃতি বলা হয়, ৭৫ তম বার্ষিকী উদযাপনে “বিশ্ব সংযোগের ৭৫ বছর” প্রতিপাদ্যদিয়ে বিমানের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের মূলমন্ত্র- নিরাপদ, নির্ঝঞ্জাট ও দ্রুত যাতায়াতের সক্ষমতাকেই তুলে ধরা হয়েছে। এই মন্ত্র থেকে যাতে বাণিজ্যিক, ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল উৎসাহ ও উদ্দীপনা লাভ করে সেদিকেই খেয়াল রাখা হয়েছে।
আইকাও প্রতিষ্ঠার পঁচাত্তর বছরে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন বছরে চার বিলিয়ন যাত্রী বহন করে থাকে। এই পুরো বিমান পরিবহন খাতটি সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে যোগ করেছে ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিদিন এক লাখ ২০ হাজার বিমান এবং ১২ মিলিয়ন যাত্রীর নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে এ খাতে নিয়োজিত আছে এক কোটি নারী ও পুরুষ।
এয়ার ট্রান্সপোর্ট একশ্যান গ্রপের মতে, পুরো বিমান চলাচল খাতের কার্যকলাপ থেকে সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছে ৬৫.৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান যা বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩.৬ শতাংশ ভূমিকা রাখে।
ঐতিহাসিক বার্ষিকীতে বিমান পরিবহন খাতের ভবিষ্যতের দিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বেশি। এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে দ্রুত বেড়ে উঠা নতুন প্রযুক্তির বিমানের সম্ভাবনাকে। নতুন ধারণা ও নকশায় উৎপাদিত এসব বিমান এখন যাত্রী পরিবহন করা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধিতে অনন্য অবদান রাখাকে স্মরণীয় করে রাখতে ঐতিহাসিক এই দিবসে আইকাও’র কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ড. ওলুমুইয়া বেনার্ড আলিউ এবং সেক্রেটারি জেনারেল ড. ফ্যাং লিউ একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন.’ এবারের ৭৫ তম বার্ষিকীতে আইকাও’ র সদস্য দেশগুলোর নানা আয়োজন আর উৎসাহমূলক কর্মকান্ডে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। পাশপাশি সারা বিশ্বের নানা জাতিকে একত্র করার ক্ষেত্রে আইসিএ’ওর ভূমিকা নিয়েও আমরা গর্বিত।’
তারা বলেন, ‘এই বছর আমাদের ৪০ তম সভায় মন্ট্রিয়ালে আমাদের সদর দফতরে এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন। এ সভায় এসে সবাই আইসিএও’র উদ্ভাবনী মেলা এবং বিশ্ব এভিয়েশন ফোরাম দেখারও সুযোগ পেয়েছিলেন যা তাদেরকে বিমান চলাচলের নতুন সম্ভাবনা ও সক্ষমতার সাক্ষী করেছেন।’
এই বছরের বিশ্ব এভিয়েশন ফোরামে, এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা ও শিল্প মালিকরা কেবল নতুন সম্ভাবনার দুয়ারই দেখেননি। এই খাতের নতুন সব উদ্ভাবন কিভাবে হবে তার দিকনির্দেশনাও পেয়েছেন।
এবারের পঞ্চম ওয়ার্ল্ড এভিয়েশন ফোরামে নানা আয়োজনের মধ্যে আইকাও’র তরুণ উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। বিমান চলাচলের নতুন প্রযুক্তিতে তরুণদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে আমরা সত্যিই অনেক আনন্দিত হয়েছি। বিশ্ব বিমান চলাচল খাতের সর্বোচ্চ সংস্থা থেকে এই স্বীকৃতি তাদের দিয়েছে নতুন উৎসাহ ও প্রনোদনা।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ এবং আগামীর এভিয়েশনে উদ্ভাবনই সবচেয়ে গুরুত্ব বেশি বহন করে। এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আগামীতে এই খাতের লক্ষ্য হবে বেড়ে চলা বিমানের ট্র্যাফিকের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এবং সীমিত আকাশসীমায় আরও বেশি বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলা বিমানগুলোর সংস্থান করা এবং এ খাত থেকে কার্বন নির্গমনকে কমিয়ে আনা।
‘প্রতিটি নতুন বিমান এবং তা চলাচলের সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে আমরা অতি উৎসাহি না হয়ে আমাদের উচিত নকশার খাতা থেকে আকাশ সবখানে বিমানের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং দক্ষতাকে মূলমন্ত্র হিসেব গণ্য করা । তাই বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে নতুন বিমান চলাচল প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং যাত্রীসেবার মান বাড়ে এমন সব নীতি প্রণয়ন আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। এসবের সাথে টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের দিকেও আমাদের মনযোগ দিতে হবে।’, তারা যোগ করেন।
তাদের প্রত্যাশা, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও)-এর ৭৫ বছরের দীর্ঘ ঐক্য ও সহযোগিতার ইতিহাস কেবল অর্জনের স্বাক্ষর বহন করে যা আমাদের সামনের পথে উপজীব্য হিসেবে গণ্য হবে। বিমান চলাচলে সংশ্লিষ্ট সকলেই এ থেকে বুঝে নিতে পারবেন আমাদের সামনের বছরগুলো আরো উজ্জল ও টেকসই হবে।
ভিডিও