বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বিমা চালু ১৯ ডিসেম্বর

১৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস থেকে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য চালু হচ্ছে বাধ্যতামূলক বিমা। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র একজন বিদেশগামী বাংলাদেশিকে বীমাভুক্ত করে আনুষ্ঠানিক এই কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

দুই বছরের জন্য মাত্র ৪৯০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ২ লাখ টাকার বিমা পলিসি করার সুবিধা পাবেন কর্মীরা। প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী কর্মীদের বিমাকারী হিসেবে দায়িত্বে থাকছে জীবন বীমা করপোরেশন। তবে কর্মীর পক্ষে সার্বিক বিষয় তদারকির দায়িত্ব পালন করবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

এলক্ষ্যে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ভবনে বিদেশগামী বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক ‘প্রবাসী কর্মী বিমা’ সুবিধাদি নিশ্চিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও জীবন বীমা করপোরেশনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

Travelion – Mobile

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস এবং জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুল হক উভয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

এসময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণ সচিব মো. সেলিম রেজা, জীবন বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান শেলীনা আফরোজা, বায়রা মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, বিএমইটির ডিজি শামসুল আলম, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত রেমিটেন্স থেকে বাংলাদেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়ে থাকে। দেশের জিডিপি’তে তাদের অবদান ৭শতাংশ। এ কারণে তাদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বিমার আওতায় আনার জন্য পাইলটিং প্রজেক্ট হিসাবে ১ বছরের জন্য এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। ১ বছর পর পর্যালোচনা করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতেনিহত   প্রবাসী বাংলাদেশি
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতেনিহত প্রবাসী বাংলাদেশি

অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এই বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটু দেরিতে হলেও আমরা প্রবাসীদের জন্য কিছু করতে পেরেছি। এটাই আমাদের স্বার্থকতা। আমরা প্রথমে পাইলট প্রকল্প দিয়ে শুরু করেছি। আশা করছি প্রবাসীক কর্মীদের কাছ থেকে আরও বেশি সাড়া পাবো। তখন ব্যাপক আকারে করা হবে।

প্রবাসী কর্মী বিমা পরিকল্পসমূহ:
বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জীবন বীমা কর্তৃক বিদেশগামী কর্মীদের জন্য দুটি পরিকল্প রাখা হয়েছে। কর্মী যে কোনো একটি গ্রহণ করতে পারবেন। পরিকল্পের প্রিমিয়ামের পরিমাণ যাই হোক না কেন প্রত্যেক বিদেশগামী কর্মীকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড হতে সর্বোচ্চ ৫‘শত টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করা হবে। অবশিষ্ট প্রিমিয়াম কর্মী নিজে বহন করবে।

পরিকল্প-১ এর আওতায় বিমার দুই লাখ টাকা রাখা হয়েছে। বিমার মেয়াদ হবে ২ বছর এবং বয়স সীমা ১৮ থেকে ৫৮ বছর। এককালীন প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে এককালীন ৯৯০ টাকা। এর মধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে দেয়া হবে ৫০০ টাকা এবং কর্মীকে বহন করতে হবে ৪৯০ টাকা।

দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসী বাংলাদেশি
দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসী বাংলাদেশি

পরিকল্প-২ এর আওতায় বিমার অংক পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে। এক্ষেত্রেও বিমার মেয়াদ ও বয়স সীমা একই অর্থাৎ ০২ বছর এবং ১৮ থেকে ৫৮ বছর রাখা হয়েছে। ৫ লাখ টাকা বিমার ক্ষেত্রে এককালীন প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৭৫ টাকা। তবে এক্ষেত্রে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে এককালীন প্রিমিয়াম বাবদ দেয়া হবে ৫০০ টাকা। অবশিষ্ট অর্থ কর্মীকে বহন করতে হবে।

তবে বিমার মেয়াদ বৃদ্ধির সৃযোগ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীরা স্ব-উদ্যোগে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে পরবর্তী ২ বছর অন্তর অন্তর বিমাপত্রটি নবায়ন করতে পারবেন। বিমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে নবায়ন করা হলে বিমাগ্রাহককে প্রিমিয়ামের উপর ২শতাংশ ছাড় প্রদান করা হবে। বিমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৩০ দিন পর বিমাপত্রটি নবায়ন করা হলে বিমাগ্রাহককে অবিরাম ভাল স্বাস্থ্যের ঘোষণা (DGH) প্রদান করে নবায়ন করতে হবে।

জীবন বীমা কর্পোরেশন এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ হতে এক বছরের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। বিদেশগামী কর্মী বিদেশ গমনের উদ্দেশ্যে বর্হিগমন ছাড়পত্র গ্রহণের তারিখ হতে বিমার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত বিমা দাবি জীবন বীমা করপোরেশন পরিশোধ করবে। কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তালিকার ভিত্তিতে জীবন বীমা করপোরেশন কর্তৃক ইস্যুকৃত বিমা সার্টিফিকেট অনলাইন থেকে কর্মী সহজে নিতে পারবেন।

