বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মাস্কাট থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইটে মাঝ আকাশে হার্ট অ্যাটাকের শিকার পাইলট ক্যাপটেন নওশাদ কাইয়ুম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর।
সোমবার স্থানীয় সময় ১০টা ৪৫ মিনিটে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাকে অফিশিয়ালি মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে রোববার তাকে ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ বলে জানানো হয়েছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান।
রোববার ক্যাপ্টেন নওশাদ ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ হলেও স্বজনরা লাইফ সাপোর্ট খুলে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন তারা। এরপর সোমবার পরিবারের সম্মতিতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে নওশাদকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) মাসকাট-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট বিজি ০২২ মোট ১২৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করে। এরপর নাগপুরের ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয়।
শনিবার রাতেই নওশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তিনি ‘কোমায়’ চলে যান।
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় ওমানের মাস্কাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২২ ফ্লাইট। মাঝ আকাশে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন পাইলট ক্যাপটেন নওশাদ আতাউল কাইউম। বিষয়টি তিনি ফার্স্ট অফিসারকে জানিয়ে ফ্লাইটটি আশপাশে কোথাও জরুরি অবতরণ করতে বলেন।
এসময় জরুরি অবতরণের জন্য কোলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নিকটতম নাগপুর এয়ারপোর্টে অবতরণ করার পরামর্শ দেয়। সে অনুযায়ী ফ্লাইটটি ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবা সাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঝুঁকি এড়িয়ে সফলভাবেজরুরী অবতরণ করে। যাত্রীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের বুদ্ধিমত্তায় জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর।
তবে এটি প্রথম নয়। ৫ বছর আগে ক্যাপ্টেন নওশাদ তার বুদ্ধি ও কৌশল প্রয়োগ করে আরও ১৪৯ যাত্রী, দুই পাইলট আর ৭ ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন। বিমান সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন নওশাদ।
সেই ফ্লাইটটি মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা করেছিল। টেক-অফ করার পর মাস্কাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত বিমান এয়ার ক্রাফটের হতে পারে।
যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নওশাদ বিমানটি চট্টগ্রাম অবতরণ না করে ঢাকা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। অবতরণের আগে ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি নিয়ে রানওয়ের উপরে দুইবার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন। তখন দেখা যায়, উড়োজাহাজের পেছনের দুই নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরে ক্যাপ্টেন নওশাদ দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহই নিরাপদে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করাতে সক্ষম হন। এই ঘটনার পর ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায়।