বাহরাইনে বাংলাদেশিদের ভিসা উন্মুক্ত ও আটকেপড়া প্রবাসীদের ফেরা

মেসেঞ্জারে শত শত প্রশ্ন, সবগুলোই প্রায় বাহরাইন কর্তৃক বাংলাদেশের ভিসা খোলা প্রসঙ্গে, বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে যারা দেশে গিয়ে আটকা পড়েছেন তাদের মধ্য থেকে অনেকেই মেসেঞ্জারে এই ব্যাপারটা নিয়ে নতুন কোন আপডেট আছে কিনা জানার চেষ্টা করেছেন। আসলে ব্যস্ততার কারণে বেশির ভাগ মেসেজের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না, তাছাড়া কোনো তথ্যের সত্যতা নিয়ে ক্রস চেক না করা পর্যন্ত উত্তর দেয়া সমীচীন নয় বলে মনে করি। অনেকেই হয়তো মনঃক্ষুণ্ণ হন, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

বেশ কিছুদিন পূর্বে একটি অনলাইন সভায় বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ড. মো. নজরুল ইসলামকে তিনটি ব্যাপারে বিশেষ অনুরোধ করেছিলাম,

১) আটকেপড়া প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের ব্যাপারে।

Travelion – Mobile

২) দেশে যাওয়ার পরে ভিসার মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও ভিসা ক্যানসেল করে দেওয়া হয়, এমনকি যারা ইনভেস্টর ভিসায় আছেন, অনেক অসাধু পার্টনার কিংবা স্পন্সররা বাহরাইনের বাহিরে থাকার কারণে তাদের ভিসা ক্যান্সেল করে দেন, এটি সুরাহার ব্যাপারে।

৩) ফ্যামিলি ভিসা বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন, দেখা যায় স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের রেখে দেশে যাওয়া স্ত্রী নবজাতককে জন্ম দিয়ে বাচ্চাটির ভিসা না হওয়ার কারণে ফেরত আসতে পারছেন না এক্ষেত্রে নিজের ও ভিসা শেষ হয়ে যায় আর নবজাতকের তো কোন ভিসাই হয় না, এদিকে এখানে থাকা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের নিয়ে প্রবাসী বাবা পড়েন বিপদে। এ ব্যাপারটি সুরাহার জন্যে।

মান্যবর রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেদিন কথাগুলোর উত্তরে বলেছিলেন, বাহরাইন-এর ভিসা যেদিন বাংলাদেশের জন্য খুলবে, প্রথম প্রাধান্য থাকবে তাদের জন্যই যারা করোনার কারণে দেশে গিয়ে আটকে পড়ে আছেন। ভিসার মেয়াদ থাকাকালীন কোন প্রবাসীর এবং ইনভেস্টরস ভিসা বাতিল না হয় সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন। ফ্যামিলি ভিসার ব্যাপারে মানবিক কারণে বিশেষ পদক্ষেপ নেবেন।

করোনাকালীন কিছু বিধিনিষেধ এবং নিজের ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন মান্যবর রাষ্ট্রদূতের সাথে সরাসরি আলোচনা করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। রবিবার মান্যবর রাষ্ট্রদূত সাহেবের আমন্ত্রণে মানামায় বাংলাদেশ দূতাবাসে আমি ও সাংবাদিক আব্দুল কাদের মজুমদার অনেক লম্বা সময় ধরে আলোচনা করি।

মান্যবর রাষ্ট্রদূত জানান, যারা আটকা পড়ে আছেন, তাদের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে, তাদের কন্ট্রাক্ট এবং স্পন্সর এর ডিটেলস সব ডাটাবেস সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যাদের নিয়োগকর্তা/স্পন্সররা প্রবাসীকে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী প্রাথমিকভাবে সম্ভবত তাদের কেই প্রাধান্য দিয়ে আটকেপড়া প্রবাসীদের ফিরে আনা শুরু হবে খুব শিগগিরই ইনশাআল্লাহ। এ ব্যাপারে বাহরাইনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। অপেক্ষা বাহরাইন কর্তৃপক্ষের চুড়ান্ত সম্মতির, আশা করি কিছুদিনের ভিতরেই ব্যাপারটি সুরাহা হবে।

ফ্যামিলি ভিসা খোলার ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত জানান এই প্রক্রিয়াটি ও দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার পথে। খুব জলদি আমরা এ ব্যাপারে সুখবরটি শুনতে পারব ইনশাআল্লাহ।

সাধারণের জন্য ভিসা খোলার ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত জানান, বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর (রাষ্ট্রদূত) সাক্ষাতকারের আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে এবং এ ব্যাপারটির সুরাহার সম্ভাবনার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

বিগত দিনে আমার করা কয়েকটি রিপোর্টে প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কিংবা দূতাবাস কর্তৃক আইনি সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ ব্যাপারে মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর এজেন্ডার কথা জানান এবং আশ্বস্ত করেন, যদিও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সরাসরি এ ব্যাপারে সহায়তা দেয়া হয় না, কিন্তু দূতাবাস কর্তৃক আইনি সহায়তার ব্যাপারে অচিরেই তিনি একটি পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান।

আমাদের বৈঠকে এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও মান্যবর রাষ্ট্রদূতের বিভিন্ন কূটনৈতিক পরিকল্পনার কথা উঠে আসে। ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপার ছাড়াও তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফার্মাসিউটিক্যালস, বিজনেস, আইটি সেক্টর, সামরিক সেক্টর ইত্যাদিতে বাংলাদেশকে বাহরাইনের সাথে সংযুক্ত করা।তাছাড়া লক্ষ প্রবাসীর প্রানের দাবী বাংলাদেশ স্কুলের কাজ সম্পন্ন করা।

আসলে করোনাকালীন সময়ে পুরা পৃথিবী ছিল স্থব্দ। তারপরেও সত্যিকারভাবে বাংলাদেশের দূতাবাসের কূটনৈতিক তৎপরতার ছিলনা কোন কমতি। রাষ্ট্রদূতসহ তাঁর পুরো টিমের প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

আশা করি মান্যবর রাষ্ট্রদূতের এই দূরদর্শী কূটনৈতিক তৎপরতা সফলতার মুখ দেখবে এবং বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা এবং প্রিয় স্বদেশ এর সুফল ভোগ করবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, বাহরাইন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!