বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী গিনি বিসাউ

পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি বিসাউর প্রথম অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসাবে দেশটির রাষ্ট্রপতি উমরাও মোকতার সিসোকো এমবালো’র কাছে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দেমটির রাজধানী বিসাউতে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পরিচয়পত্র পেশ করেন। রাষ্ট্রদূত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে রাষ্ট্রপতি ভরন “প্যালেস অব দ্যা রিপাবলিক”-এ পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রদূতের সালাম গ্রহণের সময় বাংলাদেশ ও গিনি বিসাউ-এর জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।

পরিচয়পত্র পেশের আনুষ্ঠানিক শেষে সৌজন্য বৈঠকে গিনি বিসাউয়ের রাষ্ট্র প্রধানের বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন রাষ্ট্রদূত। গিনি বিসাউয়ের রাষ্ট্রপতিও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও শান্তি কামনা করনে এবং রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান।

Travelion – Mobile

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান জানান, প্রথম বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত হিসাবে গিনি বিসাউয়ের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত। তিনি বাংলাদেশ এবং গিনি বিসাউ এর ঐতিহাসিক সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, উভয় দেশই মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং একই সাথে সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেছে।

অতীতে দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক না থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র পেশের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বলেও রাষ্ট্রদূত আশা ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও বাংলাদেশে গিনি বিসাউ-এর অনাবাসিক রাষ্ট্রদূতপাঠানো হলে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন। সেই সাথে দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ থেকে গিনি বিসাউ সুলভমূল্যে উন্নতমানের পণ্য, তৈরি পোশাক, ঔষধ সামগ্রী, সিরামিক, ইলেক্ট্রনিকস, সফটওয়্যার, বাইসাইকেল/মোটরসাইকেল এমনকি জাহাজ আমদানি করতে পারে।

তৃণমূল পর্যায়ে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন যে,“সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন”-এর আলোকে বাংলাদেশ এবং গিনি বিসাউ গ্রামীন উন্নয়ন এবং কৃষিখাতে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে একসাথে কাজ করতে পারে।

এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন এর মতো বৈশ্বিক ইস্যুতে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোতে দু’দেশের একযোগে কাজ করার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে সম্মানজনক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ এবং ও আই সি এর মতো বহুপাক্ষিক সংস্থায় গিনি বিসাউ এর অব্যাহত সমর্থন প্রত্যাশা করেন।

গিনি বিসাউ-এর রাষ্ট্রপতি তাঁর দেশে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র পেশের জন্য অভিনন্দন জানান। সামনের দিনগুলোতে দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরালো হবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রপতি উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ প্রসারিতকরণ বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সক্ষমতা উন্নয়নে একযোগে কাজ করার বিষয়ে আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এক্ষেত্রে দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যমী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।

এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে গিনিবিসাউ এর অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করার বিষয়ে সদিচ্ছা পোষন করেন। তিনি রাষ্ট্রদূতকে তাঁর কর্মকালে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউ অতীতে একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল; তখন এর নাম ছিল পর্তুগিজ গিনি। ১৯৭৪ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশটি পর্তুগাল থেকে স্বাধীন হয়। স্বাধীনতা লাভের পর প্রতিবেশী গিনির নামের সাথে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর জন্য এর নামের সাথে রাজধানী ও বৃহত্তম শহর বিসাউ-এর নাম যোগ করা হয়। ৩৬,১২৫ বর্গকিমি আয়তনের দেশটির জনসংখ্যা ১৫ লাখের বেশি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!