বাহরাইনে ফেরার সুযোগ পেল আটকেপড়া বাংলাদেশি কর্মীরা
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে এসে আটকেপড়া বাংলাদেশি কর্মীদের বাহরাইনে ফিরে যাওয়ার পথ অবশেষে খুলেছে। দীর্ঘ প্রায় ২ বছর পর নতুন ভিসায় তাদের প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে বাহরাইন সরকার। প্রথম দফায় অনুমতি পেয়েছেন ১৬১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি ।
এ তথ্য দিয়ে ফেসবুক লাইভে বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরুতে একমাসের ভিজিট ভিসা ইস্যু করবে। বাইরাইনের যাওয়ার পর নিয়োগকর্তার মাধ্যমে সেটাকে ওয়ার্ক ভিসায় রূপান্তর করে সেন্ট্রাল পপুলেশন রেজিস্ট্রেশন (সিপিআর) করা যাবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা সংগঠিত কয়েকটি মারাত্মক অপরাধজনিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখে বাহরাইন সরকার। গত ৪ বছর ধরে নানা প্রচেষ্টাও শ্রমবাজার আর খোলা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে করোনা মহামারিতে দেশে এসে আটকে পড়ে অনেক প্রবাসী কর্মী, যার মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বাহরাইনে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আর সুযোগ পায়নি।
করোনা পরিস্থিতিতে কাজ কমে যাওয়ায় কোনো কোনো কোম্পানি অনেক কর্মী ছাঁটাই করে। আবার করোনার সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ থেকে বাহরাইনের ভিসা বন্ধ থাকায়ও অনেকে যেতে পারেননি।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ দূতাবাস নানা দেন দরবারের মাধ্যমে বাহরাইন সরকারের ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়ার পর ফিরতে ইচ্ছুক প্রবাসী কর্মীদের নিবন্ধন কা র্যক্রম শুরু করে । সেসময় ৯৬৭ জন প্রবাসী কর্মী ফেরার জন্য অনলাইনে বাংলাদেশে দূতাবাসে নিবন্ধন করেছিলেন। সেই সংখ্যার মধ্যে থেকেই ১৬১ জন বাহরাইনের ফেরার অনুমতি পেয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত নজরুল বলেন, “তখন বলা হয়েছিল, বাংলাদেশি কর্মীদের মালিকপক্ষ বা নিয়োগকর্তা নিশ্চিত করে যে, তাদের ফেরত নিতে রাজি আছেন। মালিকপক্ষের সাড়া পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধিত ৯৬৭ জনের মধ্যে ১৬১ জনের নাম চূড়ান্ত হয় এবং তাদেরই ফেরার সুযোগ দিয়েছে বাহরাইন সরকার ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বাহরাইন সরকারের ই-ভিসার ওয়েবসাইটে। প্রথমে ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে এবং তা তালিকাভুক্ত কর্মী নিজে করতে পারবেন না। তার পক্ষে স্পন্সর বা মালিককে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর স্পন্সর বা মালিককে বাহরাইন সরকার থেকে পাওয়া ’ই-ভিসা রেফারেন্স’ নম্বর দূতাবাসকে ইমেইলে ([email protected]) অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (+৯৭৩-৩৩৩৭৫১৫৫) জানাতে হবে। এরপর দূতাবাস ওই কর্মীকে ভিজিট ভিসা দিতে বাহরাইন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবে।
অনুমতি পাওয়া ১৬১ কর্মী সরাসরি তাদের মালিকপক্ষ বা স্পন্সর আর দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেই ভিসা নিয়ে ফিরতে পারবেন। এর বাইরে এ বিষয়ে তৃতীয় কোনপক্ষ, মধ্যস্বত্বভোগী সংস্থা বা এজেন্সি কিংবা সংগঠনের কোন এখতিয়ার বা সুযোগ নেই । কাজেই সংশ্লিষ্ট কর্মীদের মালিক ও দূতাবাসের ছাড়া কারও সঙ্গে যোগেযােগ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
দূতাবাসে নিবন্ধন করা আটকেপড়া প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে বড় অংশ তালিকার বাইরে রয়ে গেছে, যার সংখ্যা ৮০৬ জন। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে মালিকপক্ষ বা স্পন্সর সম্মতি দিয়ে দূতাবাসে আবেদন না করায় অনুমতি তালিকায় তাদের নাম আসেনি। কারণ মালিকের সম্মতি ছাড়া আটকে পড়া কোন কর্মীকে ফেরার অনুমতি দেবে না বাহরাইন সরকার রাষ্ট্রদূত।
“ তাদের সুযোগ একেবােরই শেষ হয়ে যায়নি। মালিকের সম্মতি নিতে পারলে বা পেলে আমরা তাদেরকে ফেরানোর বিষয়েও বাহরাইন সরকারকে অনুরোধ করব”, বলেন রাষ্ট্রদূত।
আটকে পড়া ১৬১ জনের বাইরে নতুন করে নিয়মিত ভিসায় কর্মী কিংবা ফ্যামিলি ভিসায় পরিবারের সদস্যদের বাহরাইন আসার কোন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেনি বাহরাইন সরকার।
এর মধ্যে ফ্যামিলি ভিসায় পরিবারের সদস্যদের নিতে আগ্রহী যোগ্যতাসম্পন্ন প্রবাসী বাংলাদেশিদের তাদের সদস্যদের নাম-পরিচয় ও পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে দূতাবাসের ইমেইলে আবেদন করে রাখার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রদূত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে আটকেপড়া কর্মীদের মধ্যে প্রায় এক হাজার মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কাজের সুযোগ পেয়ে পাড়ি দিয়েছেন। বাকি অনেকে দেশেই ব্যবসা বা পেশায় যুক্ত হয়েছেন। ফেরার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন অনুমতি তালিকায় না থাকা ৮০৬ জন ছাড়াও আরও অনেকে, যারা শেষ পর্যন্ত মালিকের অনুমতি পাবেন কিনা সেই দুশ্চিন্তায় আছেন।