বাগেরহাটে নির্মিত হবে নতুন একটি বিমানবন্দর : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দক্ষিণবঙ্গে নৌ ও সড়ক পথের পাশাপাশি আকাশপথেরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বাগেরহাটে নতুন একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। পর্যটন ও বিমান খাতের উন্নয়ন, বড় অঙ্কের রাজস্ব আয়ের উৎস হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের নতুন অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরটি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নবনির্মিত প্রধান কার্যালয় ‘পর্যটন ভবন’, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফটকে জাতির জনকের ম্যুরাল ও এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরে মুজিব কর্নার, ঢাকার গ্রিনরোডে নবনির্মিত ১২ তলা বিশিষ্ট পানি ভবন এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ইউরোপে সুইজারল্যান্ডের যে অবস্থান, ইউরোপের একদিক থেকে আরেকদিকে যেতে হলে সুইজারল্যান্ডের ভেতর দিয়েই যেতে হয়।
“আমাদের বাংলাদেশের অবস্থানটা… আমরা ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুটের ভেতরে আছি। সেখানে আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনাটাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমাদের একদিকে পর্যটন শিল্প, অপরদিকে আমাদের এয়ারলাইন্স আমাদের অনেক টাকা উপার্জন করে দিতে পারে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বিমান খাতের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমে এবার সম্প্রসারিত হচ্ছে দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিলেটের ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট । পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে ৩৫ হাজার বর্গমিটারের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মিত হবে। থাকবে স্বয়ংক্রিয় কার্গো হ্যান্ডলিং সুবিধা, প্রতিবছর সেবা পাবেন ২০ লাখ যাত্রী।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বিমানের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু পরবর্তীতে যারা এসেছেন… একখানা বিমান কিনে কয় টাকা তারা পকেটে ভরবেন,কত কমিশন খাবেন সেটাই ছিল তাদের মাথায়।”
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নাজুক অবস্থার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “১৯৯৬ সালের আগেও আপনারা যারা বিমানে চড়েছেন, একবার চিন্তা করেন, সেখানে কী দুরাবস্থাটা ছিল। বিমানে চড়লে কোনো রকমের এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা ছিল না।
“আমি তো বেশিরভাগই নিজেদের দেশের বিমানে চলাচল করতাম। কিছুদূর যাওয়ার পরে গায়ে পানি পড়ত উপর থেকে, সেখানে তোয়ালে, টিস্যু দিয়ে পানি… এমন একটা অবস্থা ছিল।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এক সময় বলতাম, আমাদের পাইলটদের আমি ধন্যবাদ জানাই যে তারা এই বিমানের চালক ছিল। এই পুরনো ঝরঝরে… সে কারণে তাদেরকে আমাদের সাধুবাদ দিতে হয়।”
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিমানের সেবার মানের উন্নয়ন, নতুন বিমান কেনা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি এবং বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়নে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
সরকার সারা দেশে আকাশপথসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে জনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হবে, দেশের অর্থনীতি তত গতিশীলতা পাবে, উন্নত হবে। মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।”
তিনি বলেন, বিমানের জেট ফুয়েল যাতে লাইপলাইনের মাধ্যমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়, সে ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিমান যেন যেতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে।
“আজকে দেখলাম যে আমেরিকার সাথে একটা চুক্তি হয়েছে, যেখানে আমাদের বিমান যেতে পারবে। আমরা যখন বোয়িং বিমানগুলো কিনি তখন থেকে এটা একটা প্রচেষ্টা ছিল, যে আমরা যেন আমেরিকায় আমাদের বিমান নিতে পারি বা আমরা একটা যোগাযোগ করতে পারি। সেখানে আমাদের অনেক বাঙালি বসবাস করেন।”
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটনের ‘বিশাল সম্ভাবনার’ কথা তুলে ধরে এর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন পানি ভবন মিলনায়তন প্রান্তে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রান্ত থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।