বিদেশগামী নারী কর্মীদের সুরক্ষায় কঠোর নির্দেশনা জারি

বিদেশগামী নারী কর্মীদের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের মিশন অধিশাখার যুগ্ম সচিব যাহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত পরিপত্রে ১২টি নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।

নিদের্শনাগুলো হল :
১) যে সকল রিক্রুটিং এজেন্সি; বয়স কম-বেশি দেখিয়ে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ ও মেডিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াই নারী কর্মীদের সৌদি আরবে প্রেরণ করেছে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২) নারী কর্মীদের প্রাথমিক বাছাই রিক্রুটিং এজেন্সি সম্পন্ন করবে। প্রাথমিক বাছাইকৃত নারী কর্মীদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার, এনআইডি, রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারীর নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার সম্বলিত পরিচয়পত্র প্রদান করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চুড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটির কাছে হাজির করতে হবে। কমিটি চূড়ান্ত বাছাইকৃত কর্মীদের তালিকা কমিটির সকল সদস্যের স্বাক্ষরসহ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির নারী কর্মী সুরক্ষা সেলে প্রেরণ করবে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তির সময় নারী কর্মী ও তার বৈধ অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্সি যৌথভাবে অঙ্গীকারনামা প্রদান করবেন।

Travelion – Mobile

৩) প্রাথমিক বাছাইকৃত নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানোর সময় প্রি-মেডিক্যাল করতে হবে। বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণের সময় চূড়ান্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশি নারী কর্মী
বাংলাদেশি নারী কর্মী

৪) নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণভাবে আবাসিক এবং ৩০ দিন মেয়াদের হবে। বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) এই পরিপত্র জারির এক মাসের মধ্যে হাউজ কিপিং কোর্সের কারিকুলাম হালনাগাদ করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ পূর্বক কার্যকর করবে। টিটিসি’র (কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) অধ্যক্ষগণ প্রত্যেক প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য ২৪ ঘণ্টার কর্মসূচিসহ একটি পাঠ পরিকল্পনা প্রস্তুত করে সুষ্ঠুভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। প্রশিক্ষণে উর্ত্তীণদের তালিকা মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির নারী কর্মী সুরক্ষা সেলে প্রেরণ করবেন। বিএমইটি নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণের মল্যায়ন ৩য় পক্ষের মাধ্যমে সম্পন্ন করবে।

৫) রিক্রুটিং এজেন্সি প্রত্যেক নারী কর্মীকে বিদেশ গমণের পূর্বে একটি স্মার্ট ফোন প্রদান করবে।

৬) রিক্রুটিং এজেন্সি আবাশ্যিকভাবে সংশ্লিষ্ট নারী কর্মীদের চুক্তিপত্র বাংলায় অনুবাদ করে প্রদান করবে এবং চুক্তিপত্রে উল্লিখিত বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করবে। নারী কর্মীদের চুক্তিপত্র দেয়া হয়েছে কি না এ বিষয়ে বিএমইটি হতে Musaned System-এ Approval দেয়ার সময় এবং বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার সময় দৈব চয়ন ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে।

৭) রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ প্রতিদিন বিদেশ গমণকারী নারী কর্মীদের তালিকা, ফ্লাইট নাম্বার এবং সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার, বিএমইটি ও মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মী সুরক্ষা সেল এবং বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্ক ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট শ্রম কল্যাণ উইংয়ে ইমেইল-এর মাধ্যমে প্রেরণ করবে। কল্যাণ ডেস্ক বিদেশগামী নারী কর্মীদের স্মার্ট কার্ড, চুক্তিপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র ও প্রত্যেক কর্মীকে প্রত্যক্ষ করবেন এবং কাউকে কম বয়সী, বেশি বয়সী ও শারীরিকভাবে অসুস্থ প্রতীয়মান হলে বিমানে আরোহণ থেকে বিরত রাখতে পারবেন।

লেবাননে বাংলাদেশি নারী কর্মী
লেবাননে বাংলাদেশি নারী কর্মী

৮) বিদেশ প্রত্যাগত নারী কর্মীদের তালিকা, ফ্লাইট নাম্বারসহ সংশ্লিষ্ট শ্রম কল্যাণ উইং বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে পূর্বেই প্রেরণ করবে এবং কল্যাণ ডেস্ক সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে অবহিত করবে। সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি নারী কর্মীদের বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে গন্তব্যে পৌছানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কল্যাণ ডেস্ক প্রত্যাগত নারী কর্মীদের যথাযথ সহায়তা প্রদান করবে।

৯) কোন সমস্যার কারণে নারী কর্মী দূতাবাসের সেইফ হাউজে আশ্রয় নিলে, শ্রম কল্যাণ উইং প্রত্যেকের জন্য একটি বিবরণী মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির নারী কর্মী সুরক্ষা সেলে প্রেরণ করবে।

১০) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত ভিজিলেন্স টাস্কফোর্স প্রতিমাসে কমপক্ষে দু’বার নারী কর্মীদের বিদেশ গমণের প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করবেন এবং সচিবের বরাবরে প্রতিবেদন পেশ করবেন।

১১) নারী কর্মীগণ দেশে ফিরে আসার পর প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যথাযথ সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এই পরিপত্র জারি হওয়ার এক মাসের মধ্যে বিমানবন্দরের সন্সিকটে একটি জব-Re-integration cell স্থাপন করবে। এখান থেকে তাঁরা প্রয়োজনীয় আইনী, আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা পাবেন।

১২) প্রতিমাসে বিদেশে প্রেরিত নারী কর্মীদের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ছক আকারে মন্ত্রণালয়ের এবং বিএমইটির নারী কর্মী সুরক্ষা সেলে প্রেরণ করতে হবে। সুরক্ষা সেল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে নারী কর্মীদের অবস্থা যাচাই করবে।

পরিপত্রে বলা হয়, নারী কর্মীদের অধিকতর সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ নির্দেশনা জারি করা হলো এবং নিদের্শনাসমূহ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এসব নির্দেশনা অনুসারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মিশন অধিশাখা ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!