করােনায় আক্রান্ত হতে পারে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ !
করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ পরিনতি ডেকে আনতে পারে । কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলার থেকেও অনেক বেশি বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে আশংখা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি, বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে মরণঘাতি ভাইরাস। এখনই যথেষ্ট পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বন না করলে দুনিয়া-জুড়ে মড়কের সৃষ্টি করতে পারে করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাসই এখন গোটা পৃথিবীর কাছে এক নম্বর ‘গণশত্রু’ (পাবলিক এনিমি)’ বলে জানিয়ে হু’র শীর্ষকর্তা টেডরস অ্যাডহ্যানম বলেছেন, যে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলার থেকেও অনেক বেশি বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে করোনাভাইরাস। বিশেষ করে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ৩০টি দেশকে আলাদাভাবে সতর্ক করেছেন তিনি। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কোনও ভৌগলিক অবস্থানের প্রয়োজন পড়ে না বলে জানিয়েছেন অ্যাডহ্যানম।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্যে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল লিউংয়ের বিশ্বাস, সতর্ক করে বলেছেন, ভাইরাসটির আক্রান্ত এমন প্রতিটি ব্যক্তি আরও ২.৫ এর বেশি মানুষকেসংক্রামিত করতে পারে। এর অর্থ, এমন একটি উচ্চ “আক্রমণ হার” যদি এটি নিয়ন্ত্রণ না করা না যায় তবে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। যারা কখনও চীন সফর করেননি তাদের আক্রান্তরা কেবল ‘আইসবার্গের ডগা’ হতে পারে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসল আতঙ্ক লুকিয়ে রয়েছে বাকি এক শতাংশে! কারণ, তাঁরা চীনের বাইরে রয়েছেন এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন। প্রতিনিয়ত তাঁদের থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের শরীরে। এ ভাবেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে আগামী দিনে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষই এই ভাইরাসের নাগালের মধ্যে চলে আসতে পারেন!
বিশ্বের প্রথম সারির একজন গবেষক হংকং-এর গ্যাব্রিয়েল লিউং। সার্সের প্রকোপের সময় এই ভাইরাসের উপর কাজ করা গবেষকদের মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বৈঠকে যোগ দিতে জেনেভায় অবস্থান করা গবেষক গ্যাব্রিয়েল এআশঙ্কার কথা বলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সিওভিড -১৯ নামকরণ করা এ ভাইরাসকে সন্ত্রাসবাদের চেয়ে আরও বড় হুমকি হয়ে দাড়াবে বলে আশংখা প্রকাশ পর তাঁর এই সতর্কতা আসে।
তাঁর কথায়,‘সাধারণভাবে যদি ধরা যায় এক জন আক্রান্তের শরীর থেকে এই ভাইরাস গড়ে দুইয়ের বেশি মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে, তা হলেই বোঝা যাবে আক্রান্তের সংখ্যা কতটা বিপুল হতে পারে। ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ভাইরাসের সংস্পর্শে এসে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’ এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার সার্সের থেকে অনেক কম, মাত্র এক শতাংশ। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। ফলে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। এই প্রসঙ্গেই গ্যাব্রিয়েলের বক্তব্য, ‘মৃত্যুর হার কম হলেও, আক্রান্তের সংখ্যা যদি এত বিপুল হয় তা হলে মৃতের সংখ্যা বিপুল হতে বাধ্য। এটাই আতঙ্কের মূল কারণ।’
এমনটা যে হতে পারে সে আশঙ্কা অবশ্য গ্যাব্রিয়েল জানুয়ারি মাসেই প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ভাইরাস তো শুধু উহানে বন্দি নেই, বেজিং-সহ চিনের অন্য বড় শহরগুলিতেও ছড়িয়েছে। এখানে বিপুল সংখ্যায় বিদেশিদের আনাগোনা।
আর ভাইরাস যাঁদের শরীরে ঢুকে গিয়েছে, তাঁদের লক্ষণ এখন বোঝাও যাবে না। যত দিনে তা বোঝা যাবে ততদিনে এই ভাইরাস আরও অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছে।’ কিছু দিন যেতেই মিলে গেল ভবিষ্যদ্বাণী। একে একে অন্য দেশ থেকেও ভাইরাসে আক্রান্তের খবর আসতে লাগল।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকাতে চীন যেভাবে কড়া পদক্ষেপের পথে হেঁটেছে, বাকিদেরও তাই করতে হবে। প্রয়োজনে আক্রান্তদের সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। বন্ধ করে দিতে হবে স্কুল-কলেজ-শপিং মল।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এ ভাবে কত দিন চলবে? ভাইরাসের আতঙ্কে কতদিন বন্ধ থাকবে শহর? কতদিন বন্ধ থাকবে স্কুল? এই প্রশ্নের উত্তর কারও কাছেই নেই। এমনকী, এই পদ্ধতিতে ভাইরাসকে আদৌ আটকানো সম্ভব কি না, সেটাও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না কেউ।
এই ধোঁয়াশাই আরও বাড়িয়ে তুলছে আতঙ্ককে। চিনে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়ানোর পর স্বাস্থ্য বিভাগের দুই শীর্ষ পদাধিকারীকে সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। তবে তার থেকেও বড় বিষয় জাই জিনপিং-এর শাসনকালে সম্ভবত এই প্রথম প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কোনও প্রথম সারির চীনা ব্যক্তিত্ব!
চীনা বুদ্ধিজীবী জু ঝাংগ্রুন প্রেসিডেন্টকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, ‘সব কিছুকে চেপে দেওয়ার, গোপন রাখার যে প্রশাসনিক প্রবণতা জিনপিং তৈরি করেছেন তার জেরেই আজ এই হাল। সঠিক সময়ে সঠিক স্তরের সতর্কতা যদি প্রচার করা যেত, তা হলে এতগুলো মানুষকে প্রাণ দিতে হত না।’
এরই মধ্যে এই ভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের তত্ত্ব ঘোরাফেরা করছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, এটি চীনের তৈরি একটি জৈব-অস্ত্র যা এখন ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। এমন তত্ত্বের সপক্ষে অবশ্য কোন প্রমাণ এখনও মেলেনি।
সূত্র : দি গার্ডিয়ান