পুর্তগালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক প্রবাসী বাংলাদেশি
পুর্তগালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক প্রবাসী বাংলাদেশি

বিমা সুবিধাসমূহ:
ক. মৃত্যু ক্ষেত্রে-
বিমার মেয়াদকালে স্বাভাবিক মৃত্যু হলে অথবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে বিমার মেয়াদকালে অথবা বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে বিমা গ্রহীতা ১০০ ভাগ বিমা সুবিধা পাবেন।

খ. সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষমতা/পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে-
উভয় চক্ষুর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট অথবা কব্জির উপর থেকে উভয় হাত কাটা/খোয়া অথবা গোড়ালির উপর থেকে উভয় পা কাটা/খোয়া অথবা কব্জির উপর থেকে এক হাত এবং গোড়ালির উপর থেকে এক পা কাটা/খোয়া অথবা এক চক্ষু এবং কব্জির উপর থেকে এক হাত নষ্ট/কাটা/খোয়া অথবা এক চক্ষু এবং গোড়ালীর উপর থেকে এক পা নষ্ট/কাটা/খোয়া গেলে বিমা গ্রহীতা ১০০ ভাগ বিমা সুবিধা পাবেন।

গ. আংশিক স্থায়ী অক্ষমতা/পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে-
১. এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া অথবা কব্জির উপর হতে এক হাত কাটা বা খোয়া যাওয়া অথবা গোড়ালির উপর থেকে এক পা সম্পূর্ণ কাটা বা খোয়া গেলে বিমা গ্রহীতা ৫০ ভাগ বিমা সুবিধা পাবেন।

২. উরুসন্ধি হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ কাটা বা খোয়া অথবা এক পা কাটা বা খোয়া অথবা নিচের চোয়াল সরে যাওয়া অথবা বৃদ্ধাঙ্গুলিসহ হাতের চার আঙ্গুল সম্পূ‌র্ণরূপে কাটা গেলে ২৫ ভাগ বিমা সুবিধা পাবেন।

৩. হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি সম্পূর্ণরূপে কাটা বা খোয়া অথবা পায়ের সকল আঙ্গুল কাটা বা খোয়া যাওয়া অথবা তর্জনী আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা বা খোয়া যাওয়া অথবা মাঝের আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা বা খোয়া গেলে বিমা গ্রহীতা ১৫ ভাগ বিমা সুবিধা পাবেন।

৪. অনামিকা আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা বা খোয়া অথবা ছোট আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা বা খোয়া অথবা পায়ের বড় আঙ্গুল ছাড়া যে কোন একটি কাটা বা খোয়া অথবা পায়ের বড় আঙ্গুলসহ চার আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা বা খোয়া অথবা পায়ের বড় আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা বা খোয়া গেলে ১০ ভাগ বিমা সুবিধা পাবেন।

তবে আংশিক স্থায়ী অক্ষমতা/পঙ্গুত্ব হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করলে মৃত্যু দাবি (বিমা অংক) থেকে আংশিক স্থায়ী অক্ষমতা/পঙ্গুত্বজনিত প্রদেয় দাবি বাদ দিয়ে অবশিষ্ট বিমা অংক মৃত্যু দাবি হিসেবে প্রদান করা হবে।

অসুস্থ প্রবাসীদের পাশে মানবতাপ্রেমী প্রবাসী মোহাম্মদ হাফিজ
মারিশাসে অসুস্থ প্রবাসী

দাবি পরিশোধ
চুক্তি অনুযায়ী বিমা দাবির অর্থ কে প্রাপ্য বা পাবে তা নির্ধারণ করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বিমা দাবির অর্থ জীবন বীমা করপোরেশন হতে কল্যাণ বোর্ড গ্রহণ করে তা গ্রহীতাকে (প্রবাসী কর্মী) প্রদান করবে।

তবে, বিমার ঝুঁকি গ্রহণের ১২ মাসের মধ্যে আত্মহত্যা অথবা স্বীয় ক্ষতি, AIDS/HIV সর্ম্পকিত রোগে সরাসরি মৃত্যু অথবা অসুস্থতা, উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন খেলা অথবা দু:সাহসিক কার্যকলাপ যেমন- মটর রেসিং, মুষ্টিযুদ্ধ, স্কুবা ডাইভিং, hand gliding, parachuting, horse racing, mountaineering ইত্যাদির কারণে মৃত্যুবরণ, Pre-existing conditions prior to commencement of membership, মদ অথবা মাদকাসক্তি আসক্তির কারণে মৃত্যু, যুদ্ধ অথবা দাঙ্গা অথবা Civil commotion / Acts of terror এর কারণে মৃত্যুবরণ এবং গুরুতর অপরাধে আদালতের রায়ে মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত হলে বিমা গ্রহীতা বিমা সুবিধা পাবে না।

[প্রিয় পাঠক, আকাশযাত্রা প্রবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ কমিউনিটি ও সংগঠনের নানান খবর, ভ্রমণ, আনন্দ-বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। লেখা ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকনায়]

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!