বাগদত্তার সঙ্গে দেখা হলো না মরিয়মের
ইংলিশ চ্যানেলের ফ্রান্স উপকূলে ইংলিশ চ্যানেলে বুধবারের নৌকাডুবির ট্র্যাজেডির প্রথম শিকারের নাম মরিয়ম নুরি মোহামেদ আমিন। ২৪ বছর বয়সী ইরাকের কুর্দি ওই তরুণী জার্মানি ও ফ্রান্সে ভ্রমণ করেন। তিনি ব্রিটেনে অবস্থানরত তার বাগদত্তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন।
গত বুধবার ইংলিশ চ্যানেলে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়। যুক্তরাজ্য যাওয়ার পথে ফ্রান্সের উত্তরের উপকূলবর্তী শহর ক্যালের অদূরে বাতাসভরা রবারের নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকায় ১৭ জন পুরুষ, সাতজন নারী, দুই কিশোর এবং একটি মেয়ে শিশু ছিল। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মরিয়ম নুরিসহ পাঁচ নারী ও মেয়েশিশুটি রয়েছে। বেঁচে যাওয়া দুজন সোমালিয়া ও ইরাকের নাগরিক।
পরিবারের কাছে বারান নামে পরিচিত শিক্ষার্থী মরিয়মের সম্প্রতি বাগদান সম্পন্ন করেন। তিনি বাগদত্তার সঙ্গে থাকার বাসনায় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর চাচাতো ভাই ক্রমানজ ইজ্জাত স্কাই নিউজকে বলেন, তার মা-বাবা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছেন। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এটি একটি সম্পূর্ণ ট্র্যাজেডি এবং পুরো পরিবার হতবাক।
যাত্রার কথা ভাবছেন এমন তরুণ কুর্দিদের কাছে ক্রমানজ ইজ্জাত একটি বার্তা পাঠান। লেখেন, আমি বুঝতে পারছি কেন এত মানুষ একটি উন্নত জীবনের জন্য চলে যাচ্ছে। কিন্তু এটি সঠিক পথ নয়। এটি মৃত্যুর পথ। অনুগ্রহ করে এ পথটি বেছে নেবেন না। এটির মূল্য নেই।
ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকারের প্রতি তার আহ্বান, আমরা আশা করি ব্রিটেন ও ফ্রান্স আমাদের আরো ভালোভাবে গ্রহণ করবে। যে কেউ তাদের বাড়ি ছেড়ে ইউরোপে যেতে চায়, তাদের নিজস্ব কারণ এবং আশা রয়েছে। তাই দয়া করে তাদের আরো ভালো উপায়ে সাহায্য করুন এবং তাদের মৃত্যুর এই পথটি বেছে নিতে বাধ্য করবেন না।
স্কাই নিউজ হাতে এমন একটি ‘মেডে কল’ এসেছে যাতে দেখা যাচ্ছে ফরাসি কোস্টগার্ড পানিতে এক ডজনেরও বেশি মৃতদেহ স্থির অবস্থায় দেখতে পাওয়ার পরে ‘সব জাহাজ’কে সাহায্যের অনুরোধ করছে।
কুর্দি সরকার গতকাল স্কাই নিউজকে বলেছে, কুর্দিরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ছিল এবং অভিবাসীদের ইরাক ছেড়ে যাওয়া বন্ধ করতে সাহায্যের জন্য ইউকে এবং ইইউর কাছে আবেদন করেছে।
বুধবারের ঘটনাটি সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা লোকেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। কিভাবে ক্রসিংগুলো বন্ধ করা যায় তা নিয়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কূটনৈতিক বিবাদ শুরু হয়েছে।
বরিস জনসন ফরাসিদের ব্রিটেনে আগত অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে বলার পর সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠক বাতিল করেছে ফ্রান্স। রবিবারের ইউরোপীয় বৈঠকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রসচিব প্রীতি প্যাটেলকে ‘তাকে আর স্বাগত জানানো হয়নি’ বলেও জানিয়েছেন।
সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর সংখ্যা ২০২০ সালে আট হাজার ৪১৭ থেকে এই বছর এ পর্যন্ত ২৫ হাজার-এর বেশি হয়েছে। বরিস জনসন স্থানীয় টহলের পাশাপাশি ক্রসিং বন্ধ করতে ব্রিটিশ কর্মীদের উত্তর ফ্রান্সে পাঠানোর প্রস্তাব দেন।
সূত্র : স্কাই নিউজ