বাংলাদেশ বিমানে দেড় লাখ টাকায় কেবিন ক্রুর চাকরি!

প্রতারণার শিকার এক তরুণী, আটক দুই প্রতারক

দেড় লাখ টাকায় কেবিন ক্রুর চাকরি। তাও আবার রাষ্ট্রয়াত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হন আকাশ উড়ার স্বপ্নে বিভাের হবিগঞ্জের তরুণী রেশমিনা।

পরীক্ষা দিতে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে! দেন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও। কিন্তু নিয়োগপত্র নিতে এসে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন তাতে কেবিন ক্রুর হবার স্বপ্নাটাই উড়ে গেল আকাশে রেশমিনার।

নিয়োগকর্তা হিসেবে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নয়, তিনি পান পুুরদস্ত ‘দুই প্রতারক’কে। জানতে পারেন কেবিন ক্রুর নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়ায় ছিল ঐ দুই প্রতারকের জালিয়াতি। একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতার ফাঁস হয় সেই জালিয়াতি। ধরা পড়ে ভুয়া চাকরিদাতা দুই প্রতারক।

Travelion – Mobile

ফেইসবুকে কেবিন ক্রুর বিজ্ঞাপন দেখে সাথে যোগোযোগ করলে তারা দ্রুত সাড়া দেয়। চ্যাটে নানা আলাপচারিতার একপর্য়ায়ে তারা চাকরির নিশ্চয়তার জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। বাবার সাথে আলাপ করে টাকার দেয়ার সম্মতি দেয় রেশমিনা বেগম (২৩)।

৪ দিন আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় রেশমিনাকে। হবিগঞ্জ থেকে বাবাসহ এসে বিমানবন্দরের এয়ার ফেইট ক্যান্টিনে বসে পরীক্ষা দেন রেশমিনা। পরীক্ষা নেন এই দুই প্রতারক। একমাত্র প্রার্থী ছিলেন রেশমিনা।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চূড়ান্তভাবে নিয়োগপত্র নিতে আসেন রেশমিনা। সঙ্গে ছিলেন তার বাবা, সাথে টাকা । সেই কার্গো রেস্টুরেন্টই যথারীতি দেখা হয় চাকরিদাতা আর চাকরিপ্রার্থী দুপক্ষের। দর কষাকষি শুরু করেন রেশমিনার বাবা। তিনি দেড় লাখের জায়াগায় ৬০ হাজার টাকার দিতে রাজি হন। প্রতারকরা সম্মতি হয়।

লেনদেনের ঠিক আগমুহূর্তে সেখানে হাজির হয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) চট্টগ্রাম মেট্রো শাখার বিমানবন্দর টিম। তাদের হাতে ধরা পড়ে ভুয়া চাকরিদাতা দুই প্রতারক। একজন নোয়াখালীর চরজব্বারের মো. জাকির সোহাগ (২৯) এবং অন্যজন বাগেরহাটের দীঘির পাড়ের রুবেল হাওলাদারও (২৭)।

প্রতারক মো. জাকির সোহাগ ও রুবেল হাওলাদারসহ আটককারী  বাহিনীর সদস্যরা
প্রতারক মো. জাকির সোহাগ ও রুবেল হাওলাদারসহ আটককারী বাহিনীর সদস্যরা

গোয়েন্দা সংস্থাটির কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দর কেন্দ্রিক এ ধরনের নানা প্রতারনার কথা দীর্ঘদিন শোনা যাচ্ছিল। সে হিসেবে তারা বিষয়টির উপর কড়া নজর রাখে। গোপন সূত্রে ৪ দিন আগের পরীক্ষা নেয়ার খবরটি তাদের কাছে আসে। সে হিসেবে তারা প্রস্তুত ছিলেন এই প্রতারকদের আটক করতে।

সাধারণত বাংলাদেশ বিমানসহ দেশীয় বিমানসংস্থাগুলোর কেবিন ক্রুর নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকাতেই সদর দপ্তরে হয়ে থাকে। তাছাড়া এ মুহুর্তে তেমন কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে বলে খবর পাওয়া নি। এতেই সন্দেহ হয় তাদের, জানালেন এনএসআই কর্মকর্তা।

আটকের পর দুই প্রতারককে পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উৎপর বড়ুয়া আকাশযাত্রাকে জানান, রেশমিনার বাবা কুতুব উল্লাহর দায়ের করা মামলায় দু্ই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে এদের পেছনে শক্তিশালী বড় চক্র জড়িত আছে। কারণ বিমানবন্দরের মতাে স্পর্শকাতার ও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার এলাকায় কেবিন ক্রু পরীক্ষা নেয়া, নিয়োগপত্র প্রদানের মতো প্রতারণার জাল বিছানোর সাহস, বুদ্ধি কোন সাধারণ প্রতারকের না থাকারই কথা। এ জন্য দুই আসামিকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলে ওসি জানান।

বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার-ই-জামান আকাশযাত্রাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এয়ার ফ্রেইট রেস্টুরেন্টসহ বিমানবন্দরের বাইরের এলাকায় নান ধরনের প্রতারণার খবর আমাদের কাছে আসছে। এর প্রেক্ষিতে বিমানবন্দরে নিয়োজিত নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়। যার ফলশ্রুতিতে একটা প্রতারণার ঘটনা ঠেকানো গেছে। প্রতারকরাও ধরা পড়েছে।

এর পেছনে বড় কোন চক্র জড়িত আছে কিনা, বিমানবন্দরের দায়িত্বরত এবং ব্যবকারীর সংস্থাগুলোর কেউ জড়িত আছে কিনা সে ব্যাপারে আভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হবে বলে জানান বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!